||আমিরুল মুমিনীন ফিল হাদিস : ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ- ||
ইসলামের মূল স্তম্ভ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার প্রেরিত কিতাব মহা গ্রন্থ আল কুরআন। ইসলামি জ্ঞানের দ্বিতীয় স্তম্ভ আল-হাদিস। আলকুরআনের পরেই যেই গ্রন্থটির অবস্থান,তা হলো সহীহ্ আল বুখারী। এই মহাগ্রন্থের রচয়িতা ইমাম বুখারী নামে পরিচিত।
সেদিন ছিলো শুক্রবার। ১৯৪
হিজরীর শাওয়াল মাসের ১৩ তারিখ । ৮১০ খ্রিস্টাব্দের ২১জুলাই জুমা'আ বারে একসময়ের সমৃদ্ধি ও
প্রাচুর্যের নগরী উজবেকিস্তানের বুখারা শহরে তিনি পৃথিবীর বুকে আগমন করেন। বুখারা
শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন বলেই বুখারী নামে সারাবিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে আছেন। কিন্তু
তাঁর আসোল নাম হলো ;
মুহাম্মদ। উপনাম আবু আব্দুল্লাহ। আরব রীতি
অনুযায়ী পুরো নাম হলো আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন
মুগীরা বিন বারদিযবাহ আলজু’ফী।
তাঁর পূর্ব পুরুষেরা
পারস্যের অধিবাসী। ওনার প্রপিতামহ মুগীরা পারস্য হতেই বুখারা শহরে এসে বসবাস করেন।
এবং এখানকার শাসনকর্তার হাতেই তিনি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ওনার বাবাও ছিলেন একজন
নামকরা মুহাদ্দিস। তাঁকে বাল্যকালেই হারাতে হয় স্বীয় পিতার
স্নেহ-শাসন ও ভালোবাসা। তাঁর মা ছিলেন একজন পরহিজগার মুহসিনা নারী। মায়ের কাছেই
লালিত পালিত হন তিনি। পিতার রেখে যাওয়া সম্পদ দিয়েই তাঁদের দুই ভাইকে মা পরিচালনা
করেন ,পড়াশোনা করান। তাঁর মা তাঁকে
স্থানীয় বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য ভর্তি করান। সেই স্থানীয় বিদ্যালয়
থেকেই শেষ করেন প্রাথমিক শিক্ষা। এই মহা মনীষী খুবই ছোটো বয়সে (কারো কারো মতে ছয়
বছর বয়সেই) মহাগ্রন্থ আলকুরআন হিফয সমাপ্ত করেন। আর হাদিস শাস্ত্রে তো তাঁর অবদান
এতো এতো বেশি যে, ওনাকে হাদিস শাস্ত্রে বিশ্ব সম্রাট-ই বলা
হয়ে থাকে।
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের
জীবনের প্রতিটা পরতে পরতে তো তাঁর পরীক্ষা লেগেই থাকে। পিতা হারানোর পরে হঠাৎ
অসুস্থ হয়ে স্বীয় চক্ষুর দৃষ্টি শক্তিও হারিয়ে ফেলেন। বাল্যকালেই তিনি হয়ে যান
অন্ধ ! অনেক চিকিৎসা করে ও তাঁর দৃষ্টিশক্তি কিছুতেই ফিরে এলো না।
একজন দিব্য সুস্থ সন্তান
হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলে মায়েদের কী অবস্থা হয় তা তো সহজেই অনুমেয়। তাঁর এই
দৃষ্টি শক্তি হারানোয় শুরু হয়ে যায় মায়ের রোদন ধ্বনি। করতে থাকেন দয়াময় মহামহিম
আল্লাহর সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার কাছে দু'আ। মায়ের দু’আ বৃথা যায় না। মহীয়সী সেই নারী তথা ইমাম
বুখারী রাহিমাহুল্লাহ'র মায়ের সে
আকুল আবেদনও বৃথা যায় নি। আল্লাহর কাছে তিনি দুআ করেই গেছেন । কাতর কন্ঠে। অনবরত।
ঘুমিয়ে পড়লেন একদিন তিনি। ঘুমের মাঝে স্বপ্ন
দেখলেন। স্বপ্নে এলো সুসংবাদ। স্বপ্নযোগে সেই সুংসাবাদ সাধারণ কোনো মানুষের কাছ
থেকে পাননি। স্বপ্ন দেখলেন মুসলিম মিল্লাতের পিতা সাইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে।
জাতির পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ওনাকে বললেন — "ওহে নারি! তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত চেয়ে আল্লাহর দরবারে
তোমার ধর্ণা দিয়ে, দুআ করে
অবিরাম ক্রন্দনের কারণে তিনি তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। সুস্থ হয়েছে সে।
এমন একটা সুসংবাদে পেলে কে-না উৎফুল্ল হবে ! তিনি স্বীয় পুত্রের (ইমাম
বুখারীর) কাছে গিয়ে হাজির হন। প্রকৃত ঘটনা যাচাই করতে গিয়ে দেখেন সত্যি সত্যি তাঁর
কলিজার টুকরো সন্তান আল্লাহর একান্ত করুণায় ফিরে পেয়েছেন দৃষ্টি শক্তি ! আলহামদুলিল্লাহ
! এরপর তাঁর দৃষ্টি শক্তির তীব্রতা বেড়েছে আগের চেয়ে আরো বহুগুণে ! এতো বেশি
পরিমাণে বেড়েছে যে, তিনি চাঁদের
আলোয় লেখাপড়ার কাজ অনায়াসেই পরিচালনা করতে পারতেন। আত-তারিখুল কাবির গ্রন্থটা তিনি
চাঁদের আলোয় লিখেছেন। (এতে তিনি হাদীসের রাবীদের তথা বর্ণনাকারীদের জীবনী সম্পর্কে
আলোচনা করেছেন)।
ছোটো বেলাতেই হাদিসের প্রতি
তাঁর অনুরাগ সৃষ্টি হয়। সেই সময় থেকেই তিনি হাদিস স্মৃতিতে সংরক্ষণ করেন। তাঁর যখন
এগারো বছর বয়স, তখন তৎকালীন
বুখারা নগরীর একজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ছিলেন। ইমাম দাখিলী তাঁর নাম। দূর-দুরান্ত
থেকে তাঁর কাছে হাদিসের জ্ঞান আহরণের জন্য ছাত্রদের ভীড় জমতো। জমায়েত হওয়া সেইসব
ছাত্রদেরকে তিনি হাদিসের শিক্ষা দিতেন। ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ক্লাসে
একদিন হাজির হয়েছেন। হাদিসের ক্লাসে ইমাম দাখেলি ছোট্টো একটা ভুল করে ফেলেন। সেই
ভুল দেখে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) নিজে ছোটো বলে হীনমন্যতায় ভোগেননি। চুপ করে
বসে থাকেন নি। বিনম্রতার সাথেই ভুলটা ধরিয়ে দিলেন। প্রথম দিকে ইমাম দাখেলী একটু
কড়া আচরণ করলেও ইমাম বুখারী নমনীয় আচরণ মিশিয়ে যখন বললেন 'উস্তায'
আপনি দয়া করে আপানার পাণ্ডুলিপিটা যদি দেখতেন....!! ইমাম দাখেলী তখন
পাণ্ডুলিপি দেখে তাঁর ভুল স্বীকার করেন এবং বলেনব; তোমার
কথায়ই ঠিক। এবং প্রাণ ভরে দু'আ করেন ছোট্টো সেই বালক বুখারীর
জন্যে!
ষোলো বছর বয়স অবধি তিনি নিজ
জন্মভূমিতেই সকল বড়ো বড়ো হাদিস শাস্ত্রের পণ্ডিতদের নিকট শিক্ষা অর্জন করেন। সে
বয়সেই তিনি ৭০ হাজারেরও অধিক হাদিস স্মৃতিতে ধারণ করতেন। শুধু হাদিসের মতন ( মূল
কথা) নয়, সনদসহ
মুখস্থ ছিলো। তৎকালীন সময়ের আরেকজন বিখ্যাত মুহাদ্দিস - ইমাম সলিম ইবনে মুজাহিদ
ওনাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে, তুমি নাকি সত্তর হাজার হাদিস
মুখস্থ পারো ? তিনি বলেন — মারফু হোক মাওকুফ হোক , উহাদের অধিকাংশ রাবীর আবাসভূমি , জন্ম-মৃত্যু সন
অন্যান্য সকল বিষয় বলে দিতে সক্ষম আমি !
হাদিস শাস্ত্রে তাঁর
পারদর্শিতা এতো বেশি পরিমাণ ছিলো যে, তিনি যখন হাদিস সংগ্রহের জন্য বিদেশে রওয়ানা দিচ্ছেন , তখন ওনাকে তৎকালীন সময়ের
আরো একজন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস — মুহাম্মদ ইবনে সালাম বয়কন্দী তাঁর গ্রন্থের ত্রুটিগুলো
ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। এবং তিনি এক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে তাঁর সম্পর্কে (
ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ) মন্তব্য করেন — এই
তরুণ এমন এক ব্যক্তি, যার সমকক্ষ
কেউ নেই !
তাঁকে নিয়ে এই মন্তব্য যখন
করা হয় , তখন তাঁর
বয়স ষোলো বছর। এরও বহু পর, মানে যখন
ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ বয়সের পূর্ণতায় পৌঁছেছেন তখনও এমন মন্তব্য করেছেন
তৎকালীন সময়ের বিদগ্ধ ইমামগণ।
ওনার সম্পর্কে ইমাম ইবনে
খুজাইমা (রাহিমাহুল্লাহ)ও বলেন — পৃথিবীতে ইমাম বুখারী অপেক্ষা অধিক অভিজ্ঞ এবং
হাদীসের হাফেয আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল
(রাহিমাহুল্লাহ) ও তাঁর সম্পর্কে বলেন — খোরাসানের
জমিনে ইমাম বুখারীর অনুরূপ আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি।
এই মহাপুরুষের স্মৃতি শক্তি
কতোটা প্রখর , জ্ঞানের গভীরতা কতোটা বেশি তাঁ— তার আরো একটা নমুনা হলো এই যে, তিনি যখন বসরার মুহাদ্দিসদের নিকট হাদীসের ক্লাস করতেন, তখন ছাত্রগণ খাতা-কলম নিয়ে বসে উস্তাযের নিকট থেকে হাদীস মনোযোগ দিয়ে
শুনতেন এবং হাদীসগুলো খাতায় লেখে রাখতেন। ব্যতিক্রম ইমাম বুখারী! এই কাজটা তিনি
করতেন না। কিছুদিন যেতে লাগলো এভাবেই....। হুট করেই একদিন তাঁর সহপাঠীগণ জিজ্ঞেস করলো যে,
তুমি শুধু আমাদের সাথে বসে থাকো ক্যান ? এভাবে
সময় নষ্ট করে কোনো লাভ আছে কি ? চুপচাপ থাকলেন তিনি
কিছুদিন। তাঁদের পিড়াপিড়িতে পড়ে একদিন তিনি প্রচুর বিরক্ত হয়ে বললেন — তোমরা আমার নিকট বারবার একই প্রশ্ন করছো। তোমাদের
হাদিস লিপিবদ্ধকৃত খাতা নিয়ে এসো। এতোদিন ধরে তোমরা যতো কিছু লিখেছো তা আমি তোমাদেরকে
শুনিয়ে দিই। তাঁরাও খাতা নিয়ে আসলো, ইমাম বুখারী (রঃ)-ও সত্যি হুবহু সবগুলো হদিস তাঁদের শুনিয়ে দিলেন। আরও অতিরিক্ত পনে্রো হাজার হাদিস
শুনিয়ে দিলেন। কোথাও বিন্দু পরিমাণ কোনো ভুল করলেন না। বরং তাঁদের লেখার মাঝেই
কিছু ভুলচুক হয়েছিলো। বিস্ময়ে তখন তারা বিমূঢ় হয়ে গিয়েছে। তাদের লেখার মাঝে যেই
ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ছিলো সেই বিচ্যুতিগুলোও তাঁরা তখন শুধরে নিলো। এরপর তিনি তাঁর সেই সকল
সহপাঠীদের লক্ষ্য করে বললেন –এরপরও কি তোমরা আমি এখানে অযথা সময় নষ্ট করছি বলবে? সেদিন থেকেই হাদিস শাস্ত্রে
তারা ইমাম বুখারীকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করলেন।
মাত্র ষোলো বছর বয়সে তিনি
তাঁর মা এবং বড়ো ভাইয়ের সাথে হাজ্জে বাইতুল্লাহ'র উদ্দেশ্যে মক্কাতুল মুকাররামায় গমন করেন। হাজ্জ ক্রিয়া
সম্পাদনা শেষ করে তাঁর মা এবং ভাই দেশে ফেরত এলেও তিনি আসেননি। রয়ে গেলেন তিনি
মক্কায়.... । মক্কার প্রসিদ্ধ সব শিক্ষকদের থেকে তিনি সোহবত লাভ করেন। সকলের কাছ
থেকেই কমবেশি হাদিসের জ্ঞান আহরণ করে নিজের জ্ঞানের যে তীব্র তৃষ্ণা, সেই তৃষ্ণা নিবারণ করেন।
দুই বছর পরে তিনি মক্কা নগরী
থেকে মাদিনাতুল মুনাওয়ারায় গমন করেন। সেখানেও তিনি হাদিসের শিক্ষাদানে যাঁরা ব্রতী
ছিলেন, তাঁদের থেকে ইলমুল হাদিসের
শিক্ষা গ্রহণ করেন। মাদিনার এই যে সফরটা, এই সফরেই তিনি ''
তারিখুল কাবির'' নামক গ্রন্থখানা
প্রণয়ন করেন। আর তা করেন চাঁদের আলোতেই।
তাঁর সফর যে শুধু
মক্কা-মদিনার সীমানায় সীমিত ছিলো তা নয়। দ্বীনের মারকায মক্কা-মদীনায় হলেও প্রিয়
নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবগুলো হাদীস,সবগুলো বাণী এই দুই জায়গায় পাওয়া ছিলো অসম্ভব। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আ'লাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা) ছিলেন দ্বীনের জন্য নিবেদিত প্রাণ। ধ্যানে-জ্ঞানে, স্বপ্ন-সাধনায় ছিলো শুধু দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও বিজয়! তাই তাঁরাও যাঁর
যে দিকে সুযোগ হয়েছে সে সেদিকেই চলে গিয়েছেন দ্বীনের বার্তা নিয়ে। ইসলামের পয়গাম
নিয়ে। আল্লাহ-রাসুলের অমীয় বাণীর ভাণ্ডার নিয়ে। ছড়িয়ে গিয়েছেন তাঁরা চতুর্দিকে।
তাই ওনার ( ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ) সফর শুধু
মক্কা-মদিনাতেই সীমাবদ্ধ না রেখে তিনি সফর শুরু করলেন দেশে দেশে। জনপদে জনপদে।
যেখানেই সন্ধান পেয়েছেন হাদিসের, সেখানেই ছুটে গিয়েছেন। যেই জনপদেই ছিলো হা্দিসের
উস্তাদ— সেই জনপদেই গিয়েছেন, শিখেছেন হাদীস। করেছেন হাদিসের
জ্ঞানকে সমৃদ্ধ।
খোরাসানের বিভিন্ন অঞ্চল তো
তিনি ভ্রমণ-পরিভ্রমণ করেছেনই। এর বাহিরে যে সমস্ত দেশ-অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন তার
মধ্যে মক্কা-মদীনা ছাড়াও রয়েছে ইরাক, হিজাজ, সিরিয়া, মিশর, কূফা,বগদাদ এবং আরও বহুসংখ্যক শহর-নগর। এই যে এতো দেশে এতো শহরে
তাঁর সফর, এই সফরগুলো
তিনি এক সাথে একবারে করেন নি। এর পেছনে জীবনের অনেক বড়ো অংশই ব্যয় করেছেন তিনি।
এমনিতেই মুহাদ্দিসগণ হাদিস
সংগ্রহের জন্য কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে, আর ইমাম বুখারী( রাহিমাহুল্লাহ) তো কতোটা কঠোর নিয়ম-পদ্ধতি ফলো করতেন তা
তো সকলেরই কমবেশি জানা আছে। সেই কঠিন নিয়ম-নীতির জন্য তিনি কতোটা বেশি দুঃসহ সাধনা
করতে হয়েছে, কতো হার্ড পরিশ্রম করতে হয়েছে, কতোটা প্রতিকূলতা দু’পায়ে মাড়িয়ে যেতে হয়েছে, কতো বিপুল বিপদ অতিক্রম করতে
হয়েছে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সে সময়ের সফরে না ছিলো
উপযুক্ত জানবাহন, না ছিলো
সহজলভ্য কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা ! ছিলো না আজকের মতো হোটেল রেস্তোরাঁর কোনো
জাঁকজমকপূর্ণ বন্দোবস্তও ! জাঁকজমকপূর্ণ তো দূরের কথা , নরমালও
তো ছিলো না। যার কারণে তিনি কখনো উপবাসে দিনাতিপাত করেছেন। কখনো আহারের অভাবে
লতাপাতা খেয়ে জীবনধারণ করেছেন ,সফরের সময়গুলোতে। বহু বছর রুটির সঙ্গে কোনো তরকারি
খাননি। কখনো কখনো দু-তিনটে বাদাম দিয়ে ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করেছেন। সাওয়ারীর
অভাবে পা দুটো ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সব কষ্ট তিনি হাসিমুখে সয়ে নিয়েছেন , নিয়েছেন বরণ
করে। করে নিয়েছেন সকল যাতনাকে আপন। তবুও উদ্দেশ্য থেকে একরত্তিও সরে আসেন নি।
এতোসব বিপদ-মুসিবতেও ভেঙে পড়েন নি। তাঁর যে হিমাদ্রীসম অটল-অনড় ও অবিচল মনোবল আর
সাহ স—সে সাহস-উদ্যোম আর অনড় মনোভাবে কখনো বাটা পড়েনি
! ছিড় ধরেনি।
আজকের যুগে আমরা তো ইলম
অর্জন করি। এরপর ভাবি —এই তো, আমার জীবীকা উপার্জনের একটা হিল্লে হলো। কিন্তু তিনি কি তা করেছেন?
কোনো ইমাম-ই তা করেন নি! উল্টো নিজের সমুদয় সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে
দিয়ে রিক্তহস্তে ফিরে আসতেন আপন নীড়ে। করতেন অন্যান্য সাধক ও ছাত্রদেরও
পৃষ্ঠপোষকতা। জ্ঞানীদের পৃষ্ঠাপোষকতা ছাড়া তো জ্ঞান বিকাশের যে ধারা, তা অতোটা ছড়ায় না।
ইমাম বুখারী'র (রাহিমাহুল্লাহ) এক খন্ড জমিন
ছিলো। এই জমি থেকে তিনি প্রতি বছর সাত লক্ষ দিরহাম ভাড়া পেতেন। এই বিশাল অর্থ
থেকে তিনি খুব সামান্যই নিজের ব্যক্তিগত কাজে খরচ করতেন। বিশাল এই যে অর্থ,
এর সম্পূর্ণটাই তিনি ইলম অর্জনে এবং অভাবীদের অভাব বিদূরিত করার জন্যে
ব্যয় করতেন। তাঁর সঙ্গে সব সময় দিনার ও দিরহামের থলে থাকতো। হাদিসের ছাত্র,
হাদিসের শিক্ষকদের মধ্যে যারা অভাবী ছিলেন তাদেরকেও তিনি দান করতেন
দু'হাত ভরে।
এতো এতো সফর, হাদিস চর্চায় ও সংগ্রহে তাঁর
অপরসীম ব্যস্ততায়ও আল্লাহর স্মরণে-ইবাদাতে একদমই পিছিয়ে ছিলেন না তিনি। যতোটুকুন
জানা যায়, তিনি প্রতি বছর রমাদ্বান মাসের প্রতিদিনের যে
তারাবীহ, সেই তারাবীহ'র নামাযের পর
প্রতি তিন রাত্রিতে একবার কুরআনুল কারিম খতম করতেন। প্রতিদিন শেষ রাতে স্বলাতুত
তাহাজ্জুদ আদায় করতেন।
এই যে ইবাদাত, এটা করতেন নিরবে-নিভৃতে। তাঁর সাথে
থাকতেন মুহাম্মদ বিন আবু হাতিম আল ওয়াররাক। একসাথে থাকার পরেও তিনি টের পেতেন না।
একদিন তিনি জিজ্ঞেস করলেন যে, আপনি আমাকে ঘুম থেকে কখনোই
জাগিয়ে তোলেন না ক্যান? (ইমাম বুখারী) জবাব দিলেন —তুমি যুবক মানুষ। তোমার ঘুমের প্রয়োজন, তাতে ব্যাঘাত ঘটাতে চাই না আমি!
একটুখানি ভেবে দেখুন, অন্যের বিষয় নিয়ে, মানে বান্দার হক্ক নিয়ে কতোটা বেশি সচেতনতা আর ইবাদাতের মাঝেও কতোটা বেশি
খুশু-খুজু তাঁর। আমরা তো নিজেকে মুখলিস, মুহসিন আর মুত্তাকী প্রমাণ করার জন্যে হলেও একটু-আধটু ঝেড়েকেশে আশপাশকে
জানান দেয়ার চেষ্টা করি !
তিনি যে পুরোপুরি শুধু হাদিস
শাস্ত্র নিয়েই ছিলেন, ভিন্ন কিছুর
খবর ছিলো না এমনটাও নয়। সাহিত্যেও ছিলো ওনার পদচারণা। আল্লামা তাজুদ্দীন সুবকী
তাবাকাতে কুবরা নামক গ্রন্থে তাঁর কিছু কবিতাও উল্লেখ করেছেন। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ
হাকিমও তাঁর রচিত কিছু কবিতা তুলে এনেছেন ।
তিনি সবসময় চেষ্টা করেছেন
সকল প্রকার কলঙ্কের কালো দাগ হতে নিজেকে বিমুক্ত রাখার । সন্দেহের শামীয়ানায়
নিজেকে কখনোই যুক্ত করতে বা শামিল হতে দেন নি। নিজের বিশ্বস্ততা অটুট রাখবার
প্রয়োজনে সীমাহীন ত্যাগ করতেও ছিলেন প্রস্তুত। আর তার জন্য অর্থ সম্পদকেও পদতলে
পিষ্ট করতে কিংবা উত্তাল-গভীর সমুদ্রের গহীন বক্ষেও ছুঁড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা-সংকোচ
করতেন না!
পূর্বেই তো বলা হয়েছে যে, ইমাম সাহেব নানান দেশে নানা
জনপদে সফরে বের হয়। তেমনিভাবে একদিন তিনি সফরে বের হলেন। এক দুষ্ট ও ধূর্ত লোক এসে
বসলেন তাঁর পাশে। জমালেন খাতির। ইমাম সাহেব তো সরল মানুষ। বিশ্বাসীরা সরল হয়। সহজ
হয়। লেকটা গল্প পাকাতে লাগলেন তাঁর সাথে। তিনিও তাকে বিশ্বাস করলেন। গল্প করতে
থাকলেন তার সাথে....
ইমাম বুখারী'র (রাহিমাহুল্লাহ) কাছে ছিলো এক
হাজার স্বর্ণমুদ্রা। এই স্বর্ণমুদ্রার কথাটা তিনি বলে দিলেন তার কাছে, গল্পচ্ছলে। সরল মনে। লোকটা তো লোভী। দারুণ দুষ্ট। কপট। ধূর্ত। ধুরন্ধর। ফন্দিবাজ। সে ফন্দি আটলো।
হঠাৎ লোকটা চারিদিক মুখরিত করে কাঁদতে লাগলো, বিলাপ করে। উচ্চস্বরে….। তার
সে কান্নার আর্তনাদ জাহাজের ইথারে ইথারে ছড়িয়ে পড়লো। এমন আর্তনাদ শুনে সবাই কি আর
বসে থাকতে পারে ? পারলো না
জাহাজের যাত্রীরাও। ছুটে এলো সবাই। ব্যাকুল হয়ে। দলে দলে....
সকলের জিজ্ঞাসার জওয়াবে লোকটা
বললো তার স্বর্নমুদ্রা চুরি হয়ে গেছে। হতচকিত হয়ে ওঠেন ইমাম বুখারী
(রাহিমাহুল্লাহ)! বুঝতে পারেন তার ধূর্তামি আর দুরভিসন্ধির কারণ। মানুষজন সকলের
আসবাবপত্র খুঁজতে লাগলো। একেবারে তন্ন তন্ন করে।
এদিকে ইমাম বুখারী
রাহিমাহুল্লাহ'র কাছে
একহাজার স্বর্ণমুদ্রা আছে। মনের আকাশে চিন্তার কালো মেঘ জমাট বাঁধালো তাঁর।
ভীষণরকম চিন্তিত হয়ে পড়লেন তিনি ! লোকজন তো তল্লাশি চালিয়ে তাঁর নিকট পেয়ে যাবেন
স্বর্ণমুদ্রা। তখন তাঁকে অবিশ্বাস করলে তো তাঁর এতোদিনের অর্জিত যে বিশ্বাস,
সে বিশ্বাসের ভিত্তিতে আঘাত আসবে। কলঙ্কের দাগে দগ্ধ হবেন। হাদিসের
বিশ্বস্ততার ওপর আসবে আঘাত। নাহ্ ! এ হতে পারে না— মনে মনে ভাবতে লাগলেন তিনি ।
আল্লাহ যাকে হেফাজত করেন
তাঁকে তো সবরকম বিপদ থেকেই বিমুক্ত রাখেন। বিমুক্ত থাকার কৌশলও শিক্ষা দেন। হঠাৎ
তাঁর মাথায় বুদ্ধি এলো। তিনি সবার অগোচরে টুপ করে সমুদ্রের গহীন জলে ছুঁড়ে ফেলে
দিলেন তাঁর নিজস্ব সম্পদ— সেই একহাজার স্বর্ণমুদ্রার থলে। এদিকে মানুষজন
তল্লাশি চালাতে লাগলো। ইমাম বুখারী'র (রাহিমাহুল্লাহ) কাছেও আসলো সকলে। তল্লাশি করা হলো। ফেলো না কিছু।
ভেস্তে যায় সেই বাটপারের দুরভিসন্ধি। ইমাম সাহেব সম্পদ বিসর্জন দিয়েও আল্লাহর একান্ত
অনুগ্রহে ধরে রেখেছেন তাঁর দীর্ঘদিনের অর্জিত মান-ইজ্জত ও বিশ্বস্ততা।
আর এদিকে সেই কপট-প্রতারক
লোকটার মুখোশ মানুষের সামনে আলগা হয়ে যায়। উন্মোচিত হয়ে পড়ে তার সঠিক স্বরূপ। তাকে
সবাই তিরস্কার করতে লাগলো। প্রতারণাকারীরা লাঞ্ছিত হয়। অপবাদকারীরা প্রত্যখ্যাত
হয়। সে-ও হলো । পরে জাহাজ থেকে নামার সময় লোকটি নিরিবিলি ইমাম বুখারী
রাহিমাহুল্লাহ'র সাথে মিলিত
হয়ে জিজ্ঞেস করে— আপনার সাথের একহাজার স্বর্ণমুদ্রা কী করেছেন, কোথায় রেখেছেন? উত্তরে তিনি বললেন; আমি তোমার চক্রান্ত বুঝতে পেরেছি । আমার জন্যে সেটা
ছিলো এক কঠিন পরিস্থিতি। সেই পরিস্থিতিতে আমি একহাজার স্বর্ণমুদ্রার মায়া ত্যাগ
করে রাসুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের মর্যাদ অক্ষুন্ন রাখার দৃঢ়
সিদ্বান্ত গ্রহণ করেছি। সে জন্যে আমি তা পানিতে ফেলে দিয়েছি।
শোনা যায় একবার তাঁর কাছে
অনেকগুলো মূল্যবান দ্রব্যাদি হাদিয়া পাঠান একলোক। তা দেখে ফেলেন এক ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ী তা পাঁচ হাজার দিরহাম দিয়ে ক্রয় করার ইচ্ছে পোষণ করেন। ইমাম সাহেব চিন্তা
করলেন। তিনি বললেন আজকের মতো চলে যাও তুমি, আমাকে একটু ভাবতে দাও। আমি ভেবে দেখি। অতিক্রম হয়ে গেলো সেইদিনটি। ফুটে
উঠলো নতুন সকাল। আসলো নতুন ভোর। সে সকালে আরেক ব্যাবসায়ী এসে দশ হাজার দিরহাম দিতে
চাইলো। রাজি হলেন না তিনি। জবাব দিলেন তিনি —গতরাতে আমি একদল ব্যাবসায়ীকে তা দেয়ার নিয়্যাত করে ফেলেছি; কাজেই আমি আমার নিয়্যাতের
খেলাফ করতে চাই না। করবো না । চলে যেতে পারো তুমি। চলে গেলো লোকোটি। তিনি তাঁর
নিয়্যাতের খেলাফ করেন নি। তা পূর্বোক্ত ব্যক্তিকে পাঁচ হাজার দিরহামের বিনিময়ে
দিয়ে দিলেন।
একটুখানি ভেবে দেখুন, তার সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন
না। প্রতিশ্রুতি দান করেন নি। তবুও নিয়্যাত বা মনের সংকল্প রক্ষা করার জন্য পাঁচ
হাজার দিরহাম মুনাফা ছেড়ে দিতে একবিন্দু দ্বিধাবোধও করেন নি !
তাঁর স্মৃতির যে প্রখরতা, জ্ঞান-সাগরের যে গভীরতা,
চিন্তার যে বিশালতা,
যে চারিত্রিক দৃঢ়তা ও অটুট সততা, নিয়্যাতের
পরিশুদ্ধতা আর বিশাল পর্বতসম হিম্মতের কথামালা — এসব কিছু ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। সমগ্র ইসলামি সম্রাজ্যে যখন তাঁর কথা এরকমভাবে ছড়িয়ে পড়লো
, মানুষ তখন তাঁর প্রতি আরো অনুরক্ত হয়ে পড়লো।
তখন সেই যুগের মুহাদ্দিসগণ তাঁকে পরীক্ষা করার আকাঙ্খা পোষণ করলেন। স্মৃতি শক্তির পরীক্ষা।
জ্ঞানের পরীক্ষা। এমন অবস্থায়ই এবার তিনি আগমন করলেন বাগদাদে। তাঁকে পরীক্ষার জন্য এক সাথ হলেন
চারশতজন সম্মানিত ও বিদগ্ধ মুহাদ্দিস। একত্রিত করলেন তাঁরা ১০০টি সহীহ হাদিস। এরপর
তাঁরা তার সনদ ও মতন পাল্টিয়ে দিয়ে ১০ ভাগে বিভক্ত করে দশজন মুহাদ্দিসের হাতে
অর্পন করলেন। স্থাপন করা হলো তাঁর জন্য হাদিসের মাজলিশ ।
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)
এসেছেন। এসে আসন গ্রহণ করলেন। তিনি যখন আসন গ্রহণ করলেন তখন প্রথমে একজন মুহাদ্দিস
১০টি হাদিস নিয়ে তার কাছে গিয়ে একটি একটি করে সবগুলো হাদিস পাঠ করে শেষ করলেন।
প্রতিটি হাদিস পঠন-শ্রবণ শেষ হলেই ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলতেন এই ধরণের
কোনো হাদিস-ই আমার জানা নেই। জমা নেই আমার স্মৃতির ডায়েরিতে। এমনিভাবে ১০
জন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ১০০টি হাদিস তাঁর সামনে পাঠ করলেন। সকল হাদিসের ক্ষেত্রেই
তিনি বারংবার এই একই কথা বললেন স্পষ্টভাবে। সবশেষে তিনি সকলকে ডেকে এলোমেলো করে
রাখা প্রতিটি হাদিসকে তার মূল সনদের দিকে প্রত্যাবর্তন করিয়ে দিলেন। সুন্দর করে।
শুদ্ধভাবেই।
হাদিসগুলোর সনদ থেকে কোন
রাবির নাম বাদ পড়েনি। মতনসমূহ থেকে একটি শব্দও টুটে যায় নি। হাদিসসমূহ সঠিকভাবে
সাজানোতে মুহাদ্দিসগণ তাঁর কোন ভুল-ভ্রান্তি ধরতে পারেন নি। উত্তীর্ণ হলেন তিনি । বলা
হয়ে থাকে যে, সমরকন্দে
যাবার পরও তাঁকে একই নিয়মে একই পদ্ধতীতে পরীক্ষা করা হয়েছিল তাঁকে।
তাঁর এমন অপরিসীম মেধা, অনন্য এই স্মৃতিশক্তির কথা
মানুষের কর্ণকুহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবার ফলে জনসাধারণ তাঁর থেকে শিক্ষা লাভের জন্য
তাঁর খিদমতে হাজির হতে লাগলেন, দলে দলে। শিক্ষক হিসেবেও তিনি অল্প সময়েই সাফল্যের
সাক্ষর রাখলেন। পংগপালের মতো লোকজন তাঁর কাছে উপস্থিত হতে থাকে। এতো অধিক পরিমাণ
লোক তাঁর কাছে উপস্থিত হতো যে, কোথাও বিন্দু পরিমাণ স্থান
খালি বা অপূর্ণ থাকতো না !
তিনি এমন একজন উঁচু মানের সেলিব্রিটিতে পরিণত হন
সে সময়েই– যখন তাঁর মুখে স্পষ্টরূপে দাঁড়ি-গোফ পর্যন্ত গজায়
নি ! যেখানেই যেতেন তিনি সেখানেই মানুষের ভিড় জমতো। মাঝেমধ্যে এমনও হতো যে , তাঁর পথ থামিয়ে শিক্ষিত
জনসাধারণ তাঁর কাছ থেকে হাদিস লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি
বুখারায় অধ্যাপনার কাজ পরিচালনা করলেও এর বাহিরে আরো বহু জায়গায় ইলমুল হাদিসের
শিক্ষা দিয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাগদাদ, বসরা, কূফা, বলখ,
তারতুস ইত্যাদি।
তাঁর থেকে ইলমুল হাদিসের
জ্ঞান আহরণ করে জগত জোড়া খ্যাতি অর্জনকারী ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—ইমাম মুসলিম, ইমাম নাসা’ঈ, ইবনে খোয়াযা, এবং ইমাম দারেমী প্রমুখ। বলা হয়ে থাকে তাঁর থেকে ৭০ হাজার কিংবা ৯০
হাজার লোক তাঁর রচিত-সংকলিত জামিউস সহীহ্'র (সহীহ্ বুখারী নামে পরিচিত যা) দারস নিয়েছেন।
তিনি শিক্ষা নিয়েছেন বা
প্রভাবিত হয়েছেন ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল, ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, আলী ইবনুল মাদীনী, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীনদের মতো বিদগ্ধ ইমামগনের থেকে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল
(রাহিমাহুল্লাহ) এর সাথে তাঁর এতো বেশি সম্পর্ক ছিলো যে, যতোবারই তিনি বাগদাদে গমণ
করেছেন ততোবারই তিনি আহমাদ বিন হাম্বালের (রাহিমাহুল্লাহ) সাথে দেখা করেছেন।
প্রত্যেক সাক্ষাতের সময়ই ইমাম আহমাদ তাঁকে খোরাসান ছেড়ে দিয়ে বাগদাদে
স্থায়ীভাবে বসবাস করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। যদিও তিনি তা করেন নি।
সে যাই হোক, তিনি ওনাদের দ্বারা প্রভাবিত হলেও সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা পালন
করেছেন যাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে—তিনি
হলেন ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (রাহিমাহুল্লাহ)। মানে হলো ইমাম বুখারীর (রাহিমাহুল্লাহ) জীবনের সবচে' শ্রেষ্ঠ কর্ম—সহিহ্ আল বুখারী হাদিসগ্রন্থটি— রচনার প্রেরণা লাভ করেন যাঁর থেকে, তিনি ইমাম ইসহাক ইবনে
রাহওয়াইহ রাহিমাহুল্লাহ।
সেই গল্পটি হলো —একদিন তিনি দারস দিচ্ছেন। সকলের সামনে তিনি ( ইমাম
ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ) হঠাৎ এমন একটি
গ্রন্থের বিষয়ে প্রত্যাশার প্রকাশ ঘটান যে, যাতে লিপিবদ্ধ থাকবে শুধু সহিহ্
হাদিস সমূহ। চুপচুপ শুনলেন সকলেই। ইমাম বুখারীরাহিমাহুল্লাহ'র
ভাবনায় দোল খেয়ে ওঠলো। ছাত্রদের মাঝে তখন তিনি এই কঠিন কাজে অগ্রসর হবার এক
সুতীব্র আগ্রহ পোষণ করেন। সেই আগ্রহের দিকে এগিয়ে যান তিনি। দৃঢ়তার সাথে। দৃপ্ত
পদচ্ছাপে....। ২১৭ হিজরী সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি কা'বা
গৃহে বসে এই গ্রন্থের সংকলন শুরু করেন। সুদীর্ঘ ষোলোটি বছর পর ২৩৩ হিজরী সনে এর সংকলনের
কাজ সমাপ্ত হয়।
একটি বিষয় জানা যায় যে , একদিন
তিনি ঘুমালেন। ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখলেন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামকে। দেখলেন রাসুলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আ'লাইহি
ওয়াসাল্লাম বসে আছেন। তাঁর শরীরে ভনভন করে মাছি উড়ছে। আর তিনি মাছিগুলো বড়োসড়ো
একটা পাখা দিয়ে তাড়াচ্ছেন!
তাঁর সেই স্বপ্নের কথা
সে-সময়ের ওলামায়ে কিরামের নিকট তিনি উপস্থাপন করলেন। তা শুনে সকলেই তাঁকে বললেন যে, তুমি রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের সাথে যে সকল জাল ও বানোয়াট কথা ঢুকিয়ে দেয়া
হয়েছে বা ঢুকে পড়েছে তা থেকে সহিহ্ হাদিসসমূহ আলাদা করবে। তাঁদের ব্যখ্যা শুনে
আরো বেশি অনুপ্রাণিত হলেন তিনি। আরো অধিক পরিমাণে উদ্দীপ্ত হলেন। একটি বিশুদ্ধ
হাদিসগ্রন্থ রচনার প্রতি তাঁর আগ্রহ আরো অধিক বৃদ্ধি পেলো।
ছয় লক্ষ হাদিস থেকে বাছাই
করে ৭৩৯৭ টি হাদিস তিনি সেই গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। মাসজিদে হারামে বসে বসে তা
সংকলন তো করেছেনই, বরং
প্রত্যেকটা হাদিসের ওপর করেছেন তিনি ইস্তেখারা। যে হাদিসই লিপিবদ্ধ করতে চাইতেন
সেই হাদিসের পূর্বেই দুই রাকাআত স্বলাত আদায় করতেন। ইস্তিখারা করতেন।
কতোটা সতর্কতার সাথে তিনি তা
সংগ্রহ ও সংকলন করেছেন দেখুন — যদি কোনো হাদিস সহিহ্ও হতো, আর সেই সহিহ্ হাদিস সম্পর্কে
তাঁর দিলে কোনো ধরণের সন্দেহ-সংশয় উদিত হতো , তাহলে সে হাদিস
তিনি সহিহ্ বুখারীতে লিখতেন না। এই গ্রন্থ সংক্ষিপ্তভাবে সারা পৃথিবীতে সহীহ্
বুখারী হিশেবে পরিচিতি অর্জন করলেও এর পূর্ণ নাম হচ্ছে -
“আল জামিউল মুসনাদুস সহীহুল মুখতাসারু
মিন উমূরি রাসূলিল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলায়হি
ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী
ওয়া আয়্যামিহী"
সহিহ্ বুখারী সংকলনের পরে
তাঁর পরিচিতি, তাঁর
গ্রহণযোগ্যতা আরো অধিক পরিমাণে ছড়িয়ে যেতে লাগলো দিকে দিকে। দেশে দেশে। প্রতিটি
শহরে-নগরে। কিন্তু তাঁর এতো এতো জশ-সম্মান, সুনাম-সুখ্যাতি
কতিপয় হিংসুটে আর হীনমন্য লোকদের সহ্য হলো না। তাঁরা তার বিরুদ্ধে অপবাদের তীর
নিক্ষেপ করতে লাগলো। ষড়যন্ত্র করে দেশত্যাগে বাধ্য করলো। নিজ জন্মভূমি থেকে বুখারার
তৎকালীন শাসনকর্তা তাঁকে বিতাড়িত করলো করে দিলো।
মানুষ যেখানে আমীর-ওমরা আর
রাজা-বাদশাহ্দের বন্দনা আর স্তুতি গাইতো, চাটুকারিতা করতো ; সেখানে তিনি তার কিঞ্চিত পরিমাণও করতেন না। যে মুখে
আল্লাহ প্রেমের বন্দনা হয় সে মুখে কোনো মাখলুকের চাটুকারিতার তো প্রশ্নই আসে না। তিনি ছিলেন প্রবল সাহসী।
নীতির প্রশ্নে আপোষহীন। কে বাদশাহ্ কে ফকির; তিনি তা গোনায় ধরতেন না। হাদিস শাস্ত্রের শিক্ষা দিতেন তাঁর পাঠশালায়।
রাজা-বাদশাহ্দের গৃহে কিংবা অন্য কোথাও গিয়ে অন্যকোনো ব্যক্তির জন্য স্পেশাল সুযোগ
তিনি দিতেন না। কারো থেকে বিশেষ সুবিধেও কখনো করতেন না আদায় ।
ওনাকে বুখারার গভর্নর খালিদ
ইবনে আহম জহলি রাজপ্রাসাদে গিয়ে তার পূত্রদের শিক্ষাদান করার আবেদন জানান। ইমাম
সাহেব জানালেন এটা তাঁর নীতির খেলাফ। এই প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিলেন। গভর্ণর কী
ভাববে, কী করবে সেটার প্রতি সামন্যতম
ভ্রুক্ষেপও করেন নি তিনি। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন যে, শিক্ষাকেন্দ্র ব্যতীত তিনি ভিন্ন কোথাও গিয়ে শিক্ষা দান করবেন না। রাজপ্রাসাদে
গিয়ে তিনি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামের
মহামূল্যবান যে বিদ্যে, সে বিদ্যের অবমাননা করতে তিনি মোটেও
প্রস্তুত নয়। গভর্নর এবার এলেন দ্বিতীয় অপশন নিয়ে। করলেন বিকল্প প্রস্তাব। সে প্রস্তাব হলো —তিনি ( ইমাম বুখারীরাহিমাহুল্লাহ) যেহেতু রাজদরবারে
উপস্থিত হতে চাচ্ছে না, হবেন না —সেহেতু শাহজাদাদেরকে ওনার কাছে, ওনার পাঠাগারেই পাঠানো হবে।
তবে সাধারণ ছাত্ররা যেনো তাদের সাথে মেলামেশা করতে না পারে। সে-জন্যে আলাদা সময় ,
আলাদা ব্যবস্থা তাদের জন্য করে নিতে হবে।
দৃঢ়চেতা ইমাম সাহেব , দৃঢ়তার
সাথে সেই প্রস্তাবটিও প্রত্যখ্যান করে দেন। ইমাম সাহেব দৃপ্ত কন্ঠে জানান দেন যে —এই শিক্ষা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী, নির্দিষ্ট ব্যক্তির সম্পত্তি
নয়। এটা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বাণী। সকল মুসলিমের
সম্পদ। এটা কোনো রাজা-বাদশাহ্, আমীর-ওমরাহ্'র জন্য নির্দিষ্ট করতে পারি না আমি। নির্দিষ্ট করবোও না। লক্ষ-লক্ষ সাধারণ
জনতা, অসংখ্য গরীব মানুষদেরকে বঞ্চিত করে আপনার জন্য আলাদা
করাটা এই মহান ইলমের অমর্যদা করা হবে। করা হবে হেয় প্রতিপন্ন । তিনি বললেন আমার
দ্বারা তা সম্ভব নয়। সুতরাং যার ইচ্ছে আমার শিক্ষাকেন্দ্রে এসে হাজির হবে। তা'লিম নিবে। কারো পথে আমি অন্তরায় হবো না। কারো প্রতি অবজ্ঞাও করবো না,
আবার কারো জন্য আলাদা কিছুও করবো না। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস সকলের জন্যই সমান....
এমন জবাব মানতে পারেনি জালিম
গভর্নর। সে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ক্রোধে রক্তবর্ণ ধারণ করে তাঁর চেহারা। তা দেখে ইমাম
সাহেব তাকে আরো বলেন —আপনি আমার ওপর যদি জুলুম করেন, বাধা প্রদান করেন বলপ্রয়োগে,
সেই বাঁধা প্রদানে আমি কোনো প্রকার ভীত-সঙ্কিত নই ! আপনি যদি আমার
শিক্ষাকার্যক্রমে বাধা দিয়ে বন্ধ করেন —রোজ কিয়ামাতে আমি আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবো। আমি বলবো, হে আল্লাহ ! আমি নিজ থেকে
ইচ্ছাকৃত ইলমে দ্বিনের প্রচার ও শিক্ষা প্রদান করা বন্ধ করিনি। বিরত থাকিনি। আমাকে
বাধ্য করা হয়েছে।
এবার পুরোপুরি ক্ষিপ্ত হয়ে
গেলো গভর্নর। যে কোনো উপোয়েই তাঁকে তাঁর জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করার ফন্দি আঁটতে
লাগলো। নানাবিধ কূটকৌশল অবলম্বন করতে থাকে সে। সাথে সাথে ইমাম সাহেবের ওপর
কতিপয় হিংসুটে-ফিতনাবাজ মানুষের বর্বর ফতোয়া হামলা আসতে লাগলো। আসতে লাগলো অপবাদ।
আকিদা নিয়ে রাজনীতি শুধু এই সময় নয়, তখনকার সময়ও কিছু কুচক্রী মহল এই একই কাজটা করতো। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর
ওপর মিথ্যাচার করা হলো। তাঁর আকিদা খারাপ নামে তত্ত্ব-তথ্য-সংবাদ চতুর্দিকে ছড়িয়ে
দিতে লাগলো। হুজুগ প্রিয় মানুষ সবসময়ই থাকে। তখনও ছিলো। সেই হুজুগ প্রিয় কমবুঝ-বুদ্ধি
সম্পন্ন মানুষকে ওনার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা হলো। সারা শহরজুড়ে শুরু হলো এই মহৎ
মানুষটার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের তুমুল ঢেউ।
এই টাইপের কিছু লোকজনই একসময়
রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁর ফতোয়া কার্যক্রম-ফতোয়া প্রদান নিষিদ্ধ করলো। শেষ জীবনেও কিছু
কুচক্রী লোক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলো —তিনি কুরআনুল কারিমকে, কুরআনুল কারিমের বচনগুলোকে
মাখলুক (সৃষ্টি) বলে বিশ্বাস করেন। এমন অভিযোগ, অপবাদ আর অশান্তির যে তুমুল আন্দোলন , সেই তুমুল আন্দোলনের তুখোড় ঢেউয়ের মধ্যেই গভর্নর
পেয়ে গেলো ওনাকে শহর ছাড়া করার মহা মওকা ! আদেশ জারি করলো গর্ভনর—তিনি যেনো দ্রুত শহর ত্যাগ করেন। তাঁকে
আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটুকুও দেয়া হলো না।
মায়ার ধূম্রজাল ছিন্ন করে
তিনি তাঁর প্রিয় জন্মভূমি বুখারা ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। অথচ এই শহরকেই তিনি আপন
করে নিয়েছেন অনেক বেশি। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ'র শতো অনুরোধকেও তিনি আমলে
নেননি। আজ তাঁর সেই মায়ার শহর, প্রিয় শহর তাঁকে এই আচরণই
উপহার দিলো !
শহর থেকে বের হলেন তিনি।
উপস্থিত হলেন বয়কন্দ নামক স্থানে। জালিমের দল তাঁর বিরুদ্ধে সেখানেও ষড়যন্ত্রের
জাল বুনতে লাগলো। চালাতে লাগলো অপপ্রচার। আল্লাহর এই মহৎবান্দাকে সেই স্থানও
পরিত্যাগ করতে হলো। এবার গেলেন তিনি সমরকন্দ। সেখান থেকে যান
খরতঙ্গ নামক এক নিভৃত পল্লীতে। আশ্রয় গ্রহণ করেন এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় । বুখারার
আন্দোলনের ঢেউ সমরকন্দেও এসে পৌঁছায়। সেই বিদ্বেষের অনল এখানেও জ্বলছে দাউদাউ করে
! এতো এতো পরীক্ষায় আল্লাহর কাছে ছাড়া আর কার কাছেই বা নিজেকে সঁপে দিবেন তিনি? কাকেই বা বলবেন ব্যথার কথা ? কার
কাছেই বা চাবেন আর ? দু'হাত তুললেন
আল্লাহর কাছে । বুকভরা ভীষণ ব্যথা নিয়ে বললেন — "ইয়া আল্লাহ্ ! তোমার সৃষ্ট এই সুবিশাল পৃথিবী আমার জন্য ভীষণরকম
সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তুমি আমাকে তোমার নিকট তুলে নাও।"
একপর্যায়ে সমরকন্দবাসী তাদের
ভুল বুঝতে পারে। তারা ঐকমত্য হয়ে তাঁকে সেখানটাতে নিয়ে যেতে চাইলেন। তিনিও
প্রস্তুত হলেন যাবার জন্যে। কয়েক কদম অগ্রসর হওয়ার পরেই তিনি ভীষণ রকম দুর্বল হয়ে
পড়লেন। এতো অধিক পরিমাণে দুর্বল হলেন যে, তিনি তাৎক্ষণিক সেখানেই শুয়ে পড়লেন। তাঁর শরীর থেকে দরদর করে অবিরাম ধারায়
ঘাম ঝরতে লাগলো তখন! কিছুক্ষণ এভাবেই চললো...
২৫৬ হিজরী সনের ১লা শাওয়াল।
ঈদুল ফিতরের রাত। সেই ঈদুল ফিতরের পবিত্র রাতেই ৬২ বছর বয়সে এই মহৎপ্রাণ হাদিসের
বাদশাহ্'র জীবনের
যবনিকাপাত ঘটলো। (ইন্না-লিল্লাহ ওয়ান্না ইলাইহি রজিউন) । তাঁর দাফন-সমাধি নিয়ে
কিছু মতবিরোধ হয়। অতঃপর তাঁকে খরতঙ্গ নামক পল্লীতে চিরদিনের জন্য সমাহিত করা হয়। কথিত আছে দাফনের পর তাঁর কবর
থেকে অধিক পরিমাণে সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হতে থাকে। লোকজন দলে দলে তাঁর কবরের মাটি
নিতে থাকে। কোনভাবে তা থেকে মানুষজনকে নিবৃত করতে পারা যেতো না। বিষয়টি নিয়ে মানুষ ফিতনায়
পড়ার আশঙ্কায় ছিলো প্রচুর। সে জন্যে প্রাচীর দিয়ে মজবুতভাবে কবরটিকে ঢেকে দেয়া
হয়।
ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ
কোনো ঔরসজাত সন্তান রেখে যেতে না পারলেও রেখে গিয়েছেন কালজয়ী কিছু কর্ম। সে-সব
মহৎকর্মের জন্যে সারা দুনিয়ার সকল মু’মিনের হৃদয়ের মণিকোঠা থেকে তাঁর জন্যে অবারিত
নিঃসরণ হয় দুআ ও ভালোবাসার অবিরল ঝর্ণাধারা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহর
প্রতি রহম করুন। ফিরদৌসের অবারিত নিয়ামত সম্ভার তাঁর জন্যে রব্বুল আলামিনের থেকে
আসতে থাকুক। আমীন।
||আমিরুল
মুমিনীন ফিল হাদিস : ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ- ||
~রেদওয়ান
রাওয়াহা
[ লেখাটি কপি
করা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ, লেখক এটার অনুমতি দিচ্ছে না। ]
Comments
Post a Comment