সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং সোশ্যাল অ্যাকটিভিসমের মাধ্যমে কি দ্বীন কায়েম হয়ে যাবে? .
.
না, কেবল এটুকুর মাধ্যমে দ্বীন কায়েম হবে না। আরও স্পষ্ট করে বলি, কোন ভূখণ্ডের ওপর তামকীন বা কর্তৃত্ব অর্জন শক্তি প্রয়োগ ছাড়া সম্ভব না। নিছক দাওয়াহ, মাসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা বৃদ্ধি, অথবা প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা সাংগঠনিক শক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে তামকীন অর্জন হবে না। গণতন্ত্রের মাধ্যমে তো আরও হবে না।
.
ইতিহাস থেকে এটা স্পষ্ট যে তামকীন আসে বল প্রয়োগের মাধ্যমে। এটা সুনানুল কাওনিয়্যাহ, মানব সমাজ ও ইতিহাসে মহান আল্লাহর নির্ধারিত অমোঘ নিয়ম। ইসলামের যে চূড়ার কথা নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসে এসেছে সেটিই সর্বোত্তম পথ। অ্যাক্টিভিসম দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আলাদা কোন মানহাজ বা পদ্ধতি না।
.
.
২। তাহলে সোশ্যাল অ্যাক্টিভিসম করে কী লাভ, এটা কেন করবো?
.
করবেন কয়েকটা কারনে,
.
ক) যে কারণে আপনি মাসজিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন, মাদ্রাসা গড়ে তোলেন, সাদাকাহ করেন, বিভিন্ন দাওয়াতী মেহনত করেন, এগুলোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন, ঠিক একই কারণে সোশ্যাল অ্যাক্টিভিসম করবেন।
.
এই কাজগুলোর দ্বারাও যমীনে তামকীন অর্জন হবে না। তাই বলে আমরা কিন্তু এ কাজগুলোর গুরুত্ব অস্বীকার করি না। প্রত্যেক সুবিবেচক মানুষ জানেন এবং বোঝেন, এই কাজগুলোও কওমের জন্য অপরিহার্য। একইভাবে সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং সোশ্যাল অ্যাক্টিভিসমও কওমের জন্য জরুরী।
.
আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের দ্বীনি মেহনত চলমান। তবে সেক্যুলার গোষ্ঠীর সামাজিক আধিপত্য মোকাবেলা এবং সামাজিক শক্তি অর্জনের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে গভীর শূন্যতা আছে। সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং সোশ্যাল অ্যাক্টিভিসম এই শূণ্যস্থান পূরণ করতে চায়।
.
খ) বাংলাদেশের মুসলিমরা আজ ঈমানী, সামাজিক, রাজনৈতিক সকল দিক থেকে আক্রান্ত। আমাদের সমাজ, মূল্যবোধ, পরিবার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্ব আজ, এখন হুমকির সম্মুখীন। ইসলামী ব্যবস্থা কায়েমের উদ্দেশ্যের সাথে মতপার্থক্য নেই, কিন্তু এটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। আজ, এখন আমরা যে ক্রাইসিসের মুখোমুখি তা নিয়ে কাজ করবে কে?
.
আজ মূলধন (ঈমান, সমাজ, পরিবার, প্রজন্ম) রক্ষা করতে না পারলে আগামীকাল মুনাফা (ইসলামী শাসন) অর্জন অসম্ভব। সবাই মুনাফার কথা চিন্তা করছে, কিন্তু মূলধন কে রক্ষা করবে? আমাদের মূলধন আজ হুমকির মুখে। তাই সামাজিক শক্তি অর্জনের প্রকল্পকে সামনে রেখে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্বতন্ত্র উদ্যোগ প্রয়োজন। এখনই প্রয়োজন।
.
গ) সামাজিক শক্তি অর্জন বাংলাদেশে প্রায় যেকোন ইসলামী কাজ কার্যকরীভাবে করার অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। সামাজিক শক্তি অর্জন এবং সেক্যুলারদের সামাজিক আধিপত্য ভাঙ্গা ছাড়া এলজি টিভি, বিদ্বেষ, বৈষম্য এমনকি অবমাননার মতো ইস্যুতেও কার্যকরীভাবে কাজ করা প্রায় অসম্ভব। যার বিভিন্ন উদাহরণ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
.
অর্থাৎ, ‘বেয়ার মিনিমাম’ বা সর্বনিম্ন পরিমাণ কাজটুকু যথাযথভাবে করার চেষ্টা করতে গেলেও সামাজিক শক্তি আবশ্যক। নিজ কওমের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আবশ্যক। এটা ছাড়া কার্যকরীভাবে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার কাজ করাও সম্ভব বলে মনে হয় না। ওয়াল্লাহু ‘আলাম।
.
অর্থাৎ, এটি আবশ্যক (necessary), তবে যথেষ্ট (sufficient) না। সামাজিক শক্তি অর্জনের প্রকল্প এ ভূখণ্ডে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা, দ্বীন ইসলামের দাওয়াহ, তালীম-তাদরীস, তাযকিয়াতুন নাফস, তাওহীদ ও হাদীদের পথ, উম্মাহর পুনর্জাগরণ – এধরণের সকল কাজের সম্পূরক। এগুলোর বিকল্প বা প্রতিদ্বন্দী না।
.
.
৩। তাহলে তামক্বীন অর্জনের চেষ্টা করবো না?
.
করবেন, কোনো সমস্যা নেই। পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার বৈধ (শরীয়াহর আলোকে) যেকোন পথ ও পদ্ধতির সাথে কারো কোনো মৌলিক দ্বিমত নেই। তবে এখানে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে।
.
-- বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তামকীন অর্জন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। আমার জানা মতে এধরণের প্রকল্পের সাথে যুক্ত কোনো ধারাই আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে, এমনটা সম্ভাব্য মনে করেন না। এটা আসবাবের জগতের অ্যানালিসিসের আলোকে, বাকি আল্লাহ্ চাইলে যেকোনো কিছুই সম্ভব।
.
এখন, এই যে ১৫ বছরের সময়টা, এর মধ্যে আমাদের ঈমান ও দ্বীনের প্রতি যে হুমকিগুলো আছে এবং দিন দিন বাড়ছে সেগুলো সামাজিকভাবে মোকাবিলা না করে আমরা কি বসে থাকবো? কখন তামকীন অর্জন হবে তার জন্য অপেক্ষা করবো? এটা কি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে না?
.
-- আরেকটি বাস্তবতা হল, তামকীন অর্জনের জন্য কাজ করা সংগঠনগুলো এই কাজটা যথাযথভাবে করতে পারবে না। প্রথমত তাদের ফোকাস এবং প্রায়োরিটি ভিন্ন। দ্বিতীয়ত, তাদের ওপর নানামুখী চাপ থাকে, তাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তৃতীয়ত, অনেক সময়ই নিজ অস্তিত্ব আর সংগঠন টিকিয়ে রাখা নিয়ে তাদের রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়।
.
কাজেই তারা হয়তো সীমিতভাবে সোশ্যাল অ্যাকটিভিসমে কিছুটা ফোকাস করতে পারবে, এর বেশি না। এটা কওমের প্রয়োজনের বিবেচনায় যথেষ্ট হবে না।
.
-- পাশাপাশি এটাও মনে রাখা দরকার যে, তামকীন অর্জন মানে ভূমিতে কর্তৃত্ব অর্জন করে ইসলামী শাসন কায়েম। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জোটের জুনিয়র পার্টনার হয়ে সংসদের কয়েক হালি আসন ভাগাভাগি, নির্বাচনকে ইসলামী বিপ্লব বলা – এগুলো তামকীন অর্জন না।
.
.
মুসলিমবঙ্গের প্রতিরক্ষায় সাংস্কৃতিক যুদ্ধ, সোশ্যাল অ্যাকটিভিসম এবং সর্বোপরি সামাজিক শক্তি অর্জনের এই প্রকল্প আবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে। প্রত্যেক ইসলামী গোষ্ঠী এবং দলের নিজ নিজ দলীয়/গোষ্ঠীগত অবস্থান থেকেই সাধ্যমত এই কাজে শরীক হওয়া উচিৎ।
.
পাশাপাশি এমন এক দল মানুষও দরকার যারা সবসময় এই প্রকল্প নিয়ে ডেডিকেইটেডভাবে কাজ করে যাবেন। এবং আল্লাহ্ই সর্বাধিক জ্ঞাত।
লিখেছেন: আসিফ আদনান
Comments
Post a Comment