জামায়াতের রাজনৈতিক দর্শন ও এটিএম আজহার

 



একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন কি? দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েও এটিএম আজহার সাহেব তার আদর্শ, রাজনৈতিক দর্শন বা চিন্তাচেতনায় একচুল পরিমাণও বিচ্যুত হননি। মুক্তিলাভের পর যখন পুনরায় তিনি তার রাজনৈতিক দর্শন প্রকাশ করেছেন, তখনই স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিয়ে বলেছেন:

"ইসলামকে নিয়েই ক্ষমতায় যেতে চাই। ইসলামকে রেখে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমি ক্ষমতায় গেলে হয়তো মন্ত্রী হতে পারব, কিন্তু ইসলাম তো ক্ষমতায় যাবে না। ইসলামকে সাথে নিয়েই ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সার্থক হবে। শহীদ ভাইয়েদের আত্মত্যাগও সার্থক হবে।"

 তিনি অন্য আরেকটি বক্তব্যে বলেছেন—

"আমার জীবনে পাওয়ার মতো আর কিছু নেই। কেবল এই জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে— এটাই দেখে যেতে চাই।"

আজহার সাহেবের এই ঘোষণা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শহীদ নেতাকর্মী ও কারাগারে বন্দি অবস্থায় মৃত্যু বরণকারী নেতৃবৃন্দের অভিব্যক্তিরই প্রতিফলন।

তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটিই— ইসলামের বিজয়। শহীদ নেতৃবৃন্দের মধ্যে সম্ভবত ব্যতিক্রম শুধু একজনই ছিলেন— যিনি পোস্ট-ইসলামিজম'-এর কথা ভাবতেন।

আজহার সাহেবের এই ঈমানি দৃঢ়তা দেখে চোখে পানি এসে গেল। এত জুলুম, নিপীড়ন, অপবাদ ও নির্যাতনের পরও তিনি আদর্শ থেকে অণুপরিমাণও বিচ্যুত হননি।

বরং আজ অনেকেই 'হেকমত', বাস্তবতা বা 'কৌশল'-এর নামে, ভারত-আমেরিকার 'মনোকষ্ট'-এর ভয়ে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছেড়ে কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণাকে প্রমোট করছেন। লিবারেল ডেমোক্রেসির কথা বলছেন।

এই প্রবণতা জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ অনেকের মধ্যেই প্রবেশ করেছে। এবং শিবিরের অসংখ্য সদস্যকেও গ্রাস করেছে তা। শিবিরের অনেক কাপ সদস্য পর্যন্ত সেক্যুলারিজম ও পোস্ট-ইসলামিজমের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

অনেকেই জামায়াতের পক্ষে মাঝেমধ্যে দুয়েকটা কথা বলে, এই পক্ষে বলার পর এবার তারা জামায়াতে ইসলামীকে ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলন বা খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নবুওয়াহর আন্দোলন থেকে সরে এসে পোস্ট ইসলামিজম কিংবা ওয়েলফেয়ার স্টেইটের দিকে চলে আসতে বলেন।

আজহার সাহেবের এই দৃপ্ত ঘোষণা যেন তাদের মুখে কসে চপেটাঘাত!

তিনি প্রমাণ করেছেন— জুলুম-নির্যাতন দ্বীনের সত্যিকার সৈনিকদেরকে আদর্শ থেকে একচুলও বিচ্যুত করতে পারে না; বরং তা তাদের ঈমানি শক্তিকে আরও বৃদ্ধি করে, আল্লাহর বিধানের প্রতি অন্তরকে আরও দৃঢ়তর করে।

জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা কিন্তু পোস্ট-ইসলামিজম বা সেক্যুলার ওয়েলফেয়ার স্টেইট করার জন্য নয়।

কিংবা যেন-তেনভাবে ক্ষমতা হাসিল করতে চেষ্টা করাও জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য হওয়া উচিৎ নয়— এমনকি এটা তাদের লক্ষ্যও নয়। এগুলো করার জন্য অজস্র মানুষের অগণিত দল আছে।

জামায়াতের একমাত্র মিশন— ইসলাম প্রতিষ্ঠা, জীবন ও সম্পদ কুরবানি দিয়ে হলেও তা অর্জন করতে আমৃত্যু দাওয়াত ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর মাধ্যমে চেষ্টা করে যাওয়া।

জামায়াত ইসলামী, ছাত্রশিবির ও ছাত্রী সংস্থা ততদিনই প্রাসঙ্গিক থাকবে, যতদিন তারা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"-এর ঘোষণার মাধ্যমে তাগুতের সাথে কুফুরি করবে, আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জিহাদে অবিচল থাকবে।

সাময়িক কোনো লাভের দিকে চেয়ে যদি তারা এই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়, এই পথ পরিহার করে, তবে আল্লাহ অন্য কাউকে এই মিশনে অভিষিক্ত করবেন— যারা দেহ দ্বিখণ্ডিত হলেও দ্বীনকে আঁকড়ে ধরে মঞ্জিল পানে ছাতকের ন্যায় তাকিয়ে থাকবেন।




~রেদওয়ান রাওয়াহা

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ