প্রজ্ঞা ও পরিণত নেতৃত্বের জয়
আলহামদুলিল্লাহ! কোনো উত্তেজনা, অস্থিরতা, বাড়াবাড়ি কিংবা অহেতুক চাপসৃষ্টির পথ বেছে না নিয়েই, আবারও বিজয়ের মুকুটে অভিষিক্ত হলেন আমীরে জামায়াত, ডা. শফিকুর রহমান।
তবে এ বিজয় ভিন্নধর্মী একটি বিজয়। এটি একটি চিন্তার বিজয়, একটি কৌশলগত পরিপক্বতার বিজয়, একটি রাষ্ট্রদর্শনভিত্তিক প্রস্তাবনার বিজয়।
তথাকথিত ‘বিপ্লবী সরকার’ এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছিল, আর অপরদিকে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছিল— তখন দৃশ্যপটে একটি অব্যক্ত অচলাবস্থা ঘনিয়ে আসছিল।
দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী পক্ষ দুটোর মধ্যে কোনো পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে অনিচ্ছুক থাকায়, স্পেশালি বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি থেকে পিছু হটতে অনিচ্ছুক থাকায় সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছিল।
এই অচল পরিস্থিতির ভেতরে আগে থেকেই নীরব প্রত্যয়ে একটি দুরদৃষ্টির সাথে সুন্দর একটি মতামত প্রদান করেছিলেন একজন চিন্তাশীল নেতা— ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি আবেগের নয়, প্রজ্ঞার ভাষায় বলেছিলেন, “নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারি হতে পারে। এপ্রিল মাস পার হওয়া অনুচিত।”
এই বক্তব্য তিনি প্রথম উত্থাপন করেন ঢাকায় সফররত মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর (১৬ এপ্রিল)।
আবার ৩ মে, ঢাকার মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতের জেলা ও মহানগরী আমীর সম্মেলনে সেই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
আর এখন, দুই পক্ষের সম্মতিতে ঠিক সেই সময়সীমাই গ্রহণযোগ্যতা পেল— রমজানের পূর্বে নির্বাচন, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই। এক কথায়— Have fun till 12th February!
খেয়াল করুন— আজ, দুপক্ষই যখন রমজানের পূর্বে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে— তখন স্পষ্ট হয়, ডা. শফিকুর রহমানের চিন্তাই হলো ঐক্যমতের ভিত্তি।
, ডাক্তার শফিকুর রহমান যখন এই প্রস্তাবনাটা হাজির করেছেন, তখন তাঁর কণ্ঠে উচ্চবাচ্চ্য ছিল না, কিন্তু তাতে ছিল প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতার ওজন।
বর্তমানে প্রফেসর ইউনুস এবং তারেক রহমানের এই সমঝোতা শুধু একটি রাজনৈতিক সমাধান নয়, বরং এটি বহুবিধ তাৎপর্য বহনকারী এক ঘটনাপুঞ্জ:
১. জামায়াতে ইসলামী এখন আর প্রান্তিক বা সম্ভাব্য শক্তি নয়, বরং একটি পরিণত ‘policy-forming’ রাজনৈতিক শক্তি।
আদর্শ, সংগঠন ও নেতৃত্ব— এই তিন স্তম্ভে দাঁড়িয়ে জামায়াত এখন এমন এক অবস্থানে উপনীত হয়েছে, যেখানে এখন আর তাদের বক্তব্য অবজ্ঞার নয়, বরং অচলাবস্থা নিরসনে সমাধানের কেন্দ্রবিন্দু।
আবার অন্যদিকে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণে জামায়াত একটি দায়িত্বশীল পক্ষ— বিষয়টি এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আরো সুপ্রতিষ্ঠিত হলো।
২. আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও জামায়াতের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও ভারসাম্যপূর্ণ নেতৃত্বের স্বীকৃতি প্রসারিত হওয়ার দিগন্ত উন্মোচিত হলো। যদি জামায়াতে ইসলামী বিষয়টি সঠিকভাবে ক্যাশ করতে পারে আরকী!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং চীনের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে জামায়াতের নিয়মিত সংলাপ, এবং সেসব সংলাপে দলীয় নেতৃত্বের যুক্তিসঙ্গত ও পরিণত বক্তব্য— এটি স্পষ্ট করে যে, জামায়াত এখন শুধু গতানুগতিক একটি আদর্শিক দলই নয়, বরং একটি দায়িত্বশীল ‘negotiating force’ হিসেবেও গণ্য হচ্ছে।
৩. ডা. শফিকুর রহমান: কেবল একজন দলীয় প্রধান নয়, বরং একজন রাষ্ট্রদার্শনিক চিন্তাবিদও।
তাঁর নেতৃত্বে নাটকীয়তা নেই, হঠাৎ আবেগ নেই; বরং আছে সময়োপযোগী, সুপরিকল্পিত ও নীতিনির্ভর অবস্থান। এই পরিণত নেতৃত্বই প্রমাণ করে— তিনি কেবল একটি দলের মুখপাত্র নন, বরং জাতীয় রাজনীতির পরিণত বিবেকও।
৪. এই কৌশলগত বিজয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মাঝে নতুন আত্মবিশ্বাস, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও প্রতিশ্রুতির পুনর্জাগরণ ঘটাবে বলে বিশ্বাস করি, ইন শা আল্লাহ!
নেতৃত্ব যখন স্থির এবং প্রজ্ঞাময় হয়, কর্মীরা তখন কেবল দলকে নয়, একটি আদর্শ ভবিষ্যৎকেও প্রতিনিধিত্ব করার শক্তি লাভ করে।
সবশেষে, এই বিজয় আমাদের মনে করিয়ে দেয়— রাজনীতি মানেই উচ্চ কণ্ঠে হট্টগোল নয়, বরং পরিণত চিন্তার পরামর্শই দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ দেখাতে পারে।
একটি কথাই হয়তো আজকের প্রেক্ষাপটে বলা যায়— “A statesman speaks not to dominate a moment, but to design the future.”
এখন, সেই ভবিষ্যতের নকশায় একজন শান্ত ও পরিপক্ব নেতৃত্বের রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠছে— যার নাম, ডা. শফিকুর রহমান।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁর নেতৃত্ব এবং তাঁর দলকে সমানভাবে কবুল করুন। আ-মী-ন।
~রেদওয়ান রাওয়াহা
Comments
Post a Comment