পলাশীর যুদ্ধ: মুসলিম সালতানাতের পতন সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ও নিয়ন্ত্রণহীন ইতিহাস
বাংলার আদিপর্ব: সভ্যতার সূচনা ও ঈমানের উত্তরাধিকার
১. প্রাচীন বাংলার জাতিগোষ্ঠীগত ক্রমধারা
• সর্বপ্রথম বাস করত অস্ট্রিক, মঙ্গোলয়েড ও কিরাত জাতিগোষ্ঠী।
• তারা নগর সভ্যতা গড়তে পারেনি, তবে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে।
• অস্ট্রিকরা খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০-৫০০০ সালের মধ্যে উপমহাদেশে আগমন করে।
২. দ্রাবিড়দের আগমন ও সভ্যতার সূচনা
• খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০-৩০০০ সালে দ্রাবিড়রা উপমহাদেশে আসে।
- গড়ে তোলে মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার নগরসভ্যতা।
- নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, তারাই ভারতবর্ষের নগর সভ্যতার প্রবর্তক।
- বাংলায় উয়ারি-বটেশ্বরকেও এই সভ্যতার নিদর্শন বলে মনে করেন অনেকে।
৩. দ্রাবিড়দের ধর্মীয় পরিচয় ও বংশসূত্র
- দ্রাবিড়রা ছিল নূহ আ. ছেলে শামের বংশধর। মহাপ্লাবনের পর নূহ আ. তিন ছেলে ছিল। একজনের নাম হাম, অন্যজনের নাম শাম এবং আরেকজনের নাম ইয়াফিস।
- সে হিসেবে দ্রাবিড়দেরকে সেমেটিক বলেও মনে করা হয়।
- তবে ঐতিহাসিক গোলাম হোসেন সলিমের মতে, হামের ছেলে 'হিন্দ'-এর মাধ্যমেই এই অঞ্চলে বসতি শুরু হয়।
- ‘বঙ্গ’ ছিলেন হিন্দের একজন পুত্র, তার সন্তানেরাই বাংলা অঞ্চলে এসে বসবাস করা শুরু করেন। ফলে তার নামানুসারে এই ভূখণ্ডের নাম বঙ্গভূমি হয়।
- সব মিলিয়ে ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে বুঝা যায়— দ্রাবিড়রা ছিলেন তাওহিদবাদী।
- তাদের আরেকটি বড়ো বৈশিষ্ট্য হলো, তারা ছিল শান্তিকামী জনগোষ্ঠী।
৪. আর্যদের আগমন ও ধ্বংসযজ্ঞ
• আর্যরা পরে এসে হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো ধ্বংস করে।
• অনার্যদের ঘৃণা করে তাদের “অপবিত্র” বলে আখ্যায়িত করে।
• আর্যরা ছিল মুশরিক ও ব্রাহ্মণ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী।
• উপমহাদেশে ব্রাহ্মণ্যবাদী জাতপাত তাদের সূত্র ধরেই সৃষ্ট।
৫. দ্রাবিড়-আর্য সংঘাত ও প্রতিরোধ
• দ্রাবিড়রা আর্যদের ওপর জুলুম শুরু করে। আক্রমণ করে।
• দ্রাবিড়রা শত জুলুমের পরেও তাদের বশ্যতা স্বীকার করে না।
আর্যরা ভারতের অন্যত্র সহজে আধিপত্য স্থাপন করলেও বাংলায় বাংলা আসতে তাই তাদের অনেক দেরি হয়ে যায়। এখানে আসতে গেলে প্রতিবন্ধকতা এবং প্রতিরোধের মুুুুখেও পড়ে।
৬. আর্য শোষণের প্রভাবে ধর্মীয় অধঃপতন
-আর্যদের শোষণ ও শিরকের প্রভাবে বাংলা অঞ্চলেও পৌত্তলিকতা প্রবেশ করে।
-মুশরিকদের আধিপত্য থেকে মুক্ত করতে গৌতম বুদ্ধ আসেন নৈতিকতা ও শিরকমুক্ত দাওয়াত নিয়ে।
- নীচু বর্ণ, উপজাতি ও অ-আর্য জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে।
৭. বৌদ্ধ ধর্মের বিকৃতি ও পতন
- কালের বিবর্তনে গৌতম বুদ্ধের শিক্ষাও শিরকে মশ্রিত হয়।
- ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে, গৌতম বুদ্ধ একজন নবীও হতে পারেন।
- পাল আমলে বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তার লাভ করে, কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ্যবাদের হাতে তা পরাভূত হয়।
৮. পুনরায় বাংলার মুক্তির সূচনা
- ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খলজি বাংলা অঞ্চলকে ব্রাহ্মণ্যিক নিপীড়ন থেকে মুক্ত করেন।
- মুহাম্মদ ঘুরি ভারতের অন্যত্র ইসলামি দাওয়াত ও মুক্তির অভিযান চালান।
- ভারত মুক্ত হওয়ার আগেই বাংলা মুক্ত হয়ে যায় এবং ঈমানি ধারা পুনরুজ্জীবিত হয়।
- ১২০৬ সালে কুতুবউদ্দিন আইবেক রহমতুল্লাহি আলাইহি দিল্লিকে পৃত্থিরাজ চৌহান থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে দিল্লিতে মুসলিম সালতানাত কায়েম করেন।
- সুলতান সামছুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বঙ্গভূমিকে একত্রিত করে দিল্লি সালতানাত থেকে পৃথক হয়ে বঙ্গভূমির নাম বাঙালাহ করেন।
- নিজেকে তিনি শাহে বাঙালাহ উপাধি প্রদান করেন।
পলাশী-পূর্ব বাংলা
১. বাংলার প্রাচীন অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব:
- খ্রিস্টপূর্ব ২০০ সাল থেকে খ্রিস্টাব্দ ১০০০ সাল পর্যন্তও বিশ্বের সর্বাধিক জিডিপি ছিল ভারতের (মূলত বাংলার নেতৃত্বেই)।
- ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা চলত।
- ১৭০০ সালে ভারত আবার চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বে প্রথম স্থানে ওঠে আসে। [ ড. ইরফান হাবিব, The Economic History of Medieval India (২০১১)]
- পৃথিবীর ১/৪ অংশের উৎপাদন আমরা একাই করতাম।
যার মূল্যমান আজকের প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার ছিল।
- সুলতানি আমলে চাল উৎপাদনে আমরা বিশ্বে প্রথম ছিলাম।
- সে সময় বাংলায় বার্ষিক ২.২ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন হতো।
- বিশ্বের ১২% বস্ত্র রপ্তানি করত বাংলা একাই।
- মসলিন: এটা এতটাই মূল্যবান ছিল যে, ইউরোপে এর প্রতি পিসের মূল্য ছিল ৫০০ স্বর্ণমুদ্রা।
- আমরা শুধুই কৃষি নির্ভর ছিলাম না। ৪০% মানুষ কৃষিজীবী, ৪০% শিল্প ও বাণিজ্যে করত।
২. পলাশী-পূর্ব বাংলার নৌ শক্তি:
- চট্টগ্রাম ডকইয়ার্ডে বছরে ১০০+ বড়ো বড়ো জাহাজ তৈরি হতো।
- এত বড়ো ছিল যে, অন্যান্য মানুষ এটা কল্পনাই করতে পারত না।
- বাংলার জাহাজ এতটাই সক্ষমতাপূর্ণ ছিল যে, ১৫০৫ সালে মালাক্কা জয় করে— যা পর্তুগিজরাও পারেনি। [প্রাচীন বাংলার নৌশক্তি, ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার (১৯৬৫)]।
- স্বাস্থ্যবস্থায়ও তাদের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। ১৩০০–১৭০০ সাল: ভারতে কোনো বড় প্লেগ বা মহামারীর রেকর্ড নেই।
৩. ইউরোপ ও ব্রিটেন তখন কোন অবস্থায় ছিল?
- তারা নিজেরা মারামারি করতে করতেই অস্থির। খেতে পারত না।
- বারবার মহামারী হতো। মহামারীতে পর্যুদস্ত থাকত।
- ১৩৪৭–১৩৫১ সালের ‘কালো মৃত্যু’ মহামারীতে ইউরোপের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়।
বৃটেনের অবস্থা ছিল আরও ভয়াবহ।
- তাদের জিডিপি ছিল ১%
- অধিকাংশ মানুষ ভূমিদাস ছিল।
- স্বয়ং রোমানদের চোখেও বর্বর ছিল। জুলিয়াস সিজার খ্রিস্টপূর্ব ৫৫ সালে বলেন— ব্রিটনেরা নগ্ন শরীরে যুদ্ধ করে! তাদের কোনো শহর নেই, শুধু জঙ্গল আর কাদার কুঁড়েঘর।
- রোমান ইতিহাসবিদ ট্যাসিটাস বলেছেন— “এরা সোনার চেয়ে লোহার দাম বেশি দেয়! মানে তারা সোনাও চিনে না লোহাও চিনে না।’
- যখন বাণিজ্যের জন্য আসে, তখনও (১৬৪২-১৬৫১) ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধ চলে (রাজা বনাম পার্লামেন্ট)।
- ঋণের চাপে জর্জরিত, ঋণ ছিল ৪ লক্ষ পাউন্ড।
- বাণিজ্যিক জাহাজ ছিল মাত্র ২০০ টি।
- গড় আয়ু: মাত্র ৩৫ বছর।
- দারিদ্র্য হার ৫০%+ মানুষ
- ঠিকমতদুই বেলা আহার জোগাড়েও অক্ষম ছিল।
- এতটাই অপরাধপ্রবণ ছিল যে, এত অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যেও লন্ডনে সাপ্তাহে ১০০+ প্রকাশ্য ফাঁসি দেওয়া লাগত।
- সূত্র: পিটার লাসলেট, The World We Have Lost, ১৯৬৫।
- ১৬৬৫ সালে ১ লক্ষ মানুষ মহামারিতে মৃত্যু বরণ করে।
ইয়োরোপ ও ব্রিটিশ আগমনের ধাপ ও আধিপত্য
৪. ইউরোপীয় আগমনের ক্রম:
1. পর্তুগিজরা— ধর্মান্তর ও জলদস্যুতা করত। ফলে সম্রাট শাহজাহান তাদেরকে হুগলি দুর্গ আক্রমণ করে তাড়িয়ে দেন।
2. ডাচ/ওলন্দাজরা — বাণিজ্যে আধিপত্য করত।
3. ইংরেজরা — ১৬০০ সালে মাত্র ২১৮ বণিক নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন।
- এখানে এসেও সবাই মিলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি করত।
৫. ব্রিটিশদের বাংলায় আগমন ও বাণিজ্যের অনুমতি:
- ১৬০৮: ইংরেজ বণিক উইলিয়াম হকিন্স সূরাটে প্রথম কুঠি প্রতিষ্ঠা করতে চান।
- ১৬১৩: সম্রাট জাহাঙ্গীর থেকে সুরাটে কুঠি স্থাপনের অনুমতি লাভ।
১৬৫১: সুবেদার শাহ সুজা কর্তৃক বাংলায় বানিজ্য-অনুমতি।
১৬৭২: শায়েস্তা খান কর্তৃক বিনা শুল্কে বানিজ্য-অনুমোদন।
পলাশীর পর বাংলায় অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ
৬. লুটপাটের চিত্র:
- প্রতিবছর ৩০০ কোটি পাউন্ড লুট → ৩ কোটি মানুষের উপার্জনের সমান!
- ১৮৮০-এর দশকে বার্ষিক লুটপাট → ৪৮৭৫ কোটি টাকা।
- গবেষক ও অর্থনীতিবিদ উষা পটনায়েক দেখিয়েছেন: ১৭৩ বছরে ৪৫ লক্ষ কোটি ডলার লুট করেছে ব্রিটিশরা। যা বর্তমান ব্রিটেনের জিডিপির ১৭ গুণ!
দ্বৈত শোষণ: কৃষকের কাছ থেকে জুলুমবাজী করে কর নেওয়া, আবার সেই কর দিয়েই তার পণ্য কেনা। সেই পণ্য আবার বিদেশে বিক্রি। বিক্রির মুনাফা ইংল্যান্ডে প্রেরণ। মাঝখানে বাংলার কৃষক শূন্য।
৭. শোষণের হার:
- মুঘল আমলে কর ছিল ১০–১৫%।
- কোম্পানির শাসনে ৫০-৬০% পর্যন্ত কর আরোপ হয়।
- ১৭৭০ সালে, বাংলা ১৭৭৬ সালে এক মহাদুর্ভিক্ষ হয়। এই দুর্ভিক্ষ সম্পূর্ণ ইংরেজদের সৃষ্ট।
- এটা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। কোটির কাছাকাছি মানুষ এতে মৃত্যু বরণ করে।
- ১৩০০–১৭০০ সাল পর্যন্ত যেখানে ওইরকম বড়ো কোনো মহামারীর রেকর্ড ছিল না, ইংরেজরা আসার পরে তাও নিয়ে আসে।
৮. বাংলার শিল্প ধ্বংসের পরিকল্পনা:
- ভারতীয় কাপড়ে ৭০% শুল্ক, ফলে তাঁতশিল্প ধ্বংস।
সূত্র: ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি পেপার, ভলিউম XL, ১৮৩৫
- নেভাল অ্যাক্ট ১৭৭৩: বাংলায় বড় জাহাজ নির্মাণ নিষিদ্ধ।
- ১৭৬১ সালে চট্টগ্রাম ডকইয়ার্ড ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
- ১৮০০ সালের মধ্যে জাহাজ উৎপাদন ১০-এ নেমে আসে।
⚫ পলাশীর প্রকৃত ষড়যন্ত্র ও বাংলায় মুসলিম সালতানাতের পতন
৯. প্রচলিত ভুল ধারণা:
- সবাই মীর জাফরকেই বাংলার পতনের জন্য দায়ী করে।
- সবচেয়ে বড়ো ষড়যন্ত্র যাদের ছিল, তাদের অন্যতম হলো শেঠরা।
- আসলে আগের নবাবদের পতনেও শেঠদের শক্তিশালী ষড়যন্ত্র ছিল:
১ম ষড়যন্ত্র (১৭২৭):
সরফরাজ খানকে বাদ দিয়ে শুজাউদ্দিনকে নবাব বানান।
সূত্র: রিয়াজ-উস-সালাতিন
২য় ষড়যন্ত্র (১৭৪০):
সরফরাজ খানকে “অযোগ্য” ঘোষণা।
আলীবর্দী খানকে ২ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে যুদ্ধ করান। ফলাফল— গিরিয়ার যুদ্ধে সরফরাজ নিহত।
সূত্র: সিয়ার-উল-মুতাখখিরিন, ১ম খণ্ড
৩য় ষড়যন্ত্র (১৭৫৭):
সিরাজউদ্দৌলার শুল্কনীতি ও দৃঢ় অবস্থানে ক্ষুব্ধ হয়ে:
- ক্লাইভকে ১ কোটি টাকা ঋণ।
- মীর জাফরের সাথে ইংরেজ দ্বারা ১২ দফা চুক্তি।
সিরাজের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন।
সূত্র: ক্লাইভের ডায়রি।
১০. ব্রিটিশ-পৌত্তলিক কোয়ালিশন:
“দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের সম্মতি ছাড়া ইংরেজরা এত বড় কাজ করতে পারত না।”
সূত্র: সুশীল চৌধুরী, পলাশীর অজানা কাহিনী, পৃ. ১২৩
১১. ইতিহাসে বিকৃতি/ অনিয়ন্ত্রিত ইতিহাস:
- মুসলমানরা বহিরাগত
বাস্তবতা: তাওহিদবাদী দ্রাবিড়রাই নগরসভ্যতার গোড়াপত্তন করে। বহিরাগত মুশরিক আর্যরা প্রতিষ্ঠিত সভ্যতায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
- সিরাজের চরিত্রহনন:
- ইংরেজ সৈন্যদের অন্ধকূপে গণহত্যা করেছে।
আসলে “অন্ধকূপ হত্যা” ছিল পুরোপুরি মনগড়া মিথ্যাচার।
- সিরাজকে “অত্যাচারী” বলে মিথ্যাচার।
সূত্র: ড. কালীকিঙ্কর দত্ত, The Conspiracy at Plassey, ১৯৬৫, পৃ. ৮৯
⚫ বাংলা সালতানাতের পতন কেন হয়েছিল?
১২. পূর্ববর্তী নবাবদের ইসলামি ভ্রাতৃত্ব উপেক্ষা ও মুশরিকদের প্রাধান্য
- আলীবর্দি খান অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন রায় দুর্লভকে.
- এই পৌত্তলিক রায় দুর্লভও খৃস্টান ইংরেজদের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করে পলাশী ঘটায়।
- রাজস্ব বিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন আরেক পৌত্তলিক কৃষ্ণদাসকে। যে স্বয়ং নিজেই আলীবর্দি খানের সাথে বিদ্রোহ করে মারাঠা অঞ্চলে পালিয়ে যায়। অতঃপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
১৩. সিরাজের ন্যায়বিচার সংস্কারমুখী প্রশাসনিক কার্যক্রম
- ইংরেজদের বেআইনি কর্মকাণ্ড, দুর্গ মজবুত করা, কর ফাঁকি এবং নবাবকে অবজ্ঞা করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন।
- পোর্ট উইলিয়াম দুর্গে আক্রমণ।
- দুর্নীতিবাজ রাজস্ব কর্মকর্তা কৃষ্ণদাসকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ।
⚫ ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে কী করেছিল ইংরেজরা?
- নবাবের অনুমতি ছাড়াই দুর্গ মেরামত ও শক্তিশালী করা হচ্ছিল।
- দুর্গের ভেতরে অস্ত্র মজুদ ও সৈন্য মোতায়েন করছিল তারা।
- বিভিন্ন সন্দেহভাজন, বিদ্রোহী ও অপরাধী ব্যক্তি, যেমন রাজদ্রোহী কৃষ্ণদাস, সেখানে আশ্রয় পেয়েছিল।
- এগুলো ছিল নবাবের চোখে স্পষ্ট বিদ্রোহের প্রস্তুতি।
= তাই, জুন ১৭৫৬ সালে সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা অভিযানে যান।
- পোর্ট উইলিয়াম ঘিরে ফেলেন এবং তীব্র যুদ্ধের পর তা দখল করেন।
- ইংরেজরা পালিয়ে যায়, কেবল কিছু সৈন্য ও সাধারণ মানুষ দুর্গে থেকে যায়।
অতঃপর, পরের বছর ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আমবাগানে ইংরেজদের সাথে নবাবের যুদ্ধ হয়। এবং নবাব হেরে যান। হেরে যায় বাংলাসহ পুরো উপমহাদেশ। বন্দী হয় ২০০ বছরের পরাধীনতায়। পরিণত হয়ে সোনার বাংলা শ্মশানে।

Comments
Post a Comment