নারী কার্ডের নাটক ও সমাজে জেন্ডার ভিক্টিমহুডের রাজনীতি
আমাদের সমাজে এক অদ্ভুত কৌশল বহুদিন ধরে চালু আছে— নাম তার নারী কার্ড। কোনো নারীর বিরুদ্ধে সামান্য সমালোচনা কিংবা প্রশ্ন তুললেই লাফিয়ে ওঠেই বলে দেওয়া হয়— নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছে, নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।
মানে নারীর ক্ষেত্রে যেকোনো সমালোচনাই
সরাসরি নারী হেনস্তা বা নারী বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। অথচ একই সমালোচনা কি পুরুষের ক্ষেত্রে এত দ্রুত হেনস্তার তকমা পায়?
অদ্ভুত বিষয় হলো— “হেন করা”, “তেন করা”, কিংবা “হেনস্তা করা”— এসব যেন কেবল নারীর ওপরই প্রয়োগযোগ্য শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ সমাজের প্রতিটি স্তরে— যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রাজনীতি, অফিস থেকে আদালত— সর্বত্র সবচেয়ে বেশি হেনস্তা ও দুঃসহ পরিস্থিতির শিকার হয় কেবল পুরুষেরাই।
দুনিয়া ঘুরে দেখা লাগবে না,
বাংলাদেশের ইতিহাসও লাগবে না, আপনার আশেপাশেই এর অজস্র প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। খেয়াল করে দেখুন:
ক্রসফায়ার— পুরুষ।
ফাঁসি— পুরুষ।
বন্দুকযুদ্ধের নামে খুন— পুরুষ।
সন্ত্রাস দমনের নামে হত্যা— পুরুষ।
রাজপথে লাশ হয়ে পড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক সংগ্রামী— পুরুষ।
এত কিছুর পরেও কিন্তু কেউ বলে না, “পুরুষ হেনস্তা হচ্ছে”। অথচ কোনো নারীর দিকে সামান্য বিদ্রূপের আঙুল ওঠলেই সেটি বিশাল সামাজিক ইস্যু হয়ে যায়।
কেন এমন হয়?
কারণ সমাজে ভিক্টিম হওয়ার ভান ধরা মানেই একধরনের মোরাল কারেন্সি এচিভ করা যায়। ভিক্টিম কার্ড খেলতে পারলেই মেলে সহানুভূতি, মেলে সামাজিক প্রাধান্য।
আর এ খেলার সবচেয়ে সহজ অস্ত্র হলো নারী পরিচয়। তাই, আপনি যদি কারও যৌক্তিক সমালোচনাও করেন, তখনও কিন্তু প্রতিটি সমালোচনার বিপরীতেই উচ্চারিত হয় গতানুগতিক সেই চিরাচরিত একই বুলি— আমাকে নারী বলে আঘাত করা হচ্ছে। নারী হেনস্তা করা হচ্ছে।
বাম নেত্রী উমামা ফাতেমার দিকেই তাকান, হুজুরদের হারামজাদা বলে গালি দেওয়ার পরেও কি তাকে পুরুষ বিদ্বষী কিংবা হুজুর হেনস্তাকারী বলা হয়েছে? হয়নি। মনে হয়, পুরুষদের হেনস্তা করা হেনস্তার মধ্যেই পড়ে না। এটা মনে চাইলেই করা যায় কিংবা করা উচিৎ। আর সেই পুরুষ যদি হুজুর হয়, তাহলে তো তাকে হেনস্তা করা বরং পুণ্যময় কাজ!
যাই হোক, যারা কিছু থেকে কিছু হলেই এভাবে জেন্ডার ভিক্টিম রোল প্লে করে, তাদের ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়—
যারা চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিক শক্তিই রাখে না, তারা প্রতিযোগিতার ময়দানে নামে কেন? সমাজ তো কোমল কাচঘরের খেলা নয়; এখানে টিকে থাকতে হলে সমালোচনা, বিরোধিতা, প্রতিবাদ— সবকিছুর মুখোমুখি হতেই হয় এবং হবে। এখন প্রতিটি যুক্তিসঙ্গত সমালোচনাকেই “নারী বিদ্বেষ” বানিয়ে দেওয়া কি সত্যিই নারীর সম্মান রক্ষা করে, না কি উল্টো নারীর সামর্থ্যকেই খাটো করে দেয়?
সত্য কথা হলো— সমালোচনা যদি সঠিক হয়, তবে তা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবারই গ্রহণ করতে হবে বা করা উচিত। অন্যথায়, এই ভিক্টিমহুডের রাজনীতি— যার মূল হাতিয়ার নারী কার্ড— একদিন মিথ্যার কার্ডে পরিণত হবে, আর প্রকৃত অন্যায়ের প্রতিবাদ, প্রকৃত ভিক্টিমদের কান্না ডুবে যাবে অভিযোগের ধোঁয়াশায়।
~রেদওয়ান রাওয়াহা
২১.০৮.২৫

Comments
Post a Comment