সভ্যতা ও নারী
একটি সমাজকে ভেতর থেকে পরিবর্তন করতে হলে প্রয়োজন মেটিকুলাসলি প্ল্যানড সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষের চিন্তা-চেতনা, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধকে সুপরিকল্পিতভাবে নতুন ছাঁচে ঢেলে সাজাবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধক যা, তা হলো পরিবার, আর পরিবারের প্রাণকেন্দ্র হলো নারী।
উপনিবেশবাদীরা এটি নিখুঁতভাবে বুঝেছিল। তাই তারা নারীকে তাদের সমাজ-রূপান্তর প্রজেক্টের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।
এজন্য ‘‘নারী অধিকার’’, ‘‘নারী স্বাধীনতা’’ কিংবা ‘‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’’ ‘‘সফল কিংবা সাহসী নারী’’, ইত্যাদির মতো কিছু ন্যারেটিভ, কিছু মুখরোচক ও ঝলমলে স্লোগানকে সামনে নিয়ে আসে।
এই স্লোগানগুলোকে তারা সামনে নিয়ে এলেও বাস্তবে এগুলো হলো মরীচিকা; ভেতরে লুকানো আছে পরিবারকে দুর্বল করার সাবটল স্ট্র্যাটেজি।
মূলত পরিবারই সমাজের মৌলিক ভিত্তি। এটি শুধু সামাজিক প্রতিষ্ঠানই নয়, বরং মানুষের চরিত্র ও মূল্যবোধ গঠনের প্রথম পাঠশালা। সভ্যতার প্রধান এবং প্রথম বুনিয়াদ। পরিবারে একজন মায়ের মাধ্যমে সন্তানের অন্তরে প্রবেশ করে বিশ্বাস, মূল্যবোধ, নীতি ও সংস্কৃতি।
তাই নারীকে নিয়ন্ত্রণ করা মানে পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ, আর পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মন ও মানসকে দখল করা।
উপনিবেশবাদীরা জানত— নারীকে তাদের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী গড়ে তুললে প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই ছায়াতেই বেড়ে উঠবে।
এভাবেই ‘‘নারী অধিকার’’ ও ‘‘নারী স্বাধীনতা’’র নামে নারীর দায়িত্ববোধকে অন্য দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, যাতে তিনি আর পরিবারকেন্দ্রিক না থেকে নতুন সংস্কৃতির বাহক হয়ে ওঠেন।
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে গভীর রূপান্তরের প্রয়াস তাই নারীরকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত।
কারণ, নারী পরিবারকে রক্ষা করেন, আর পরিবারই হলো সমাজের আসল দুর্গ। যে সভ্যতা এই দুর্গ দখল করতে পারে, সে-ই সমাজ-সভ্যতার নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।
পাশ্চাত্য সভ্যতাও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং এ ক্ষেত্রে তারা দারুণভাবে সফল হয়েছে— তারা নারীকে নিজেদের পরিকল্পনার কেন্দ্রে এনে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে।
তবে, সবাইকে তো পারেনি। পারেনি জন্যই আজও আমাদের অধিকাংশ মুসলিম দেশে কিছুটা হলেও ইসলামি সমাজের টুকটাক আবহ আছে। মিটমিটি করে হলেও প্রজন্মের মধ্যে দ্বীনের আলো জ্বলে আছে।
~রেদওয়ান রাওয়াহা

Comments
Post a Comment