বেগম রোকেয়াপূর্ব ভারতে নারী শিক্ষা
কথিত নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ সালে ব্রিটিশ বাংলায়। তিনি নারী শিক্ষা নিয়ে বেশকিছু কাজ করেছেন এটা সত্য কিন্তু সমস্যা হলো জনমানসে একটা বয়ান ছড়ানো হয়েছে যে বেগম রোকেয়ার আগে কেউই মুসলিম নারীদের শিক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয়নি, তিনি না থাকলে মুসলিম নারীরা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতো, তাদেরকে কেউ উদ্ধার করার ছিলোনা তিনিই এসে নাকি উদ্ধার করেন। নারীশিক্ষার মশাল জ্বালান।
মোটাদাগে তিনটে বয়ান পাওয়া যায়—
১. ধর্মান্ধতার কারণে মুসলমানরা তাদের নারীদের পড়াশোনা করতে দেয়নি।
২. মুসলিমরা কেউ এগিয়ে আসেনি বরং নারীশিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
৩.বেগম রোকেয়া এসে সকলকে উদ্ধার করেছে তাঁর আগে কেউই এবিষয়ে ভাবেননি।
১| ধর্মান্ধতার কারণে মুসলমানরা তাদের নারীদের পড়াশোনা করতে দেয়নি:
 ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄
এটা চূড়ান্ত একটা অসত্য কথা। ভারতবর্ষে নাহয় রোকেয়া এসেছেন তাই মুসলিম নারীরা শিক্ষিত হতে পেরেছে বলে ধরে নিলাম কিন্তু আধুনিক বিশ্বের দিকে তাকালে আজ আমরা দেখতে পাই, ইসলামি বা মুসলিম বহুল রাষ্ট্রগুলোর নারী শিক্ষার হার ৯০% থেকে ১০০%-এর মধ্যে। সেখানে তো কোন রোকেয়া আসেননি। তাহলে কীভাবে এটা হলো! কারণ এগুলো ইসলামের মধ্যেই অন্তর্নিহিত। ইসলামে নারী-পুরুষের শিক্ষা অর্জন আবশ্যিক।
আসল কথা হলো এই সমস্যাটা পুরোপুরি ভারতীয় সমস্যা। এবিষয়ে ১৮৩৬ সালে উইলিয়াম অ্যাডাম বলেন—“হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই নারীশিক্ষার প্রতি কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিলো। উভয় সম্প্রদায়ই আশঙ্কা করতো যে মেয়েরা লিখতে পড়তে শিখলে বিয়ের পর বিধবা হয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ মনে করতো যে মেয়েরা বিদ্যাশিক্ষা করলে পুরুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে। এই আশঙ্কায় এদেশীয় লোকেরা নারীশিক্ষা প্রসারে কোন পদক্ষেপ তো নেননি উপরন্তু যেকোন রকমের মৌলিক জ্ঞান অর্জনে মেয়েদের বাধা দান করেন।”¹
উইলিয়াম অ্যাডামের কথানুযায়ী সমস্যাটা কিন্তু মোটেও ধর্মীয় না, এটা পুরোপুরি কুসংস্কার সম্পর্কিত।
বেগম রোকেয়ার ১০ বছর আগে জন্ম নেওয়া নারী শিক্ষাকর্মী খায়রুন্নেসা (১৮৭০-১৯১২) এবিষয়ে বলেন—'.. উপযুক্ত স্থানে মুসলমান মেয়েদের উপযোগী বিদ্যালয়ের অভাবই তাদের শিক্ষা বিস্তার না হওয়ার প্রথম ও প্রধান কারণ। দ্বিতীয় কারণ হলো বাঙালি মুসলমান সমাজে সীমাহীন দারিদ্র্যতা।'
এদিকে ১৮৯৬ সালে কলকাতার প্রভাবশালী ডাক্তার জহিরুদ্দিন আহমদের কন্যা বেথুন কলেজে ভর্তি হতে পারেনি। কারণ সেখানে মুসলিম মেয়েদের প্রবেশাধিকার ছিলনা। প্রভাবশালী ডাক্তারের কন্যা যদি ভর্তি হতে না পারে তাহলে সাধারণ মানুষের কথা তো বাদই দিলাম।
আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, সরকারের পক্ষপাতিত্ব ও উদাসীনতা। ততকালীন সময়ে আব্দুল করিম ও স্যার আব্দুর রহিম প্রমূখ পর্দানশীন নারীদের জন্য পৃথক স্কুল করার দাবী জানিয়েছিলেন। ১৯২৭-২৮ সালের বাজেটে ব্রিটিশ সরকার কলকাতার পর্দানশীন নারীদের জন্য ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ না করায় নওয়াব মোশারফ হোসেন বাজেটের বিরোধিতাও করেন।²
সরকারের প্রতি মোহাম্মদ সিদ্দিকীর অভিযোগ ছিলো, ১৯২৭-২৮ সালে মুসলিম নারীদের শিক্ষার জন্য সরকার কেবলমাত্র ২০ হাজার টাকা ও হিন্দু নারীদের শিক্ষার জন্য ৭ লক্ষ টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। নুর মোহাম্মদ ইউসুফজাই বলেন, কলকাতার হিন্দু ছাত্রীদের জন্য গভর্নমেন্ট ভার্নাকুলার ট্রেনিং স্কুলে ২৬টি বৃত্তির ব্যবস্থা ছিলো সেখানে মুসলিম ফিমেল জুনিয়র ভার্নাকুলার ট্রেনিং স্কুলে ১৫টি বৃত্তির ব্যবস্থা ছিলো।³
যাইহোক ভারতে মালাবার অঞ্চলে আরব বণিকদের আগমন ঘটে এবং সেখানে ইসলামী সমাজ গড়ে ওঠে। মালাবারের সুলতান গিয়াসুদ্দিন তাঁর রাজ্যের শিক্ষালয়, বাণিজ্যক্ষেত্র, অফিস, রাজদরবার সবই নারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তিনি মোটামুটি ১৫ হাজার মুসলিম নারীকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ করেন। গুজরাটের রাজা মহম্মদ শাহ দায়িত্বপূর্ণ পদে নারীদের নিয়োগ করতে নির্দেশ দেন। প্রায় সব দপ্তরেই তিনি মহিলাকর্মী নিয়োগ করেন। তাঁর শাসনকালে তিনি প্রায় ১২ হাজার মহিলাকে করসংগ্রাহক, সাহিত্য ও বিজ্ঞান, হস্তশিল্প, সঙ্গীত বিভাগ ইত্যাদিতে নিয়োগ করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। এদের অনেককেই তিনি পুলিশবাহিনী, বিচারক, হিসাবরক্ষক ও কোরান শিক্ষাদান ইত্যাদি কাজে নিয়োগ করেন।
সুলতানী ও মুঘল যুগেও বহু বিদুষী নারীর সন্ধান পাওয়া যায়। এঁরা হলেন রাজিয়া, চাঁদবিবি, নূরজাহান, জাহানারা, জেবুন্নেসা প্রভৃতি। রাজিয়া ও চাঁদবিবি যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য পরিচালনাও করতেন।
হুমায়ুনের ভগ্নী গুলবদন বেগম ছিলেন প্রতিভাময়ী লেখিকা। তিনি তাঁর ভ্রাতা হুমায়ুনের এক অপূর্ব জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন। শাহজাহান কন্যা জাহানারাও ছিলেন বিখ্যাত কবি।⁴
ফেরিস্তার বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, মালব অঞ্চলে মুসলিম শিক্ষিকারা মহিলাদের শিক্ষা দিতেন, যাদের তিনি উস্তানি বলে অভিহিত করেছেন। বদাউনি ও আবুল ফজলের রচনায় উল্লেখ আছে যে, কেবলমাত্র শাহজাদীরাই কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতেন না, সমাজের সব শ্রেণীর বা বিভাগের মহিলারাও কবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। বদাউনি নেহানি নামে এরকম একজন মহিলা কবির উল্লেখ করেছেন।⁵
শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেন,—“পঞ্চদশ শতাব্দীর ইতিহাসেও স্ত্রী শিক্ষার নিদর্শন বিদ্যমান।ফিরিস্তা লিখিয়াছেন মালনাধিপতি সুলতান গিয়াসউদ্দিনের হারেমে পঞ্চদশ সহস্র মহিলা ছিলেন। তাহাদের মধ্যে বহু শিক্ষয়িত্রী, প্রার্থনা পাঠকারিনী প্রভৃতিরও অসদ্ভাব ছিলোনা।”⁶ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় মানুচীর কিছু বিবরণ এনে মন্তব্য করেছেন যে,—“মানুষীর এইসকল উক্তি হইতে স্পষ্টই অনুমিত হয় যে, রাজপ্রাসাদ অভিলাষী, সাধারণ মধ্যবিত্ত এমনকি নির্ধন পরিবারেও স্ত্রী শিক্ষার প্রচলন ছিলো। সম্ভ্রান্ত বংশের তো কথায় নাই।”⁷
ভারতের মুসলিম আমলে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপক প্রচলন ছিল। কারণ মুসলমানরা সন্তানদেরকে শিক্ষা দেওয়া ধর্মীয় কর্তব্য বলে গণ্য করতেন। প্রতিটি মুসলমান এলাকায় প্রত্যেক মসজিদ ও ইমামবাড়ার সঙ্গে একটি করে মক্তব ছিল। ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দরাম চণ্ডীকাব্যে বলেন,—"মক্তবসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এতে সমস্ত মুসলমান ছেলেমেয়েরা উপস্থিত হয়। তাদের ধর্মপ্রাণ মৌলভিরা শিক্ষাদান করেন।⁸ষোড়শ শতকের কবি বাহরমের বর্ণনা অনুসারে, বালক-বালিকারা উভয়ে একই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শিখে। কবি লিখেছেন যে, বহু বালক-বালিকা পাঠশালায় অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে।⁹ এ থেকে বুঝা যায় যে, বালক-বালিকারা একত্রে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করত।
১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার অবস্থা পর্যালোচনা করতে গিয়ে, শিক্ষা কমিশনের বাংলা প্রাদেশিক কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেন—"এরকম মসজিদ কিংবা ইমামবাড়া ছিল না যেখানে আরবি ও ফার্সির অধ্যাপকের নিয়োগ করা হতো না। যেখানেই মুসলমানরা সংখ্যায় বেশি সেখানেই পাঠশালার অনুকরণে মক্তবগুলো গড়ে উঠেছিল।¹⁰
১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষা-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উইলিয়াম অ্যাডাম মুসলিম আমলের প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা উল্লেখ করেন। তিনি এতে বলেন যে, বাংলা ও বিহারে একলক্ষ প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল।
“There were more than 100,000 of these schools in Bengal and Behar, and that with a population of 40 million, there was a village school for every 400 people.”¹¹ এইসব বিদ্যালয়ে সর্বস্তরের ছেলেমেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতো। আর এই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পদার্থবিদ্যা ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানও শিক্ষা দেওয়া হতো। ক্রফোর্ডের বিবরণে জানা যায়।¹²
এছাড়াও শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান বাঙালি সুলতানগণ, সুবাদার, নবাব এবং অভিজাত মহল তাদের কন্যাদের শিক্ষার জন্য গৃহ-শিক্ষয়িত্রী রাখতেন। উইলিয়াম অ্যাডামও এটা লক্ষ্য করেছেন। উইলিয়াম অ্যাডামের মতে, প্রতিবেশী গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা সে যুগের অবস্থাপন্ন মুসলমানগণ কর্তৃক নিযুক্ত গৃহ-শিক্ষকদের নিকট শিক্ষালাভ করতে পারত।¹³
এরপর দেখি ঔপনিবেশিক যুগে শেখ আব্দুল গফুর জালালাবাদী আল-ইসলাম পত্রিকায় লিখেছিলেন:
❝মোছলমান শাস্ত্রে স্ত্রী এবং পুরুষ উভয়ের প্রতি বিদ্যাশিক্ষার কঠোর আদেশ থাকিলেও সমাজ অজ্ঞানতাবশতঃ সুদীর্ঘকাল হইতে স্ত্রীশিক্ষায় ঔদাসীন্য প্রদর্শন করিয়া আসিতেছে। ইহার ফলে অশিক্ষিত ও কুসংস্করাপন্না জাতীয় গর্ভ হইতে নানা কুসংস্কার জড়িত সন্তানই জন্মগ্রহণ করিতেছে। সমগ্র জগতের ইতিহাস অভ্রান্ত ভাষায় মুক্ত কণ্ঠে, জলদ নির্ঘোষে প্রচার করিতেছে যে স্ত্রীজাতির শিক্ষা ও উন্নতি ব্যতীত কোন সমাজেই শিক্ষা ও সভ্যতার উজ্জ্বল আলোকরশ্মি বিকীর্ণ হইতে পারে না।❞¹⁴
২| মুসলিমরা কেউ এগিয়ে আসেনি বরং নারীশিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করেছে:
 ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄
এটাও অসত্য কথন, এবিষয়ে কয়েকটা ঘটনার উল্লেখ করলেই বোঝা যাবে, যেমন মিস ম্যারি অ্যান কুক নামক এক বিদেশিনী ১৮২৫ সালের সময়কালীন নারী শিক্ষা নিয়ে কাজ করছিলেন। তারই উদ্যোগে মুসলমান প্রধান এন্টালি ও জানবাজার অঞ্চলে এই কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হল এইসব অঞ্চলের মুসলমানরাই উৎসাহ নিয়ে বালিকা বিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিলেন।¹⁵
লেডিজ অ্যাসোসিয়েসনের উদ্যোগে ১৮২৭ সালে কলকাতায় প্রায় ১২টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ঐ বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ১৬০ জন ছাত্রী পড়াশুনা করত। এদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান। ১৮৪৪ সালে মির্জাপুরে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এতে প্রায় ৭০-৮০ জনের মতো ছাত্রী পড়াশুনা করত যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত।¹⁶
বিনয় ঘোষ তাঁর 'বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ' গ্রন্থে লিখেছেন—'১৮২২ সালে মিস কুক যখন কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছিলেন তখন শ্যামবাজার অঞ্চলের একজন মুসলিম মহিলা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে তাঁর কাজে সাহায্য করেছিলেন। ঐ মুসলমান মহিলা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিদ্যালয়ের জন্য ছাত্রী সংগ্রহ করেছিলেন এবং নিজের পাড়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর উৎসাহের জন্যই বিদ্যালয়টির পরে উন্নতি হয়েছিল এবং ছাত্রীসংখ্যাও বেড়েছিল। তিনি প্রায় ১৮টি ছাত্রী নিয়ে একটি বিদ্যালয় খোলেন। তাঁর অসীম উৎসাহের জন্য ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে পরে ৪৫ হয়। ১৮২২ সালে মির্জাপুর, এন্টালি, জানবাজার প্রভৃতি অঞ্চলের স্থানীয় মুসলমানরা দেখা যায় মিস কুকের স্ত্রীশিক্ষার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং ঐ সব অঞ্চলে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিলেন।'¹⁷
উপরোক্ত তিনটে বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে যে, ততকালীন মুসলমানরা নারীশিক্ষার ইস্যুতে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, আর এগুলো সবই ঘটছে ১৮২২ থেকে ১৮২৭-এর মধ্যে অর্থাৎ রোকেয়ার জন্মের প্রায় ৬০ বছর আগে। মুসলমানরা যদি সেভাবে বাধাপ্রদানই করতো তাহলে স্কুলগুলোতে এত মুসলিম ছাত্রী আসতো কোত্থেকে?
৩| বেগম রোকেয়া এসে সকলকে উদ্ধার করেছে তাঁর আগে কেউই এবিষয়ে ভাবেননি:
 ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄
১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত 'ঢাকা মুসলমান সুহৃদ সম্মিলনী' অন্তঃপুরের মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। পূর্ববঙ্গের আব্দুল মজিদ, আব্দুল আজিজ, ফজলুল করিম, বজলুর রহমান এবং হেমাউদ্দিন প্রমুখের উদ্যোগে এই সংস্থা স্থাপিত হয়। অন্তঃপুর শিক্ষা প্রণালীতে মুসলিম মেয়েদের মধ্যে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা এই সংগঠন করে। কলকাতা, বরিশাল, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম, ত্রিপুরা, সিলেট, ময়মনসিংহ, মেদিনীপুর প্রভৃতি স্থানে মেয়েদের পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়।¹⁸
'ঢাকা মুসলমান সুহৃদ সম্মিলনী'র বার্ষিক রিপোর্ট থেকে জানা যায় কঠোর পর্দার মধ্যে রেখেই মুসলিম মেয়েদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হত। প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত নির্ধারিত পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তকের ভিত্তিতে ছাত্রীরা পরীক্ষার জন্য ভৈরি হত, পরীক্ষক গিয়ে স্থানীয় অভিভাবকদের সহায়তায় পরীক্ষা নিতেন। বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষাতেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। যারা পরীক্ষায় সফল হত, তাদের সম্মিলনীর পক্ষ থেকে পরীক্ষা পাসের সার্টিফিকেট ও পারিতোষিক দেওয়া হত। কোনো বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত না হয়ে স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষাপদ্ধতি ছিল এটি। প্রথম বছরে সম্মিলনীর তত্ত্বাবধানে মোট ৩৭ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছিল, ১৪ জন উর্দুভাষায় ও ২৩ জন বাংলাভাষায়। তন্মধ্যে উর্দু বিভাগে ১২ জন এবং বাংলা বিভাগে ২২ জন উত্তীর্ণ হয়েছিল।
নওশের আলি খান ইউসুফজাই বঙ্গীয় মুসলমন পুস্তকে (১৮৮১) “ঢাকা মুসলমান সুহৃদ সম্মিলনী”র নারীশিক্ষা প্রসারের সফলতার কথা উল্লেখ করেছেন।¹⁹
১৮৮৭ সাল পর্যন্ত এই সম্মিলনী সক্রিয় ছিল এবং ১৯০৫ সালের পর এটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই সমিতির ব্যবস্থাপনায় যে পরীক্ষা হয় তাতে বহু মুসলিম ছাত্রী সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়।²⁰
বাংলায় অন্তঃপুরে স্ত্রীশিক্ষণ প্রসারের জন্য হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠে 'শ্রীহট্ট সম্মিলনী'(১৮৭৬)। কলকাতায় বসবাসকারী শ্রীহট্টবাসী যুবকদের মধ্যে ঐক্য ও প্রীতিবন্ধনের উদ্দেশ্যে কলকাতায় এই সম্মিলনী স্থাপিত হয়। এই সমিতির কর্মধারা শুধুমাত্র কলকাতায় বসবাসকারী শ্রীহট্ট যুবকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, কালক্রমে সমগ্র সিলেটবাসীর মঙ্গল ও স্ত্রীলোকদের উন্নতি সাধনের জন্য এর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের স্ত্রীলোকদের শিক্ষার জন্য সম্মিলনীর প্রচেষ্টায় সমগ্র সিলেট শহরে কয়েকটি বিদ্যালয় স্থালিত হয়। কেবলমাত্র বিদ্যালয়ের ছাত্রীরাই সেখানে পরীক্ষা দিত না, অন্তঃপুরের মহিলারাও পরীক্ষা দিতে পারতেন। ঐ সব বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণী ছিল; আবার উচ্চ, মধ্য ও নিম্নশ্রেণীর আরও তিনটি বিভাগ ছিল। 'শ্রীহট্ট সম্মিলনী' আয়োজিত পরীক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দুই-ই দিতে হত। ছাত্রীরা বাংলা অথবা উর্দু যেকোনো ভাষাতেই পরীক্ষা দিতে পারত। ১৮৮৩ সালে শ্রীহট্ট সম্মিলনী আয়োজিত পরীক্ষায় ১০ জন মুসলিম ছাত্রী পাস করে।²¹
'শ্রীহট্ট সম্মিলনী'র প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ১৮৮৪ সালের পরীক্ষায় ৩৮৩ জন ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়। এরমধ্যে মুসলমান ছাত্রী ছিলেন ২১জন।
১৮৮৯ সালে এই সমিতির তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা দেয় ৬১১ জন, এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ৫২৮ জন। পাসের তালিকায় ৭৪ জন মুসলিম ছাত্রীর নাম পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে মুসলিম ছাত্রীর সংখ্যা ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পায়। সম্মিলনীর নিয়মানুযায়ী ৪ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৩৫ বছর বয়স্ক মহিলা পর্যন্ত পরীক্ষায় বসতে পারত। কোনো কোনো বছর ৪৫ বছর বয়স্ক মহিলারাও পরীক্ষায় বসত। স্কুল ইনসপেক্টর মৌলভী মোহাম্মাদ ওয়াদিল এবং মৌলভী গোলাম গফুরের তত্ত্বাবধানে সম্মিলনী নির্ধারিত সিলেবাসে যাত্রীরা পরীক্ষা দিত। উৎসাহ দানের জন্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রীদের পদকসহ প্রশংসাপত্র দেওয়া হত। ১৮৮৯ সালে সম্মিলনীর সদস্য ও হাইকোর্টের আইনজীবী মৌলভী সিরাজুল ইসলাম খান বাহাদুর মুসলিম মহিলাদের উৎসাহিত করার জন্য ১০ টাকা মূল্যের পুরস্কার ঘোষণা করেন।²²
ত্রিপুরাতে ১২৭৮ বঙ্গাব্দে স্ত্রীশিক্ষা প্রসারের জন্য গঠিত হয় 'ত্রিপুরা অন্তঃপুর স্ত্রীশিক্ষাসভা'। মুসলিম মহিলাদের এই সভা আয়োজিত পরীক্ষায় যোগদান করতে দেখা যায়। এখান থেকে অনেক মুসলিম মহিলা পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। ১২৯০ বঙ্গাব্দে এই সভা যে পরীক্ষার আয়োজন করে তাতে মোট ১১২ জন ছাত্রী পরীক্ষা দেয় এবং ৯৮ জন উত্তীর্ণ হয়। পরীক্ষার্থিনীদের মধ্যে ৮ জন ছিলেন মুসলমান। সামসুন্নাহার, ফতেমা খাতুন, বলকিসান বানু এবং গোলাপজান বানু চতুর্থ শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন; আলতা বানু পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং সহর বানু, ইয়ার বানু ও রাহাতারনেসা বানু ষষ্ঠ শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।²³
দুই নারী শিক্ষাকর্মী:
 ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄
লেখিকা খায়রুন্নেসা (১৮৭০-১৯১২) ছিলেন বেগম রোকেয়ার আগের ( দশ বছর আগের) একজন শিক্ষাকর্মী। তিনি ছিলেন সিরাজগঞ্জের হোসেনপুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। বিদ্যালয় পরিচালনার করা অর্থ তিনি সংগ্রহ করতেন মুসলমানদের থেকে। তিনি একটা গ্রন্থও রচনা করেছিলেন, নাম ছিলো 'পতিভক্তি', অর্থাৎ তিনি তথাকথিত প্রগতিশীল ছিলেন না। তিনি কিন্তু নারীদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য নৈশ বিদ্যালয় চালাতেন।
তার মত ছিলো, নারীদের জন্য উপযুক্ত স্থানে স্কুল স্থাপন করতে হবে ও সেই স্কুলগুলো এমন স্থানে ও এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যে যেন তাতে নারীদের পর্দার সমস্যা না হয় এবং কোন পুরুষকেই যেন স্কুলসীমাতে ঢুকতে না দেওয়া হয়।²⁴
নবাব ফয়জুন্নেসা ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে 'কুমিল্লা বালিকা বিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এটা কতজন জানে? এর ৩৮ বছর পর বেগম রোকেয়া ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে 'শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন। এই নবাব ফয়জুন্নেসা নারীদের উচ্চশিক্ষিত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতেন আর সমস্ত খরচা বহন করা হতো তাঁর জমিদারির আয় থেকে।²⁵
এই নবাব ফয়জুন্নেসা কিন্তু পর্দানশীন ও খুবই শিক্ষিত মহিলা ছিলেন, তিনি তাঁর জমিদারিতে তিন ধরনের শিক্ষা চালু করেছিলেন—
১. প্রাথমিক শিক্ষা, ২. নারীপুরুষ সবার জন্য ইংরেজি শিক্ষা, ৩. ধর্মীয় শিক্ষা। তিনি ধর্মীয় শিক্ষার জন্য 'ফয়েজিয়া মাদ্রাসা' নামে একটি অবৈতনিক মাদ্রাসাও নির্মাণ করেন। এছাড়াও তিনি মক্কা শরীফের 'মাদ্রাসা-ই-সওলাতিয়া' ও 'ফোরকানিয়া' মাদ্রাসার ব্যয়বহন করতেন।²⁶
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সহজেই বোঝা যায় ভারতের নারীদের শিক্ষা জন্য মোটেও ধর্মান্ধতা দায়ী নয়, এর জন্য দায়ী সামাজিক কাঠামো, কুসংস্কার ও অজ্ঞতা কারণ ধর্মে তো শিক্ষাকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সে যুগে মুসলমান সমাজ যথেষ্ট এগিয়ে এসেছিলো, সাহায্য করেছিলো নারী শিক্ষার বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে। তৃতীয়ত বেগম রোকেয়ার আগে মুসলিম সমাজের বহুজন এই বিষয়ে কাজ করেছেন যথেষ্ট পরিমাণে। মুসলিম সমাজের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেই নারীদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করেছেন। বেগম রোকেয়া এই ধারাবাহিকতারই একজন নারী শিক্ষাকর্মী, তিনি মোটেও শূণ্য থেকে শুরু করেননি। আগেই প্রেক্ষাপট তৈরি করা ছিলো। মাঠ প্রস্তুত ছিলো।
মোটকথা হলো শিক্ষা নিয়ে মুসলমানদের একটা ধারা সবসময়ই বজায় ছিলো স্থানকালপাত্র নির্বিশেষে। আর বর্তমানের শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে ততকালীন শিক্ষা ব্যবস্থাকে মাপলে চলবে না।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পলাশীর বিপর্যয়ের পর শাসনতন্ত্র চলে যায় ইংরেজদের হাতে, এতে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার কাঠামোও আঘাতপ্রাপ্ত হয় কারণ মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থাকে বাতিল করে বিদেশি ইংরেজি শিক্ষাকে চাপিয়ে দেওয়া হয় ফলে একটা গোটা জাতি মূর্খে পরিণত হয় নিমেষেই। তো এর প্রভাব জনজীবনসহ শিক্ষা ব্যবস্থাতেও পড়বে স্বাভাবিকভাবেই।
 ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄
রেফারেন্স:
1| Nurullah, Syed & Naik, J.P. (1943). History of Education in India During the British Period. Bombay: Macmillan. P. 21.
2| Editorial Comment, The Mussalman,dt, 9.6.1928
3| Editorial in The Mussalman ( Weekly Edition), dt 11.1.1929
4| শ্রীযুক্তব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুঘল যুগে স্ত্রীশিক্ষা।
5| শিরিন মুসভি, মুঘল ভারতে নারী শিক্ষা, ইতিহাসে নারী: শিক্ষা, পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ, বেথুন কলেজ, কলকাতা প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স ২০০১,পৃ ৩৭-৩৯।
6| শ্রীযুক্তব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুঘল যুগে স্ত্রীশিক্ষা, পৃ ৪০।
7| শ্রীযুক্তব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুঘল যুগে স্ত্রীশিক্ষা, পৃ ৪৩
8|মুকুন্দরাম,চণ্ডীকাব্য, পৃ ৩৪৪, বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, ড. এম এ রহিম থেকে উদ্ধৃত।
9| বাহরাম, লাইলি মজনু, পৃ ১৯,ড. এম এ রহিম থেকে উদ্ধৃত।
10| Mullick, A.R. British Policy and Muslims of Bengal, p. 149.
11| Adam, William (1835). First Report on the State of Education in Bengal. In: Adam’s Reports on Vernacular Education in Bengal and Behar.
12| Dutta, K.K. History of Bengal Subeh, p. 238.
13| Mullick, A.R. British Policy and Muslims of Bengal, p. 151
14| শেখ আবদুল গফুর জালালাবাদী, 'শিক্ষা বিস্তারের উপায়', আল ইসলাম, শ্রাবণ ১৩২৬.
15| বিনয় ঘোষ, বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ, পৃ ২১৩.
16| যোগেশচন্দ্র বাগল, বাংলার স্ত্রীশিক্ষা ১৮০০-১৮৫৬, বিশ্বভারতী ১৩৫৭, পৃ ৫।
17| বিনয় ঘোষ, বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ, পৃ ২১৩।
18| মুনতাসীর মামুন, ঊনিশ শতকের পূর্ব বঙ্গের সভা সমিতি, ১৯৮৩, পৃ ১০১।
19| নৌসের আলি খান ইউসুফজাই, বঙ্গীয় মুসলমান, পৃ ৪৩-৪৪।
20| বিনয়ভূষণ রায়, অন্তঃপুরে স্ত্রী শিক্ষা, পৃ ৫৬-৫৭।
21| বিনয়ভূষণ রায়, অন্তঃপুরে স্ত্রী শিক্ষা, পৃ ৬৩-৬৪
22| সুন্দরীমোহন দাস, শ্রীহট্ট সম্মিলনীর জন্মকথা, শ্রীহট্ট, মায়া ভট্টাচার্য, “শতাব্দী পূর্বে মুসলিম অন্তঃপুরবাসিনীদের বিদ্যাচর্চা”, বাংলা একাডেমি পত্রিকা, ঢাকা, ১৩৮৮, পৃ ৬৫-৫৭।
23| বিনয়ভূষণ রায়, অন্তঃপুরে স্ত্রী শিক্ষা, পৃ ৮৭।
24| শিক্ষাব্রতী খায়রুন্নেসা, জানানা মাহফিল: বাঙালি মুসলমান লেখিকাদের নির্বাচিত রচনা ১৯০৪- ১৯৩৮, শাহীন আখতার ও মৌসুমী ভৌমিক (সম্পাঃ) কলকাতা, স্ত্রী পাবলিকেশন, পৃ ৩৬-৩৯।
25| রওশনআরা বেগম, নবাব ফয়জুন্নেসা ও পূর্ববঙ্গের মুসলিম সমাজ, ঢাকা, বাংলা একাডেমি ১৯৯৩, পৃ ৩৭-৩৯।
26| নিবেদিতা পুরকায়স্থ, মুক্তিমঞ্চে নারী, পৃ ৫০।
#সেকুলার_মিথ_সিরিজ
-খাই রুল

Comments
Post a Comment