মোল্লা ওমরের রহ. মায়ের ইন্তেকাল
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর রহমতুল্লাহি আলাইহির সম্মানিত মা দীর্ঘদিন জীবিত ছিলেন—এই তথ্যটি আজ তাঁর ইন্তেকালের সংবাদে এসে জানতে পারলাম। এক মায়ের বিদায় মানে শুধু পারিবারিক শোক নয়; ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত একজন নীরব সাক্ষীর প্রস্থানও বটে। বহু ঘটনা শব্দহীনভাবে যাঁর চোখের সামনে ঘটেছে, যিনি জন্ম দিয়েছিলেন আস্ত এক কিংবদন্তিকে—আজ সেই মহীয়সী ব্যক্তি চিরতরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
মোল্লা ওমর রহমতুল্লাহি আলাইহি এই একবিংশ শতাব্দীর জিহাদ, ইকামাতে দ্বীন ও আজাদী আন্দোলনের অন্যতম আইকন।
একজন নিতান্ত সাধারণ মাদরাসা-শিক্ষার্থী থেকে তিনি নারীর ইজ্জত রক্ষার লক্ষ্যে গড়ে তুলেছিলেন একটি সংগঠন। আর সেখান থেকেই তিনি বলতে গেলে সকল জালিম ও কাফিরদের কাছে ত্রাসে পরিণত হন।
নারীর মর্যাদা রক্ষায় এক সময়ে গড়ে তোলা এই আন্দোলনের সূচনা ছিল অত্যন্ত সীমিত পরিসরে— জাতীয় তো বটেই, এমনকি নিজেদের অঞ্চলেও প্রায় অনুচ্চারিত এক নাম। সময়ের স্রোতে সেই উদ্যোগ ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার ভেতর দিয়ে রূপান্তরিত হয়ে আঞ্চলিক গণ্ডি অতিক্রম করে বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে যায়।
মূলত তালেবান আন্দোলন ছিল সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং চুরি, ডাকাতি ও চিন্তাই নির্মূলের মাধ্যমে সামাজিক শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক প্রয়াস। পরবর্তীতে তা পরিণত হয় জিহাদ ও মুক্তি আন্দোলনের একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে।
মোল্লা ওমর রহমতুল্লাহি আলাইহিকে ঘিরে মূল্যায়ন তাই বহুস্তরীয়। সাচ্চা মুসলিমদের বয়ানে তিনি ছিলেন “কাফিরদের ত্রাস”, এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমেই আফগানের জমিনে “কালিমার পতাকা” সমুন্নত হয়েছিল।
একজন সাধারণ মাদরাসা-শিক্ষার্থী থেকে ইতিহাসের প্রবল স্রোতে উঠে আসা তাঁর এই যাত্রা আজ দুনিয়ার দিকে দিকে কুফুরির বিরুদ্ধে জিহাদ, আজাদী ও প্রতিরোধ আন্দোলনের এক শক্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে, তাগুতের পদলেহীদের কাছে তিনি সীমাহীনভাবে সমালোচিত এক নাম। কথায় কথায় দেখা যায়— বঙ্গীয় সেক্যুলাররাও বাংলাদেশকে “মোল্লা ওমরের তালেবানি আফগানিস্তান” হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে কাঁপতে থাকে।
আবার ক্ষমতায় থাকাকালীন তাঁর কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অন্যান্য ইসলামপন্থীদের কাছেও সমালোচিত হয়েছে। তবুও আজকের দিনে এসব বিতর্ক ছাপিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় এক মায়ের শূন্যতা—যিনি জন্ম দিয়েছেন একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম এক আইকনিক মুজাহিদকে, এবং সেই সন্তানের জন্য দিনের পর দিন নীরবে সহ্য করেছেন দীর্ঘ অপেক্ষা, অনিশ্চয়তা ও শোকের ভার।
বিশ্ব কুফুরি শক্তির বিরুদ্ধে এক অদম্য জিহাদ শুরু করে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। বারংবার ইমামুল কুফফারদের পরাজিত করে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধানকে সবচেয়ে বেশি কায়েম করেছেন এবং দ্বীন কায়েমের সেই সংগ্রামকে আফগানের জমিনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।
যাই হোক, যেদিন থেকে আমাদের মায়েরা দিকে দিকে এমন সন্তান জন্ম দিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকেই আমাদের সত্যিকারের আজাদী নিশ্চিত হবে। আমরা কুফুরির ভিত ভেঙে কালিমার পতাকাকে সমুন্নত করতে পারব— ইন শা আল্লাহ।
আজ তাঁর মায়ের ইন্তেকালে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার দরবারে বিনীত প্রার্থনা জানাই— তিনি যেন এই মহীয়সী নারীকে তাঁর অসীম রহমতে আবৃত করেন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল করেন। আমিন।
~রেদওয়ান রাওয়াহা

Comments
Post a Comment