বদলে যাওয়া বদলে দেওয়া-০৩
একজন
মহিলা আসলো আল্লাহর রাসুলের কাছে। এসেই বললো হে আল্লাহর
রাসুল! আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বললেন, দুর্ভাগা মহিলা! তুমি ফিরে যাও । গিয়ে আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তাওবা করো।
মহিলাটি নাখোশ হলেন। তিনি রাসূলে কারিম
স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামকে বললো, আপনি কি এই ইচ্ছে পোষণ করে রেখেছেন যে, আমাকেও
ফিরিয়ে দিবেন যেমনিভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মা'ইয ইবনু মালিককে?
তখন রাসূলে কারিম স্বল্লাল্লাহু আলাইহি
ও’সাল্লাম
বললেন, তোমার কি হয়েছে? কী করেছো তুমি?
মহিলাটি তখন বললো, আমি জিনা করেছি। আমি
ব্যভিচারী। ব্যভিচারের কারণে এখন আমি গর্ভবতী।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জিজ্ঞস করলেন তুমিই ব্যভিচারের ফলে গর্ভবতী?
মহিলাটি প্রতিউত্তরে বললো, জি।
তখন রাসূল সা. মহিলাটিকে বললেন, তুমি চলে যাও এবং সন্তান
প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো।
এক আনসারী ব্যক্তি উক্ত নারীর গর্ভের
সন্তান প্রসবকাল পর্যন্ত তাঁর দায়িত্বভার গ্রহণ করলো। অতঃপর এক সময় মহিলাটি
সন্তান প্রসব করলো। প্রসবের পর রাসূলে কারিম
স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ও’সাল্লামের কাছে পুনরায় আসলেন। তিনি দেখলেন সে মহিলাটির কোলে ছোট্ট
একটি ফুটফুটে মানব শিশু। তখন তিনি উক্ত মহিলাটিকে বললেন, এখন চলে যাও । তাকে দুধ পান
করাও । দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা করো। মহিলাটি শিশুটিকে দুধ পান করাচ্ছে। সাথে
সাথে বিচার-ফায়সালার জন্যে অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
দিন যায় রাত আসে। তাঁর অপেক্ষার পালাও
শেষ হতে থাকে । এক সময় বাচ্চাটির দুধ খাওয়া বন্ধ হয়। এবার মহিলাটি বাচ্চার হাতে একখণ্ড
রুটির টুকরো দিয়ে তাকে সঙ্গে করে রাসূল সা.-এর খেদমতে উপস্থিত হলো।
এবার মহিলাটি বললো, হে আল্লাহর নবি!
এই দেখুন (বাচ্চাটির) দুধ ছাড়ানো হয়েছে, এবং কি সে এখন নিজের হাতে খাবারও খেতে পারে।
আল্লাহর রাসুল তাকিয়ে স্বচক্ষে দেখলেন। তখন তিনি বাচ্চাটিকে একজন মুসলমানের হাতে তুলে
দিলেন।
অতঃপর লোকদেরকে নির্দেশ করলেন ব্যভিচারের জন্যে তাকে
শাস্তি প্রদান করতে, তখন তার বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করানো হলো। মহানবী স্বল্লাল্লাহু
আলাইহি ও’সাল্লামের নির্দেশ মোতাবেক মানুষজন মহিলাটিকে রজম করলো। সেখানে অন্যান্য
সাহাবিদের সাথে খালিদ বিন ওয়ালিদও উপস্থিত ছিলেন। তিনি সম্মুখে অগ্রসর হয়ে মহিলাটির
মাথায় একখণ্ড পাথর নিক্ষেপ করলেন। পাথর নিক্ষেপ করতেই পিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে এসে তাঁর মুখমণ্ডলের ওপর পড়লো।
তাই তিনি মহিলাটিকে ভৎর্সনা ও তিরস্কার করে গাল-মন্দ করলেন। এই ভৎর্সনা ও তিরস্কার
শুনে মুহাম্মাদ সা. বললেন, হে খালিদ থামো! সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্যই
মহিলাটি এমন তওবা করেছে, যদি কোনো বড় ধরনের জালিমও এমন তওবা করতো, তবে তারও মাগফিরাত হয়ে যেতো। এরপর তিনি
তার জানাযা পড়ার জন্যে সকলকে আদেশ করলেন, তিনি নিজেো তার জানাযা পড়লেন এবং তাকে দাফনও
করলেন।
এতোক্ষণ যে মহিলাটির কথা আলোচনা করা
হলো, তিনি ছিলেন আযদ গোত্রের শাখা গামিদ পরিবারের
সন্তান। আমরা নানান সময়ে এই কাহিনিটি শুনেছি। কিংবা কেউ কেউ তো আলোচনাও করেছি কোথাও
না কোথাও।
মায়েজ আসলামী আর উনি, এই দুজনের তাওবাকে
যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর আমাদের সকলের তাওবাকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয়, নিশ্চিত তাঁদের
তাওবার পাল্লা বহু বহুগুণে ওপরে থাকবে। আর আমাদের পাপের সমুদ্রের তো কোনো কূল-কিনারা
পাওয়া যাবেনা। তাদের ইবাদাত আর আনুগত্যের সাথে আমাদের সকলের ইবাদাত-আমলের পাল্লাকে
একসাথ করে দিলেও অবশ্যই তাদের ইবাদাত এবং আমলের পাল্লাটাই ভারি হবে। তবুও তাদের ভেতর
কী সীমাহীন তাওবা আর অনুসূচনা ছিলো, আর আমাদের অবস্থাটা কোন পর্যায়ের। অথচ আল্লাহ কুরআন
মাজিদে আমাদেরকে তাওবায়ে নাসূহা ( খাঁটি ও পরিপূর্ণ তাওবা) করার কথা বলেছেন। তাওবাতুন
নাসূহা কাকে বলে, সেটার উত্তম উদাহরণ হতে পারে এদুজন মানুষ। এদুজন সাহবি।
এ-দুটো
পর্ব থেকে আমরা কমন আরো একটা শিক্ষা নিতে পারি, তা হলো – আল্লাহর রাসূল ধরেই কিন্তু শাস্তি দেওয়আর
পক্ষপাতি ছিলেন না। সে অপরাধ করেছে কী করেনি এর পেছনে গোয়েন্দাগীরী করে অযথা সময় নষ্ট
করতে চাননি। যেটা আমরা করি। আমরা কেউ অপরাধী না হলেও জোর করে হলেও তাকে অপরাধী
বানাবার চেষ্টা করি। নিজেই সবার আগে পারিনা যে শাস্তি নিশ্চিত করি। আল্লাহর রাসূল
কিন্তু চেষ্টা করেছেন তাঁদের ব্যক্তিগত পাপ ব্যক্তিগতই থাক। গোপন থাকুক। নিজ মুখে
পাপের স্বীকৃতি দেওয়ার পরে আল্লাহর রাসুল তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। যখন বলছে
তাঁরা যে আমি ব্যভিচার করেছি, আল্লাহর রাসুল বলেছেন না, মনে হয় তুমি স্পর্শ করেছো।
কিংবা চুমো খেয়েছো। আর আমরা কাউকে কারো হাত ধরাবস্থায় দেখলেই ব্যভিচারের অপবাদও
দিয়ে ফেলি। কিন্তু রাসুলে কারিম স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ও’সাল্লাম তা করতেন না এবং করেনওনি।
তিনি
চেয়েছেন তাঁরা বিষয়টি গোপন রাখুক। আল্লাহর কাছেই ক্ষমা চেয়ে নিক। তাওবা করুক। সে
জন্যে তিনি তাদের অবকাশ দিয়েছেন। বারবার অবকাশ দিয়েছেন। যখন তাঁরা বিষয়টি জনসম্মুখে
সুস্পষ্ট করে বারবার প্রকাশ করে দিয়েছে, যখন জনগণ তাদের পাপের স্বীকৃতি শুনেছে এবং
সাক্ষী হয়ে গিয়েছে, তখন আল্লাহর রাসুল তাদের শাস্তি দেওয়ার, হদ্দ প্রয়োগ করার নির্দেশ
প্রদান করেছেন।
এখান
থেকে আরো একটা বিষয় আমরা শিখতে পারি, তা হলো ইসলাম সমাজ নষ্টকারী, সমাজে প্রভাব সৃষ্টিকারী
পাপের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়না। ইসলাম সমাজ রক্ষা করতে, মূল্যবোধ রক্ষা করতে চায়।
আল্লাহ
আমাদেরকে কবুল করুন। সর্বপ্রকার পাপাচার থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন। আ-মী-ন !
~রেদওয়ান রাওয়াহা
১০-১০-২১ইং
Comments
Post a Comment