|| ভালোবাসা পেতে হলে...||
আচ্ছা
আমি তো চাই আল্লাহকে ভালোবাসতে। আমি তো চাই-ই আমার এই ক্ষুদ্র দিলে আল্লাহর
ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত করতে। একেবারে কলিজার প্রতিটি ইঞ্চিতে। হৃদয়ের প্রতিটি শেকড়ে।
মগজের শেখরে শেখরে.....
এমন ভালোবাসা মানুষের থেকেও পেতে চাই। আমি চাই, অজস্র মানুষের দু'আ ও ভালোবাসার দরিয়ায় হাবুডুবু খেতে। এমন ভালোবাসা— যে
ভালোবাসা থেকে আমি আর সাঁতরে সাঁতরে ওঠতে পারবো না। এমন দু'য়া—যে দু'আর বারিধারায় আমি ভিজতেই থাকবো। ভিজতেই
থাকবো। কার না স্বাদ হয় মানুষের দু'আ ও ভালোবাসার বৃষ্টিতে সিক্ত হতে? কিন্তু সে জন্যে কী করণীয়? চারদিকে খুঁজি। কতো কিছু খুঁজে খুঁজে হাতড়ে মরি! কতো আলোচনা শুনি। কতো ওয়াজ শুনি। কত্তো কত্তো
বই-পত্তর পড়তে পড়তে জাস্ট অস্থির আমি.....
কুরআনুল কারিম খোলার সাথে সাথেই যেনো আমার জবাবটা
আমি পেয়ে গেছি ! আমার আল্লাহ যেনো আমার এই চাওয়াটার,
আমার এই সুতীব্র বাসনাটার, আমার এই আকাঙ্ক্ষাটারই সমাধান বাতলে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
আচ্ছা! কী সেটা? কী সেই মহান সমাধান? তা হলো— "যাঁরা ঈমান আনে এবং সৎ-শুদ্ধ কাজ করে, দয়াময় মহামহিম রহমান তাঁদের জন্যে মানুষের ক্বলবে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন। [০১] (সুরা মারিয়াম:৯৬)
আমি জাস্ট অবাক হয়েছি! আমার আল্লাহ এত্তো এত্তো ভালো
ক্যানো!! আমার হৃদয়ে জাগ্রত হওয়া প্রতিটা চাওয়া, প্রতিটা আকাঙ্ক্ষা, প্রতিটা প্রশ্নের জাওয়াব, প্রতিটা সমস্যার সমাধান তিনি এত্তো সুন্দর করে কীভাবে বাতলে দিয়েছেন! আমার মনে
চায় সারাটিদিন সিজদায় নুয়ে পড়ে থাকি তার পদতলে। মাটিতে। জায়নামাজে....
আর মনে মনে ভাবি—আমার সকল বিষয়ের সমাধান, আমার সকল চাহিদার বিষয় জানেন বলেই তিনি আল্লাহ। এই জন্যেই তিনি স্রষ্টা। আর
আমি সৃষ্টি...
আমি আজ শিখলাম, ঈমান আনলেই হবে না। ঈমানও
লাগবে। (ভালো) কাজও লাগবে। কাজ করলেই তো ফলাফল আসে। সফলতা আসে। আজ হোক বা কাল। ইশ ! এতো সহজ আর সুন্দর সমাধানের যে কুরআন, সেই কুরআন
আমি ধরি না। আমি পড়ি না...
কুরআন হচ্ছে জীবন চলার সূত্র। সেই সূত্রের ব্যাখ্যা
হচ্ছে হাদিস। রাসুলুল্লাহ স্বল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম সেই
হাদিসের মাঝে ভালোবাসা পাবার, ভালোবাসা বৃদ্ধি করার উপোয়
হিসেবে বলেছেন পরস্পরের মধ্যে বহুল পরিমাণে সালামের প্রচলন করতে। [মুসলিম : ৮১] কিন্তু আমি তবুও সালাম দিচ্ছি না। সালাম দিতে ইতস্তত
লাগে। শরম করে। ছোটো হলে তো কীসের সালাম দিবো আর তাদের! ওরা তো বাচ্চা। তারাই
আমাকে সালাম দিবে—এই হলো আমাদের চিন্তার অবস্থা!
রাসুলুল্লাহ স্বল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে প্রথম সালাম করে সে অহংকার থেকে মুক্ত। আমি তো
মুক্তি চাই অহংকার থেকে! এই অহংকার থেকে তো আমাকে
মুক্ত থাকতেই হবে। এটা আল্লাহর চাদর। মুসলিম-২৬২০। আমি দাস হয়ে মালিকের চাদর নিয়ে
টানাটানি করার মতো দুঃসাহস কীভাবে করি? আর তিনি তাঁর কালামে জানিয়েও দিয়েছেন যে,
তিনি এই অহংকারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভালোবাসেন না ! ( সুরা আন নাহল : ২৩)
যাইহোক, আমি আল্লাহর নবির বাতলে দেয়া পদ্ধতিতে আজ থেকে একটু নিয়মিত সালাম করতে চাই। বড়ো ছোটো সকলকেই চাই। ছোটোদের কোমল মনে কাষ্ঠকঠিন ইংলিশ
সম্বোধন না ঢুকিয়ে ফিরদৌসী সম্বোধনের সঞ্জীবনী সুধা ঢেলে দিতে চাই। ছোট্ট একটা
কিশোর যখন আমার মতো একজন যুবকের শ্রদ্ধা-মমতায় ঘেরা সাদর সম্বোধন ও সম্ভাষণ পায়
তখন তো তার মনে দোল খায় এক অনির্বচনীয় আত্মবিশ্বাস ও প্রশান্তির হিন্দোল। তার ছোট্ট বুকের
কুঠুরিতে সাহসের শামিয়ানা দোলা দিয়ে যায়...
আমি যখন ছোটো ছিলাম তখন কেউ যদি আমাকে মর্যদার সাথে
স্নেহমেখে দিতো, সালাম দিতো—তখন মনে সাহসের এক অনিন্দ্য
উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেতো। ভালো লেগে যেতো। আব্বা যখন তার কোলের কাছে নিয়ে বসে বসে
সালামের শিক্ষা দিতো। আদব-আখলাক শিক্ষা দিতো তখন মনে মনে সেই শিক্ষাটা বাস্তবে
রূপায়িত করার এক সুদৃঢ় ইচ্ছের উন্মেষ ঘটতো।
আশেপাশে প্রচুর পরিমাণ মানুষ। কাউকে যেনো কেউই চিনতো
না। চিনে না। শহুরে জীবনে এই বিষয়টি তো আরো অধিক পরিমণে বেশি। কিন্তু কিছু বড়ো ভাই
আবার দেখা হলেই আগে সালাম দিয়ে দিতো। সেই যে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি— এরপর আর কখনোই
হাই-হ্যালো’র
হিল্লোলে হুড়মুড় করে আর পড়িনি অতোটা। সকলকেই ফেরদৌসী সম্ভাষণে
সম্বোধন করতাম—"আসসালামু আলাইকুম" বলে। এই সম্বোধনটির মাঝে একটা
শীতলতা আছে। আনন্দ আছে। মায়া আছে। ভালোবাসার বিকাশ ঘটে এই সম্বোধনের দ্বারা-ই!
জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে এর ফলাফল সুচারুরূপে পেয়েছি। ভাবতেই মনে এক অপূর্ব প্রশান্তি পাই যে, আমার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার প্রতিটি বিধানই কতোই না
সুন্দর! কতোই না বারাকায় ঘেরা। আমরা ভালোবাসার কতো কতো মেডিসিন কতো দিকেই না
খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুঁজি।
একটু বড়ো হওয়ার পরে পরিচয় হলো অনেক ধরনের মানুষের
সাথে। অনেক টাইপের লেখকের সাথে। অনেক কিসিমে’র
বইয়ের সাথে। তারমধ্যে মাসুদা সুলতানা রুমি নামক একজন মহীয়সী নারী অন্যতম। ওনার অনেকগুলো
বই আছে। তাঁর প্রতিটি লেখা-প্রতিটি বই-ই খুব সহজেই আকর্ষণ করে। ধরলে আর বইটা শেষ না করে উঠতে
মন চায় না। তেমনি একটি বই হচ্ছে “ভালোবাসা পেতে হলে’’ নামে। পরবর্তীতে বাতিঘর নামে একসাথে সংকলন করা হয়েছে। খুবই
ছোটো ছোটো ছিলো তো সেই বইগুলো। তো সেখানে তিনি ভালোবাসা পাবার একটা সুন্দর সূত্র
উল্লেখ করেছেন। সেটা হলো -সেক্রিফাইস এবং কম্প্রোমাইজ।[ বাতিঘর -১৫] ত্যাগ এবং সমঝোতার ভিত্তি মজবুত না হলে কোনো
ভালোবাসায়ই টিকে না। স্থায়ী হয় না। সেখানে যতোই স্মৃতি থাকুক। হাজারো স্বপ্ন থাকলেও তা ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায়। যেতে বাধ্য।
পবিত্র কুরআনের আরেকটি আয়াত আমার জন্য ভালোবাসা
অর্জনের একটা টনিক হিসেবে কাজ করে। আমাকে অযথা তর্ক করে নিজের মর্যদা কমিয়ে না
দেয়ার শিক্ষা দেয়। আমি সঠিক হলেও মূর্খের সাথে, জাহিলের সঙ্গে বিতর্কে
অবতীর্ণ না হতে উপদেশ দেয়। তাকে সালাম দিয়ে বিদেয় হবার কথা বলে। (সুরা ফুরকান: ৬৩)
এই আয়াতে আমার আল্লাহ আরো একটা সুন্দর সুশৃঙ্খল
সুবিন্যস্ত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। যে কোনো মানুষ —যিনি ভালোবাসা পেতে চান, তিনি
অবশ্যই এর ওপর আমল করে আত্মগঠন করার প্রবর্তনা সৃষ্টি করতে পারেন। তিনিও আল্লাহর
বিশাল বিস্তৃত এই জমিনের ওপর চলাচল করার সময় বিনম্রতার যে ভীষণ সুন্দর একটা গুণ, তা অর্জন করতে পারেন। বিনম্র মানুষকে ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষেরা অবশ্যই শ্রদ্ধা
করেন। করবেন। ভালোবাসেন এবং বাসবেনও!
"আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন আর ‘রাহমান’ -এর বান্দা তারাই, যারা যমীনে অত্যন্ত
বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেল ব্যাক্তিরা তাদের সাথে বতর্কে অবতীর্ণ হলে , তখন তারা বলে, ‘সালাম’। "( আলকুরআন: ২৫/৬৫)
তা হলে আমরা খালিকের সাথে সাথে মাখলুকেরো ভাল
ভালোবাসা অর্জন করতে চাইলে এই সহজবোধ্য কাজগুলো করতে পারি তো! নাকি?
|| ভালোবাসা পেতে হলে...||
~রেদওয়ান রাওয়াহা৷
Comments
Post a Comment