|| অন্যের সমালোচনা ||

 




যে কাজ করে সে ভুল করে!
যে কাজ করে না সে ভুল ধরে!

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই এক বিরাট রকমের নির্মম সত্য! বিষয়টা মনে হয় যেনো এমন যে, কাজ পায় না তো করবে টা কী! ভুল ধরো প্রচার করো! সেগুলোর বই করো, নোট করো নেটে ছাড়ো। প্রয়োজনে আংশিক কিংবা পূর্ণ মিথ্যের আশ্রয়গ্রহণ করো এটাই হয় ওসব লোকের উসুল তখন

তাই বলে কি আমরা কারো যৌক্তিক সমালোচনা বা ভুল ধরবো না? তা ধরবো। অবশ্যই ধরবো। সমালোচনা না থাকলে তো মানুষের সংশোধনের রাস্তাটা রূদ্ধ হয়ে যাবে। মানুষ দিনের পর দিন ভুল-ভ্রান্তির বালুচরে নিমজ্জিত হয়ে থাকবে। সে জন্য আমরা সমালোচনা করবো। গঠনমূলক সমালোচনা। তবে সেখানে যেনো দরদ থাকে। কল্যাণকামিতা থাকে। যার সমালোচনা করছি তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রতি যেনো আঘাত না আসে। তাঁর যেনো মান-শান অটুট থাকে । কিন্তু বড্ড পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, আমাদের মাঝে সেটা তো নেই-ই; বরঞ্চ যারা আমাদের এসব বিষয় নিয়ে সচেতন করে তাদের আমরা নানা অবিধায় অবিধিত করি...

দরদের পরশে ইখলাসের সাথে যে সমালোচনা হয় সেখানে আছে প্রভুত কল্যাণ। মানুষ সেই সমালোচনা দ্বারা সংশোধনও হয় অনেক বেশি। যে সমালোচনার ভাষা আক্রমণাত্মক। ব্যক্তির মান-মর্যাদার প্রতি যে সমালোচনায় করা হয় থোড়াই কেয়ার, সেটা তো সমালোচনা না। সেটা হলো নিরেট আক্রোশ। হিংসার টগবগে আগুন আমরা যার বা যে বিষয়ে সমালোচনা করি বা করবো, সে কাজটা তথা ভুল ধরা বা সমালোচনাটা যদি নিরেট আল্লাহর জন্যই হয় তা হলে সেখানে দরদ আর বিনয় থাকবে। এবং থাকাটা আবশ্যকও বটে। যে সমালোচনা হতে হিংসার টগবগে আগুন উদগীরণ হয় সে সমালোচনা হতে আর যাই হোক বড়ো রকমের কোনো কল্যাণ সাধিত হতে পারে না চূড়ান্তভাবে!

কাউকে ভালোবেসে, কারো কল্যাণকামী হয়ে, কারো ভুল সংশোধনের আশায় সমালোচনা করাটা খুবই সুন্দর এবং বিপুল পরিমাণ সাওয়াবের কাজও বটে। যেটা আমরা করি না। আমরা যার সমালোচনা করছি বা করি তাঁর মান-শানকে ধুলোয় ধূসরিত করে ফেলি! কথার আঘাতে তার হৃদয়টা ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলি! তাঁর সকল ভালো এবং সুন্দর গুণাবলিকে চোখের পলকেই অস্বীকার করে বসি। এতে অধিকাংশ সময় হয় হীতে বিপরীত! মানুষ সংশোধিত না হয়ে উল্টো আরো বেশি বিপথগামী হয়।

আমরা অধিকাংশ-ই ডক্টর খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহঃ-কে ভালোবাসি । পছন্দ করি। কিন্তু ক্যানো করি ? কারণ তিনি মানুষের নাম ধরে অসম্মান আর আঘাত করে যে সমালোচনা করা হয় তিনি তা করতেন না। মানুষের কর্মের যেই ভুল, সেই ভুলটা তিনি মার্জিত ভাষায় তুলে ধরতেন। তিনি কারো নাম ধরেও সমালোচনা করতে দেখি নি আমি! কিন্তু তাই বলে তার সব বিষয়ে আমাদের সকলকে একমত হতে হবে এমনটা নয়! তিনি সব বিচ্যুতির ঊর্ধে, তাঁর সকল কথায়-ই গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে ঊত্তীর্ণবিষয়টা মোটেই তা নয়। তিনিও রক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ। তাঁরও ভুল আছে। বিচ্যুতি আছে। যেমন জিহাদ, ইক্বামাতে দ্বীন এবং বাইয়াত বিষয়ে তাঁর অবস্থানকে আমি সঠিক এবং গণহারে গ্রহণযোগ্য মনে করি না।

তবে যাইহোক,  চূড়ান্ত সফলতা আর কল্যাণ কীসে জানেন? তা হলো নিজের সমালোচনা আর নিজেকে শুদ্ধ করার মাঝে। অন্যের পেছেনে পড়ে থাকার মাঝে আত্মকল্যাণ  নেই । দুনিয়া কিংবা পরকালীন সফলতা এবং কল্যাণের ছিঁটেফোঁটাও নেই। তা হলে অন্যের পেছনে পড়ে থেকে, অন্যের ভুল মাইক্রোস্কোপ যন্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আবিষ্কার করে লাভটা কী? চূড়ান্ত সফলতা আর কল্যাণের বিষয়ে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন কী বলে দেখুন না, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মহাপবিত্র আল-কুরআনে বলেছেন, অবশ্যই সাফলতা লাভ করবে সে, যে পরিশুদ্ধ হয় (সুরা -আ'লা:-১৪)। এমন আরো একটা সুন্দর আয়াত আছে মহাবিশ্বের বিস্ময় পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারিমে। পড়েই দেখি আমরা, নাকি?

সেই ব্যক্তিই সফলকাম হয়েছে, যে নিজেকে পবিত্র-পরিশুদ্ধ করেছে (সুরা-সামছ : ০৯)

খলিফাতুল মুসলিমিন, আমীরুল মু'মিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, তোমরা নিজরা নিজেদের হিসেব নিজেরা নাও (বিচার দিবসের) হিসেবের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে, এবং তোমরা নিজেরা নিজেদের মেপে নাও (আখিরাতে) তোমাদেরকে পরিমাপমাপ করার পূর্বে। কেননা, আজকের তোমার এই নিজের হিসেব-নিকেশ নিজে করাটা আগামীকাল হিসেব দেয়ার চাইতে অনেক সহজ। আর তোমরা বড়ো পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও"। ( মুহাসাবাতুন নাফস-ইবনু আবিদ দুনিয়া, ২৯ পৃষ্ঠা, হাদিস নং০২, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১৩ নং খন্ড)

হাদিস নয়, তবে আরবিতে একটা বিখ্যাত প্রবাদ আছে। আরবি প্রবাদটার বাংলা মোটামুটি এরকম , সবচেয়ে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বা বিচক্ষণ মানুষ হলো সেই ব্যক্তি যে নিজের দোষ-ত্রুটি দেখে।

অথচ আমরা?! আমরা নিজের আত্মাকে কঠিনভাবে কলুষিত রেখেও অন্যের সমালোচনায় মজে থাকি অবিরাম। অপরের দোষ-চর্চা করি। করে যাচ্ছি। অবিরত। বিরামহীন

রাসুল স্বল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কখনো কাউকে আঘাত করে অসম্মান করে সমালোচনা করেছেন? অথচ আমরা করি! আবার ওনার উম্মতও দাবি করে থাকি হরদম। কী অদ্ভুত কিসিমের হাস্যকর একটা বিষয়!!

তাই আসুন, আমরা যেনো নিজেকে আগে শুদ্ধ করি। অন্যের আকিদা আর ঈমানের নাট-বল্টু টেস্ট না করে নিজের আমলকে উন্ন্‌ আকিদাকে বিশুদ্ধ আর আখলাককে করে তুলি অনুপম! তবেই তো আমি হবো আসোল সফল। আমাদের তো সফলতা-ই দরকার, তাই না? নিজের সংশোধন, নিজের আত্মসমালোচনা আর আত্মপর্যালোচার মাঝেই সত্যিকারের সফলতার ঊর্মি মালা আছে যে !!

তাহলে আর দেরি ক্যানো! নিজেকেই আগে শুদ্ধ করি। শুদ্ধতার মহাসাগরে ডুবুরি হয়ে সাঁতার কাঁটি! নিজের সমালোচনাতেই করি মনোনিবেশ। ক্যামন? জিনিসটা ভালো না? নিজের সমালোচনাতেই যেহেতু মঙ্গল বেশি তা হলে সেটাই করি। আর কারো সমালোচনা করলেও তাঁর মান-শান নষ্ট না করি। ইজ্জত-আব্রুতে আঘাত না করি। তাঁর সকল ভালো কাজকে অস্বীকার করে না বসি। ছুঁড়ে ফেলে না দিই তাঁর যাবতীয় সুন্দর সুন্দর সঠিক সবকর্ম প্রচেষ্টাকে!


আমরা মানুষের শুদ্ধটা, ভালোটা গ্রহন করি। ভুলটা ছুঁড়ে ফেলে দেই! ভুলটা তো বর্জন করার জন্যই এসেছে। আমরা সকলের ভালো আর শুদ্ধটা নিয়ে ঋদ্ধ হই! এটাই তো করা উচিত, তাই না? কারণ আমরা তো মানুষ। দোষ-ত্রুটি, ভুলচুক তো মানুষেরই হবে। কোনো ফেরেশতার নয়! ঠিক না? আল্লাহ রব্বুল আলামিন সর্বাগ্রে আমাকেই কথাগুলো আমল করার তাওফিক দান করুন। আ-মী-ন !



|| অন্যের সমালোচনা ||

-রেদওয়ান রাওয়াহা

০৪.০৭.২০

( সম্পাদিত ও পরিমার্জিত ২৬। ০৮ । ২১ )

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ