"আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করাতো জায়েজ-ই নেই"- প্রফেসার গোলাম আজম





জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর, তাবলীগ জামায়াতের সাবেক অন্যতম মুরুব্বি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সামনের সারী থেকে নেতৃত্ব প্রদানকারী ডাকসুর সাবেক জি.এস প্রফেসর গোলাম আজম রহঃ-এর একটা ভিডিও একবার সম্ভবত বাংলাভিশনে দেখেছিলাম। সেখানে তিনি বলেছেন যে, "আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করাতো জায়েজ-ই নেই"।
প্রফেসার গোলাম আজম রহঃ-এর এই কথাটা টিভিতে ওনার সাক্ষাৎকারে যখন শুনেছি। তখন আমি তো আরো ছোটো। সারাক্ষণ মস্তিস্কে আবেগ টলমল করতো সরোবরের ন্যায়। তাঁর এই কথাটি আমার আবেগে আরো আঘাত হেনেছে। আমার মনে ঈমানের মশালকে দাঊদাঊ করে দ্বিগুণ-তিগুন বেগে জ্বালিয়ে তুলেছে! অথচ ওনার সংগঠনের অনেক লোকেরাও এই কথাটাকে ছড়িয়ে দিতে কার্পণ্যবোধ করে! এই আদর্শিক চিন্তাধারণ করতে সক্ষম হচ্ছেনা। ভয় পেয়ে সেক্যুলার সাজে কেউ কেউ।
মু'মিন যদি হয়ে থাকি; তা হলে সত্যিই কাউকে ভয় পাবার কোনো অর্থই হয় না। সত্যিকারর্থেই গোটা দুনিয়ার কাউকেই ভয় করা জায়িজ নেই....
ওনার অনেক চিন্তার সাথে দ্বিমত করার সুযোগ রয়েছে। অনেক চিন্তাকে অগ্রাহ্য করার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণও রয়েছে। যেমন আমি ওনার ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের যে আন্দোলন, সে আন্দোলনকে সমর্থন করি না। কিন্তু তবুও তিনি যথেষ্ট কিছু কিছু ভালো কাজ করেছেন। স্পেশালি ইমাম মওদূদী রহঃ- এর চিন্তাকে সহজভাবে বিশ্লেষণের কাজটি আমার দৃষ্টিতে তিনিই সবচেয়ে বেশি করেছেন।
উনি অনেক সহজবোধ্য বই রচনা করেছিলেন। যদিও সেগুলোর মধ্যে দুয়েকটা ছাড়া অন্যকোনো বইতে নতুন কিছু উপস্থিত তিনি করেননি, কেবল মওদূদীর চিন্তার ভাষ্যকারই ওনাকে বলা যেতে পারে। তো যারা মওদূদী রহিমাহুল্লাহর বই পড়ে সহজে বুঝতে সক্ষম হয় না, তারা ওনার বইগুলো পড়ে সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে ইন শা আল্লাহ।
ওনার কিছু বইয়ের তালিকা :
১- ইসলামের সহজ পরিচয়।
২- ইক্বামাতে দ্বীন
৩- জীবন্ত নামাজ
৪- জীবনে যা দেখলাম
৫ - মুসলিম মা বোনদের ভাবনার বিষয়
৬- বায়াতের হাকিকত
৭- মনটাকে কাজদিন
৮ - ইসলামি ঐক্য ইসলামি আন্দোলন
৯ - পলাশী থেকে বাংলাদেশ
১০ - ইসলামি সভ্যতা বনাম পাশ্চাত্য সভ্যতা
১১ - ইসলাম ও বিজ্ঞান
১২ - ইসলাম ও দর্শন
১৩- কুরআন বুঝা সহজ
১৪- কুরআনে ঘোষিত মুসলিম শাসকদের ৪ দফা কর্মসূচি
১৫ - খাটি মুমিন হতে হলে তা.গু.তের পাক্কা কা.ফি.র হতে হবে
১৬ - ইসলামি আন্দোলন : সাফল্য ও বিভ্রান্তি
এভাবে অসংখ্য বই তিনি রচনা করেছিলেন। অধিকাংশ বই-ই খুব ছোটো। এক বসায় পড়ে ফেলার মতো।
ছোটোদের জন্যও তিনি সহজবোধ্য বই রচনা করেছেন। যেমন "কিশোর মনে ভাবনা জাগে" নামক বইটি খুবই ফেভারিট আমার কাছে। আমি মনে করি সব শিশুরা বড়ো হবার পরে পড়তে শেখার পরে এই বইটা তাদের পড়ানো উচিত।
আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে সবার ভালো জিনিসগুলো নিয়ে ঋদ্ধ হবার তাওফিক দান করুন। আর ভুলগুলোকে এড়িয়ে চলারও তাওফিক দান করুন। আ-মী-ন!

প্রফেসর গোলাম আজম সাহেব ২০১৪ সালের এ-দিনে জালিম হাসিনার কারাগারে বন্দী অবস্থায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। তিনি ৭ নভেম্বর ১৯২২ সালে এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ওনার পিতা খুবই ধর্মভীরু ছিলেন। পিতার চেয়েও বড়ো আল্লাহওয়ালা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে দুনিয়ায় জীবনযাপন করেন গোলাম আজম। লোকটি খুবই সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। জাগতিক লোভ-ভয় কখনো মানুষটাকে তাঁর লালিত আদর্শ থেকে টলাতে পারেনি।

আল্লাহ ওনার ভুলগুলো মার্জনা করে দিন। জান্নাতুল ফিরদাঊসের মেহমান হিসেবে কবুল করে নিন তাঁকে। আ-মী-ন!

~ রেদওয়ান রাওয়াহা

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ