"ধর্ম কি শুধু অন্তরে থাকার বিষয়"?

 



একটা শ্লোগান খুব জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ইসলামপন্থী অনেক ভাইবোন এবং সাধারণ জনগণও তা খুব করে গিলছে। আর সেটা হলো,

পৃথিবীটা মানুষের হোক

ধর্ম থাকুক অন্তরে

মসজিদে আজান হোক

ঘন্টা বাজুক মন্দিরে

 

আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন- পূর্ণভাবে দ্বীনে দাখিল হও।[০১] ঈমানের মানে হলো তিনটি

১. অন্তরে বিশ্বাস

২. মুখে স্বীকৃতি

৩. সেই বিশ্বাস আর কর্মকে কাজে পরিণত করা।

 

ঈমানের বিষয়ে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, ঈমানের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে স্বীকারোক্তি এবং আত্মার প্রশান্তি। আর সেটা অর্জিত হবে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ ও সাথে সাথে তাকে আমলে পরিণত করার মাধ্যমে [০২]

 

এই হলো ইসলাম। এই হলো ইসলামের ধর্মতত্ত্ব। ইসলাম তো শুধু ধর্ম নয়, এটা আমরা সকলেই জানি। ইসলাম পরিপূর্ন জীবনবিধান। অন্যান্য ধর্ম স্রেফ ধর্ম, কিন্তু ইসলামের রূপ হলো পূর্ণাঙরূপ। তাই ইসলামের উপস্থিতি থাকবে সর্বত্র। রাষ্ট্র থেকে সমাজ। পরিবার থেকে বিচারালয়। পৌরণীতি থেকে অর্থনীতি, ইসলাম সব জায়গায় সবখানেই কথা বলবে। বলে।

 

আল্লাহ পবিত্র কুরআনের যে আয়াতে বলেছেন পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো সে আয়াতের সাথের রয়েছে খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি শিক্ষনীয় গল্প। আল্লাহর রাসুলের কাছে কতিপয় মানুষ এসেছে, সদ্য ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাঁরা। পূর্বে ছিলেন ইয়াহুদি। তবে ইসলাম গ্রহণ করলেও তাদের মধ্যে তাওরাতপ্রীতি তখনো রয়েছে বিদ্যমান। তাই তো তাঁরা তখনো উটের গোশত ভক্ষন করছেনা। দুধ পান থেকে রয়েছেন বিরত। এবং শনিবারকে করে যাচ্ছেন বিশেষ তাজিম। কিন্তু বিষয়টি মুসলামানদের কাছে ভালো লাগছেনা। তাদের এহেন আরো কিছু আচরণ মুসলমানদের নিকট ভীষণ কষ্টদায়ক হয়ে যাচ্ছে। তাই তো তাঁরা এ-বিষয়ে আল্লাহর রাসুলের কাছে অভিযোগ করেছেন। তিনি সব শুনেছেন। সব শুনে সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী নওমুসলিমদের ডাকলেন।

 

তাঁরা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম যখন তাদেরকে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, তখন তাঁরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তাওরাত-ও তো আল্লাহর কিতাব। আর তা ছাড়া আমরা তো খারাপ কিছু করছিনা। আমরা আল্লাহর এক কিতাব দিয়ে অন্য কিতাবকে শক্তিশালী-ই করছি কেবল

তখন আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বললেননাহ, ইসলাম গ্রহণ করার পরে তাতে পরিপূর্ণভাবেই প্রবেশ করতে হবে। আল্লাহ যা হালাল করেছে তা ভক্ষণ করবে। যা হারাম করেছে তা করবেনা। হারাম থেকে বিরত থাকবে। হালালকে অন্তর থেকে এবং নিজের কর্ম দিয়ে গ্রহণ করতে হবে [০৩]

 

এ থেকে কী বুঝা যায়? তাঁরা অন্তরে ইসলামকে পোষণ করতো। কিন্তু বাস্তবায়নে একটু ইতস্তত করতোযেহেতু তা তাওরাতের বিধান ছিলো, সে জন্যে। তাঁরা আল্লাহর রাসুলের কাছে স্বীকারও করেছে যে, ইসলামের এই বিধান তথা এসব যে হালা্‌ তা আমরা অন্তর থেকে মানি। বিশ্বাস করি। কিন্তু স্রেফ আমলটা করছিনা। তখন-ই আল্লাহ বলেছেননাহ, এই ইসলাম শুধু অন্তরেই থাকার বিষয় নয়, এটা বাহ্যিকভাবে প্রকাশেরও বিষয়। আমলের বিষয়।

 

এছাড়াও রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম নিজেই বলেছেন ঈমান কী? চলুন দুটো হাদিস পড়ে আসি। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন ঈমান হচ্ছে, (তাদের ভাষায় যা অন্তরের ধর্ম )

 

ক. এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্‌ তাআলা ব্যতীত অন্য কোনও উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল,

 

খ. সলাত প্রতিষ্ঠা করা,

 

গ. যাকাত প্রদান করা

 

ঘ. হাজ্জ করা এবং

 

ঙ. রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা। [ ০৪]  

 

বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত আরেকটি হাদিস আছে, যেখানে তিনি বলেছেন ঈমানের সত্তরটির বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। অন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম হলো এ কথার স্বীকৃতি দেওয়া যে, আল্লাহ্ তাআলা ছাড়া অন্য কোনও উপাস্য নেই। এর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস দূরে সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। [ ০৫]

 

কিন্তু যারা বলে ধর্ম অন্তরে থাকুক, তাঁরা কৌশলে এসব শিক্ষা থেকে মানুষদেরকে বিমুখ করে দিচ্ছে না? এ্সব হাদিসেই তো প্রমাণ হয় যে ইসলাম শুধু অন্তরেই নয়, বাস্তব কর্মেও থাকার বিষয়। ইসলামের প্রকাশ হবে কর্মের মাধ্যমেই। আজকে যারা কৌশলে মুসলিমদের মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে, ধর্ম থাকুক অন্তরে তাদের কথা মোটেও একজন মুসলিমের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের কথা মধুময় শোনা গেলেও কিন্তু তাদের আসলে মতলব খারাপ

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের শ্লোগান হবে ,

"পৃথিবীটা তাওহিদের হোক

বিধান চলুক এক আল্লাহর"

 

 

~রেদওয়ান রাওয়াহা

 

     তথ্যসূত্র

-------------------

০১। সুরা বাকারা-২০৮

০২। আছ-ছারেম আল-মাসলূল, পৃঃ ৫১৯

০৩। তাফসীরে বায়যাবী-১ম খণ্ড

০৪। সহীহ্‌ বুখারী: ৮, সহীহ্‌ মুসলিম: ১৬

০৫। সহীহ্‌ বুখারী: ৯, সহীহ্‌ মুসলিম: ৩৫

 

 


Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ