"নারী পুনর্জাগরণ কীভাবে হওয়া উচিৎ? "




"নারী পুনর্জাগরণ কীভাবে হওয়া উচিৎ? "

নারী পুনর্জাগরণ হবেই। হওয়া উচিৎও বটে। আমাদের নারীদের ডাক্তার বানাতেই হবে। কেননা, আমার মায়ের গোপন চিকিৎসাগুলো তারা ছাড়া আর করবে কে! তারমানে এই না যে, আমাদের নারীদের পুরুষের যৌন চিকিৎসা করার জন্য ডাক্তার হতে হবে কিংবা সেই লক্ষ্যে ডাক্তার বানাতে হবে।


নারী শিক্ষিকা হবেই। এর প্রয়োজন অনস্বীকার্য। এরমানে তো এই না যে, আমাদের নারীদের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের প্রফেসর হতে হবে। বরং নারীদের শিক্ষার জন্যই আমাদের লাখো নারী শিক্ষক প্রয়োজন। অসংখ্য গার্লস স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি প্রয়োজন! সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাঁরা তাঁদেরকেই শিক্ষা দেবে। তাঁরা তাঁদেরই প্রফেসর হবে। তাঁরা তাঁদের অঙনেই কাজ করে যাবে। তাঁদেরকে জাগা উচিৎ নিজেদের হায়া রক্ষা করার জন্যেই। আমরাও তাঁদেরকে জাগিয়ে তোলা উচিৎ নিজেদের গাইরতের খাতিরেই।


সেজন্য বলি, জাগা উচিৎ এবং জাগানো উচিৎ সঠিক উদ্দেশ্য আর সঠিক পদ্ধতিতেই। কিন্তু সঠিক উদ্দেশ্য আর পদ্ধতিগত জাগরণ ছাড়া যদি পশ্চিমা ফ্লেভারে নারী জাগরণ চান, তাহলে নারী জাগরণ ঠিকই হবে, সাথে আরো অসংখ্য বিশৃঙ্খলারও জাগরণ হবে! যার ফলাফল কখনো কল্যাণকর হবে না। ইসলামের জন্য তো নয়ই, বরং আপনার নিজ পরিবার এবং নিজের জন্যও সে জাগরণ উপকারী হবে না। এমনকি তা স্বয়ং নারীদের জন্যই উপকার আর কল্যাণ বয়ে আনবে না সে জাগরণ!


আমি জানি এখনো গ্রামে-গঞ্জে তো বটেই, শহুরে শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যেও নারীদেরকে নীপিড়নের অসংখ্য-অগণিত রেকর্ড আছে। তাঁদের ওপর অসংখ্য জুলুমের জোঁয়াল চাপানো আছে। তাই আমি নিজেও নারীদের ওপর চলা সেসব জুলুমের অবসান চাই। তাঁদেরকে বঞ্চিত করার যে কোশেশ চলে, তাঁদের ওপর যে ভীষণ বিভীষিকা চলে, আমি সেসব অন্যায়ের নিবারণ চাই। তাঁদের সত্যিকারের জাগরণ চাই। কিন্তু তাই বলে কখনো এবং কস্মিনকালেও পশ্চিমাদের আলোকে জাগরণ চাই না। যে জাগরণে নারীতে আর নারীত্ব-মাতৃত্ব থাকেনা। থাকেনা তাঁদের স্বভাবসুলভ মমতা ও কোমলতা......

ইসলাম নির্দিষ্ট কোনো একপক্ষকেই জাগাতে আসেনি। ইসলাম এসেছেই জাতির জাগরণ ঘটাতে। দ্বীন এসেছেই নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে জাগাতে। তাঁদের সবাইকে নিজ নিজ অধিকার বুঝিয়ে দিতে। নিজ নিজ কর্তব্য পালনে সচেতন করতে।


জাহিলিয়াতের ধারক-বাহকগণ আগেও নারীদেরকে বঞ্চিত করেছে। আবার সে তারাই আবার উন্নত সভ্যতার কথা বলে তাঁদেরকে বঞ্চিত করতেছে। তাঁদের ভেতর থেকে নারীত্বের প্রতি আবেগ কেড়ে নিয়ে তাদেরকে পুরুষ হবার উদগ্র বাসনা জন্ম দিচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে লক্ষ লক্ষ নারী আজ মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিপিড়ীত! কারণ, তাঁরা আল্লাহর সিস্টেম ব্রেক করে পুরুষ হয়ে ওঠতে চায়। অথচ আল্লাহ তাঁর আবেগ ও অনুরাগ, শরীর ও মন; কোনোটাকেই পুরুষ হিসেবে গঠন করেননি। আল্লাহ উভয়েরই প্রোগ্রাম সেট করে দিয়েছেন আলাদা আলাদা করে....
.
এই যে আল্লাহর তৈরি করে দেয়া সিস্টেম, এই সিস্টেমকে ব্রেক করে যখনই আপনি কিছু করতে চাবেন বা চান, তখনই ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে এবং আসবে। হ্যাঁ, আসবেই! রব্বে কারিম তাঁর কালামে সে বিষয়টিই আমাদেরকে একাধিক আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন, কুরআনুলকারিমে ইরশাদ হয়েছে,

“তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে।” [সূরা আশ-শূরা: ৩০]


এভাবে সূরা রূমেও আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন,

"মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; যাতে ওদের কোন কোন কর্মের শাস্তি ওদেরকে আস্বাদন করানো হয়। যাতে ওরা (সৎপথে) ফিরে আসে।"[সূরা রূম : ৪১]।

 


আবারও বলতে চাই, আমাদের নারী পুনর্জাগরণ হতেই হবে। আমাদের মা-বোনেরাও নতুন সভ্যতা বিনির্মাণে, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে পুরুষদের পাশাপাশি তাঁরাও তাঁদের যোগ্যতানুযায়ী কাজ করবে। তবে তাঁদের সেই কাজ, তাঁদের সেই জাগরণ হতে হবে অবশ্যই ইলাহি প্রদত্ত হুদুদ মেনে। আপনার-আমার মনগড়া পশ্চিমা চিন্তার ফ্লেভারে না।



~রেদওয়ান রাওয়াহা

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ