"আমরা যে কাজগুলো করি আর নিজের অজান্তেই ঈমানের শেষ সীমানা অতিক্রম করি"

 






সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ একজন হারাম রিলেশনের স্ট্যাটাস দিয়েছে, আপনি সেটা দেখে অভিনন্দন জানিয়ে বসে আছেন। অথচ কোনো হারাম রিলেশনে অভিনন্দন জানানো মানে সেই হারাম কাজকে প্রকাশ্যে প্রমোট করছেন। হারামের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করছেন।

অনেকেই হাটুর ওপর হাফপ্যান্ট পরা পিকচার আপলোড করে ফেসবুকে। আপনি সেখানে রিয়েক্ট করা মানে আপনি সেই ব্যক্তির গুনাহকে সমর্থন জানাচ্ছেন।

মিউজিক হারাম। এবং মাওলানা মওদূদী রহিমাহুল্লাহও এটাকে হারাম বলে অভিমত দিয়েছেন। কোনো যুক্তি ছাড়াই। এখন হারাম মিউজিক যুক্ত কোনো গানে রিয়েক্ট করা মানে আপনি সেই হারামকে এবং গুনাহকে ডিমোরালাইজ করার পরিবর্তে সোৎসাহ ও সাগ্রহে সেটার পক্ষে কাজ করছেন। এটা থেকে ফেরাবার প্রচেষ্টার বদলে আপনি এই নিন্দনীয় কাজে উৎসাহ যোগাচ্ছেন।

এভাবে একজন বেপর্দা নারীর পিকচারে রিয়েক্ট দেওয়া মানে আপনি তাকে সেই বেপর্দার দিকে উৎসাহ দিচ্ছেন। কিংবা বোরকা পরিহিত অবস্থায়ও টানাটানা চোখ, অপরূপ সৌন্দর্য্যের মায়াবী চাহনিযুক্ত পিকচারে আপনি তন্ময় হয়ে কেয়ার রিয়েক্ট বা লাভ রিয়েক্ট করা মানে আপনি সেই নিন্দনীয় কাজে ভীষণ উৎসাহ দিচ্ছেন।

শুধু উপর্যুক্ত কয়েকটি বিষয়ই না, এরকম অগণিত বিষয়াদি আছে। আপনি যদি উপরিউক্ত কাজগুলোসহ অন্যান্য কাজগুলো নিজের জীবনে না-ও করেন, তবে উক্ত ব্যক্তিবর্গের অর্জিত গুনাহের অংশীদার কোনো অংশেই আপনার কম নয়।

কারণ, আপনি ইসলামের নির্ধারিত বর্ডার অতিক্রম করে ফেলেছেন। অথচ আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো পাপের কাজ, অন্যায়ের কাজ দেখলে শক্তি প্রয়োগ করে বাধা দান করা বা হাত দিয়ে তা প্রতিহত করা।

আপনার দ্বারা সেটা সম্ভব নয়? সম্ভব না হলে মুখ দিয়ে নিষেধ করেন। বাধা দেন। নসীহত করেন। ব্যক্তিগতভাবে বুঝান। বিরোধিতা করেন।

সেটাও সম্ভব নয়? তাহলে অন্তর দিয়ে সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেন। ঘৃণা করেন। এড়িয়ে চলুন। এটাই ঈমানের শেষ স্টেপ। এর বাহিরে ঈমান নেই! চিন্তা করছেন কখনো? এই পর্যন্ত ঈমানের বর্ডার। এটা অতিক্রম করা মানে আপনার ঈমান নেভে গেছে। প্রশ্নবিদ্ধ।

এখন একটুখানি ভেবে দেখুন, আপনার ঈমান আছে কী নেই! আপনি কি ঈমানের শেষ বর্ডারেও অবস্থান করছেন কিনা? যদি উত্তর না-বোধক হয়, তাহলে একটু ভাবুন। চুপচাপ নিজের ঈমানকে রাতের আঁধারে যাচাই করুন। আত্মসমালোচনার আয়নায় দেখুন নিজেকে। মনে হলে নিজেকে সংশোধন করুন। আর যদি মনে করেন আপনি এই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলবেন, চলতে পারেন। এই তাল মেলানোটা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এটা একজন সত্যিকারের মুসলিমের পরিচয় হতে পারে না।


একজন সত্যিকারের মুসলিমের পরিচয়ে বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর একজন শক্তিশালী রিভার্টেড নারী ইসলামি চিন্তক মরিয়ম জামিলা রহ.(ইহুদি নাম মার্গারেট মারকিউস), যিনি ইহুদি ধর্ম থেকে উস্তাদ সাঈয়েদ কুতুব রহিমাহুল্লাহ' এবং সাঈয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ'র হাত ধরে দ্বীন ইসলামের পতাকাতলে শামিল হয়েছেন, তিনি বলেছেন—

"সত্যিকারের মুসলিম বর্তমান জীবনের সঙ্গে সংগত না হলেও আল্লাহর শরিয়তের কোনো আদেশ অমান্য করবে না। তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর যেভাবে চলতে বলেছেন—সেভাবে চলা। আল্লাহর অবাধ্যতায় সে যে দুঃখ পাবে, অন্য কিছুতে সে এতো দুঃখ পাবে না। আল্লাহর আইনকে সে বোঝা মনে করবে না ; বরং আনন্দের সাথে তা মেনে চলবে। "

এখন নিজেকে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিন, আপনি কি সত্যিকারের মুসলিম হবেন নাকি কথিত আধুনিকতাবাদী যুগোপযোগী মুসলিম হবেন!

অবশ্য আধুনিকতাবাদী মুসলমানদের সম্পর্কে উস্তাযা মরিয়ম জামিলা রহ একটা অকাট্য স্পষ্ট সত্য কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন,
আধুনিকতাবাদীরা আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ না করে; বরং তারা চায় আল্লাহ তাদের কাছে নত হোক।



~রেদওয়ান রাওয়াহা
২৭. ১০. ২২ ইং

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ