খুব বেশিই অসহায় লাগছে?




খুব, খুব, খুব বেশিই অসহায় লাগছে? মনটা কি ভেঙে ভেঙে খুব বেশিই চুরমার হয়ে যাচ্ছে?  পারিবারিক অশান্তি? ব্যক্তিগত জীবনের অপ্রাপ্তি? শারীরিক অস্থিরতা আর অসুস্থতায় ধুকে ধুকে জীবনটা বিষিয়ে উঠছে? সহস্র না-পাওয়া, হতাশা আর বঞ্চনা এসে তোমাকে ঘিরে ধরেছে? বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাও একদম মরে গেছে কিংবা মরে যাচ্ছে? প্রতিনিয়তই অসহনীয় আর অসহ্য লাগছে এই দুনিয়াটা? কাউকেই ভালো লাগে না?  কিছুই সহ্য হয় না?


কুরআনের সেই জনপ্রিয় আয়াতটি— নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে—তো  জানো, তাই না? আসলেই তাই। এই যে তোমার এখন দুচোখ বেয়ে অবিরত জল ঝরে। রাত বিরেতে কান্না আসে। দুচোখের পাতায় আগের মতো নির্মল আর প্রশান্তির ঘুম নেমে আসে না। মনের মধ্যেও আসেনা এক চটাক শান্তি আর স্বস্তিও। শরীরটাও খুব বেশি ভালো যাচ্ছে না।


বিশ্বাস করো, এসব বেশিদিন থাকবেনা। একদিন সত্যিই তুমি আবারও আগের মতো হাসতে পারবে। গাইতে পারবে। খাইতে পারবে। পড়তে পারবে। খেলতে পারবে। পাখির কুহতান, নদীর কলতান— ইত্যাদি সবকিছুতেই তুমি বিমুগ্ধ হবে। প্রশান্তির পরশে তোমার দেহ-মন ঝরঝরে সতেজ হবে। 


এই যে আজকে অসুস্থতার আঘাতে তুমি যে মুষড়ে পড়ে আছো, তোমার কলিজার ভেতর যে জখমটা জমে আছে, যে দাগটা সৃষ্টি হয়ে আছে, এই দাগটা তো এক সময় ছিলো না। তাই না? এক সময় তো খুব সুন্দর ছিলো তোমার পৃথিবী। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ঘেরা ছিলো তোমার এই ছোট্ট বুকটা। তোমার দুনিয়াটা। হুট করেই না যন্ত্রণার একটা ঝড়ো হাওয়া এসে তোমার সবকিছুই লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। করে দিয়েছে এলোমেলো....


বিশ্বাস করো, তুমি একটুখানি ধৈর্য ধারণ করে দাঁতে দাঁত খিচিয়ে এসব কিছু সামান্য ক'টাদিন কেবল সহ্য করে যাও। হজম করে যাও। দেখবে তুমি, তোমার সবকিছুই আবারও আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে। পুনরায় তুমি আনন্দের সাথে খেলবে। গাইবে। পড়বে। তোমার সকল কর্মতৎপরতা আবারও গতি পাবে। 


জানো! মাঝেমধ্যে কিছু কষ্টের মুখোমুখি হওয়া ভালো। খুব ভালো। ভীষণ ভালো। এতে করে জীবনে যে সুখগুলো তুমি পূর্বে উপলব্ধি করেছো— সেগুলোর মর্ম বুঝতে শিখবে। যারা তোমার মতো করেই এভাবে দিনের পর দিন যন্ত্রণার যাতনায় কাতরাচ্ছে, তাদের কষ্টগুলোও তুমি অনুভব করতে শিখবে। কে আপন আর কে পর, কে সত্যিই তোমাকে ভালোবাসে আর কে তোমাকে ভালোবাসার অভিনয় করে স্বার্থসিদ্ধি করেছে, কে মুখে মধু বুকে বিষ রেখে চলেছে, কে তোমাকে ভালোবাসার অভিনয় করে বুকে টেনে সেই  বুকে চুরি চালিয়েছে —তা বুঝতে, জানতে আর অনুভব করতে শিখবে। জানো তো, কষ্ট ছাড়া সুখের কোনো মূল্যই নেই। এজন্য এখন একদম ভেঙে পড়বেনা। হতাশ হবে না। 


তোমার জীবনে আজকের এই যে কষ্টের কালো মেঘ  আর দুঃখের প্লাবনগুলো, কিংবা অসুস্থতার আঘাত বা শারীরিক ধকলের দিনগুলো, এক সময় তো এই কষ্টের কালো মেঘ আর দুঃখের দমকা হাওয়াগুলো ছিলো না তোমার জীবনে। এখন এসেছে, আবারও সময়ের আবর্তে তা হারিয়ে যাবে। চলে যাবে। আনন্দরা তোমার চোখেমুখে দীপ্তি ছড়ানো শুরু করবে পুনরায়। ইন শা আল্লাহ। 


শুধু তুমি ধৈর্যের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিটা মোকাবিলা করে যাও। অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয়ই দুখের বৃষ্টির পরেই সুখের সূর্য হাসে। এইটুকু বিশ্বাস করে এগিয়ে চলো নিজ লক্ষ্যপানে। তাহলেই চলবে। মান অভিমানে নিজেকে, নিজের আত্মাকে কষ্ট দিওনা। রব্বুল আলামিনের ওপর বিশ্বাসের ভিত্তিটা নড়বড়ে করে ফেলো না। ক্ষতি নিজেরই হবে এতে। হ্যাঁ, নিজেরই! তোমার হয়ে যাওয়া ক্ষতিগুলোর ভাগ কিন্তু পরে কেউ-ই নেবে না। সত্যিই নেবে না!  হ্যা, সত্যিই.....


#নিজেকে_নাসীহা

~রেদওয়ান রাওয়াহা

https://t.me/RedwanRawaha

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ