প্রথম আলোর আমলনামা
০১. আমি সর্বপ্রথম যে বাক্য দিয়ে এই লেখাটি শুরু করতে চাই, সেটা হচ্ছে এই যে প্রথম আলো পত্রিকা, এটি হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বদবখ্তদের পত্রিকা। তারা বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের দুশমন। সর্বোপরি তারা খোদার দীনের সুস্পষ্ট দুশমন।
আপনারা অনেকেই জানেন কিংবা অনেকেই হয়তো জানেন না, বাংলাদেশে এই প্রথম আলো নামক পত্রিকাই ২০০৭ সালে তাদের পত্রিকায় আল্লাহর রাসূলের (সা.) কার্টুন আঁকার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু এবং আমাদের প্রিয় নবীকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করেছে। এ জঘন্য অপকর্মের বিরুদ্ধে সারাদেশে তখন তীব্র আন্দোলনের ঝড় উঠে।
আমি তখন খুবই পিচ্চি ছিলাম। সেবারই আমি সর্বপ্রথম কোনো প্রতিবাদ-মিছিলে অংশগ্রহণ করেছি, মসজিদ থেকে। আর সেদিন ছিল শুক্রবার। সালাতুল জুমার পরে।
তাওহীদবাদী জনতার প্রতিবাদের তীব্রতায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ক্ষমা চায় বাইতুল মোকারামের তৎকালীন খতিব মাওলানা ওবায়দুল হকের কাছে। ক্ষমা করে দেওয়া হয় তাকে।
০২. ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতার মেয়াদ শেষ করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তখন ভয়ংকর সন্ত্রাসে মেতে উঠে। বিএনপি-জামায়াতের আমলে আগুন সন্ত্রাস, গান পাউডার মেরে অগণিত মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের নামে খুন করে আওয়ামী লীগ। সেটারই ধারাবাহিকতায় ২৮-শে অক্টোবর রাজপথে সাপের মতো পিটিয়ে জামায়াতের নীরিহ ও নিরস্ত্র কর্মীদের শহীদ করে লীগের সন্ত্রাসীরা। তখনও নির্লজ্জভাবে প্রথম আলো আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাপোর্ট দেয়। এরপর এরাই দেশ থেকে নির্বাচন তাড়িয়ে ফখরুদ্দিন-মুঈনুদ্দিনের সেনা শাসন কায়েমের অন্যতম কারিগর হিসেবে কাজ করে।
ওই সময় যখন সেনা শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠে, সেই আন্দোলনেও প্রথম আলো গনবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে। একপর্যায়ে সেনা-শাসনের অবসান ঘটে। কিন্তু তারা ইলেকশন-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতকে হারিয়ে দেয়। এই যে অন্যায়ভাবে, এই যে দুর্নীতির মাধ্যমে বিএনপি বা চারদলীয় জোটকে হারানো হলো, এর পেছনেও সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা পালন করে প্রথম আলো।
০৩. ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। কথিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করে। বিচারের নামে এই প্রহসনকে/খুনকে উস্কে দেওয়ার কাজ সবচেয়ে বেশি যে পত্রিকাগুলো করে, তার শীর্ষে ছিল সন্ত্রাসী মনোভাবাপন্ন এই পত্রিকাটিই।
১৩ সালে জামায়াত নেতা, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার (রহ.) বিরুদ্ধে আওয়ামী ক্যাঙ্গারু কোর্ট ট্রাইবুনাল একটা প্রহসনের রায় দেয়। রায়টি ছিলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু এই রায়টাও শাহবাগী গুণ্ডাদলের সদস্য, নাস্তিক ও নাস্তিকের বাচ্চারা মানতে পারেনি।
নিকৃষ্ট খোদাদ্রহী, কুখ্যাত মুরতাদ-কিং, নাস্তিক ডক্টর হুমায়ন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ, আরেক কুখ্যাত মুরতাদ, নব্য নাস্তিক-কিং আসিফ মহিউদ্দিনসহ একদল নাস্তিক-কমিউনিস্ট-সিপিবি এবং শাহবাগী ব্লগাররা শাহবাগের মোড়ে বসে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে— কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিয়ে খুন করানো। আওয়ামী ক্যাঙ্গারু কোর্ট ট্রাইবুনাল একটা প্রহসনের রায় দিয়েছে, সে রায়ও এই নাস্তিক ও নাস্তিকের বাচ্চাদের পছন্দ হয়নি। তারা ফাঁসি চায়। কেবলই ফাঁসি।
এই দাবিতে শুরু করলো দিনের পর দিন শাহবাগের মোড় দখল করে জামায়াত-শিবির এবং ইসলাম ও আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে ঘৃণা আর বিদ্বেষ ছড়ানো! একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর, কিংবা শিবির ধর, জবাই কর— দিনের পর দিন প্রকাশ্য-দিবালোকে এমন জঘন্যরকম পৈশাচিক মিছিলও চলতে থাকে শাহবাগের মোড়ে!
এই যে এমন নিকৃষ্ট কাজ, এই কাজগুলোর পেছনে সবচেয়ে বড়ো উস্কানি, সবচেয়ে বেশি তেল, সবচেয়ে অধিক রসদ, সবচেয়ে বেশি ভূমিকা যে বা যারা রেখেছে, তাদের সবার শীর্ষে রয়েছে যারা, তাদের অন্যতম হচ্ছে এই প্রথম আলো নামক কুখ্যাত পত্রিকাটি। তারা অনবরত মুরতাদ আর নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করেই গিয়েছে। হাসিনাকে তারা বাধ্য করেছে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে খুন করার জন্য সংবিধান সংশোধন করতে।
এক পর্যায়ে আওয়ামী ক্যাঙ্গারু কোর্ট ট্রাইবুনাল এবং এর বিচারকরা জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে মিরপুরের কসাই কাদের বানিয়ে হত্যা করে। অথচ একাত্তরের পুরো মাসজুড়ে তিনি ছিলেন নিজ গ্রামের জেলা ফরিদপুরে। এবং যুদ্ধপরবর্তী ঢাকার উদয়ন কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে তার থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন।
৭২ সালে, যুদ্ধের ঠিক পরপরই তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আবাসিক ছাত্র ছিলেন। আচ্ছা, এরকম একজন কসাই লোক কি যুদ্ধের ঠিক পরপরই দেদারসে সবার সামনে এসে ঢাবির মতো ক্যাম্পাসে আবাসিক ছাত্র হিসেবে অবস্থান করতে পারে? যুক্তি-বুদ্ধি ও বিবেক কী বলে?
০৪. ২০১৩ সালের ২৮-শে ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় আলিমে দীন, মুফাসসিরে কুরআন, জামায়াত নেতা, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আওয়ামী লীগের ক্যাঙ্গারু কোর্ট এবং বিচারপতি নামক পুতুলেরা ফাঁসির আদেশ দেয়। এমন অন্যায় ও হিংসাত্মক রায়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো দেশ। মানুষ তাদের প্রিয় ব্যক্তিকে, প্রিয় নেতাকে, সর্বোপরি প্রিয় আলিমকে রক্ষার জন্য প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ-কিশোর-তরুণ নির্বিশেষে সবাই!
কিন্তু হাসিনার সন্ত্রাসী বাহিনী, পুলিশ লীগ, র্যাব লীগ সেই প্রতিবাদী মানুষগুলোকে খুবই নির্মমভাবে হত্যা করে। একদিনে প্রায় শতের কাছাকাছি মানুষকে গুলি করে খুন করেছে আওয়ামী প্রশাসন। দুইদিন প্রায় ২০০ প্রতিবাদী মানুষের জীবন কেড়ে নেয় আওয়ামী হায়েনারা, হাসিনার পেটোয়া বাহিনীর গুন্ডারা। কিন্তু আফসোস আর হতাশার বিষয় হচ্ছে তখনও প্রথম আলো নামক এই নিকৃষ্ট অন্ধকারের পত্রিকাটি নির্লজ্জভাবে প্রতিবাদী নিরীহ মানুষগুলোকে নির্মমভাবে খুন করার ব্যাপারে কথা না বলে বরং হাসিনার পেটোয়া বাহিনীর পক্ষে কথা বলেছে। নিরীহ-প্রতিবাদী মানুষগুলোকে খুন করা হলো, একটা প্রতিবাদ এবং বিরোধিতা করেনি মতি মিয়ার প্রথম আলো। বরং তারা ভিক্টিম ব্লেমিং শুরু করলো তখন। "জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব" নামে প্রথম আলোসহ আওয়ামী আর নাস্তিক্যবাদী পত্রিকাগুলোয় বড়ো বড়ো কলাম লেখা এবং অগণিত রিপোর্ট প্রকাশ শুরু হয়।
নিয়মিত সারাদেশে পাখির মতো তখন জামায়াত শিবিরকে হত্যা করা হচ্ছে, আর প্রথম আলো তখন জামায়াত শিবির কর্তৃক কোন রাস্তায় কতোটা গাছ কাটা হয়েছে, কতোটা গাছের নির্মমভাবে(!?) প্রাণসংহার করা হয়েছে, সেটা নিয়ে আবেগী রিপোর্ট করতে ব্যতিব্যস্ত! তাদের কাছে মানুষের চেয়ে গাছপ্রীতিই যেন বেশি মুখ্য!
প্রতিদিন বিভিন্ন ম্যাস, হল, হোস্টেল ও ছাত্রাবাসগুলো থেকে শিবিরের নেতাকর্মীদের ধরে ধরে ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে খুন করা হয়েছে, তখনও এই প্রথম আলো নির্লজ্জভাবে নাস্তিক-শাহবাগীদের তাবেদারি করতে ব্যস্ত ছিল! তাদের শেল্টার দিতে দিতেই মতি মিয়ার দিন-রাত একাকার হয়ে গিয়েছে তখন! তাই আজকের আওয়ামী অপশাসনের দায় এদেরও আছে। শুধু আছে বললে ভুল হবে। সবচেয়ে বেশি দায় এই এদেরই। এবং সাথে বামপন্থীদেরও আছে। তবে দিনশেষে মতি মিয়া নিজেও তো বামপন্থী।
০৫. ১৩ সালের শাহবাগকালীন শাপলার উত্থানকেও প্রথম আলো নিকৃষ্টভাবে বিরোধিতা করেছে। শাহবাগী পাণ্ডারা যখন দীন-ইসলামের বিরুদ্ধে বিষেদাগার ও নাস্তিক্যবাদী কাজকর্ম শুরু করেছে, তখন এদেশের মাটি ও মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করা আলিম-ওলামাগণ ঈমান রক্ষার তাগিদে তাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন। শাপলা চত্বরে সমাবেশ করলেন। তখন এই প্রথম আলো আলিম-ওলামাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা অরাজনৈতিক সংগঠন, হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধেও ঘৃণ্য অপপ্রচার ও অপ-সাংবাদিকতার আশ্রয় গ্রহণ করেছিল ।
৫-ই মে হেফাজতের নেতৃত্বে নিরস্ত্র-নিরীহ জনগণ যখন আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) ইজ্জত-সম্মান সুরক্ষার দাবিতে ময়দানে অবস্থান করেছিলেন, তখন আওয়ামী পুলিশ বাহিনী এই নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষের ওপর হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়লো। অগণিত মানুষকে খুন করলো, হাজারো ঈমানদার জনতাকে আহত করলো, তখনও এই সংবাদপত্র নামক কালপ্রিটগুলো পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বর্বরতার বিরুদ্ধে কথা না বলে বললো, হেফাজতে ইসলামের নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষেরা না-কি তাণ্ডব করেছে!
০৬. এরা যখন বেঈমান আর নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যতিব্যস্ত, তখন স্রোতের বিপরীতে যে কয়জন সাংবাদিক ছিল, যে দুয়েকটা সংবাদ মাধ্যম ঈমানদারদের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান গ্রহণ করছিল, তার মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, মজলুম সাংবাদিক, সাহসী সম্পাদক, জনাব মাহমুদূর রহমান এবং তার আমার দেশ পত্রিকা সবার শীর্ষে ছিল। কিন্তু কমিউনিস্ট মতিউর রহমানের প্রথম আলো নামক কুখ্যাত পত্রিকাটি "আমার দেশ" পত্রিকাটির বিরুদ্ধেও নিকৃষ্ট প্রপাগাণ্ডা চালিয়েছে। "আমার দেশ" পত্রিকার বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ করেছে, "আমার দেশ" নাকি ইসলাম ধর্মকে সাংবাদিকতায় ব্যবহার করে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করেছে। সাংবাদিকতার সংস্কৃতি ও নৈতিকতার বিরোধী, ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক কাজকর্ম এবং লেখালেখি করেছে !
প্রথম আলো কেন আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে লেগেছিল, জানেন? আপনি যদি সে সময়কার পত্রিকাগুলো খুলে দেখেন, দেখবেন যে, "আমার দেশ" যেসব কুখ্যাত ইসলাম বিদ্বেষী-নাস্তিকদের পরিচয় এবং নিকৃষ্ট কাজগুলোকে প্রকাশ করেছেন, সেটাকেই তারা দোষ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
০৭. প্রথম আলো কেবল এসবেই থেমে থাকেনি, তারা শিশু-কিশোর ও তরুণদেরকে সুকৌশলে ইসলাম বিরোধী, দীন-ধর্ম ও শালীনতার পথ থেকে সরিয়ে নেওয়ার কার্যকরী এজেন্ডাও হাতে নিয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবির যেখানে স্কুলের কিশোর-তরুণ ছাত্রদেরকে আদর্শ মানুষ, সত্যিকারের সুনাগরিক, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অধিকারী একজন আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে তৈরি করার জন্য সুদীর্ঘকাল থেকে "কিশোর কণ্ঠ" নামক ম্যাগাজিনটির মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো, তখন প্রথম আলো এটাকে টক্কর দেওয়ার জন্য বের করলো "কিশোর আলো"!
এই কিশোর কণ্ঠ বা "কিশোর কণ্ঠ পাঠক ফোরাম"— এর মাধ্যমে ছাত্রশিবির কখনোই দলীয় নেতাকর্মী তৈরির কাজ করতো না ওই অর্থে। কখনও তাদেরকে শিবিরের দাওয়াতও খুব একটা দিতো না। স্কুলগুলোতে যেহেতু ইসলাম ও কুরআন-হাদিস খুব একটা শেখানো হয় না, ইসলামের বিধিবিধান মানতে খুব একটা উৎসাহিত করা হয় না, তাই তারা কেবলই ছাত্রদেরকে একজন আদর্শ মুসলিম, সুনাগরিক, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ার জন্য চেষ্টা চালাত। কিন্তু প্রথম আলো কিশোর কণ্ঠের আইডিয়া নকল করে কিশোর আলো বের করলো। এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের ধর্মীয় মূল্যবোধ নষ্ট করে দেওয়ার নিকৃষ্ট আয়োজন করেছে। ফ্রি-মিক্সিং, অবৈধ নাচগান তথা সংস্কৃতির নামে নষ্টামিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেছে। এখনো করে যাচ্ছে।
শিশু-কিশোরদের কাছে জাফর ইকবাল নামক একজন নকলবাজ, ইসলাম বিরোধী নাস্তিক ও নিকৃষ্ট আওয়ামী দালালকে সুপার হিরো হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এরকম নানাভাবেই তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ—মুসলমানদের ঘরে ঘরে নাস্তিক ফয়দা করার হীন এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
আজকে বিএনপির মধ্যে যে কতিপয় শাহবাগী ছানাপানার উৎপাত শুরু হয়েছে, কিংবা ইসলামি মূল্যবোধের প্রতি কিছুটা অনুরক্ত বিএনপির যে ধীরে ধীরে ধীরে ধীরে পদস্খলন হচ্ছে— এটার মূল কারিগরও প্রথম আলো। এমনকি আজকের যে বাংলাদেশ, বা আজকের যে হাসিনার স্বৈরশাসন— এর জন্যও প্রধানত দায়ী হচ্ছে শাহবাগী প্রথম আলো এবং বামপন্থী শয়তানেরা।
০৮. প্রথম আলো এখন যে হাসিনার হাতে বাম্বু খাচ্ছে, এটা তার প্রাপ্য ছিল। কারণ, এই প্রথম আলোই তো সুদীর্ঘকাল থেকে বিএনপি-জামায়াত এবং ইসলামপন্থীদের ওপর জুলুমের ব্যাপারে বা তাদের বাম্বু দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগকে উসকানি দিয়ে গিয়েছিল। এখন হাসিনা যখন বাম্বু দিয়ে সকলকে দাবিয়ে দিয়েছে, তখনই এবার প্রথম আলো তার পশ্চিমা প্রভুদের প্রেসক্রিপশনে হাসিনার বিরুদ্ধে বা হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে কলম ধরেছে। কারণ, তারা যেন হাসিনার চাইতেও কড়াভাবে ইসলামিস্টদের শায়েস্তা করতে পারে। হাসিনার চাইতেও উগ্রভাবে যেন ইসলামকে রুখে দিতে পারে। কিন্তু হাসিনা তো সহজ মাল না। সে তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে কি আসলেই সহ্য করবে? করবে না তো। তাই হাসিনা মতি মিয়ার প্রথম আলোকে ধরছে। এর মাধ্যমে কালো বেড়াল খ্যাত, আওয়ামী নেতা, সুরঞ্জিত বাবুর একটা কথা আবারো সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একবার বলেছিলেন যে, বাঘে ধরলে ছাড়ে কিন্তু শেখের মেয়ে ধরলে ছাড়ে না!
আমিও চাই হাসিনা প্রথম আলোকে আরো বাম্বু দিক। হাসিনা তো ইসলামিস্টদের বাম্বু দিলো। বিএনপি এবং নুরুদেরকেও দিলো। যাবার আগে না হয় কড়া করে প্রথম আলো এবং বামপন্থী মতিউরকেও দিক। যেন এদের কিছুটা হলেও শিক্ষা হয়। কিছুটা বোধদয় হয়। যদিও এদের বোধদয় ঘটার সম্ভাবনা নেই। কারণ, এরা চতুষ্পদ জন্তুর চাইতেও অদম।
০৯. আওয়ামী লীগ এবং প্রথম আলোর এই কামড়াকামড়ি আমরা দেখব, শাহবাগীদের মুখপাত্র পত্রিকাটির বিরুদ্ধে এসে অন্য শাহবাগী গ্রুপ মানবন্ধন করবে, তাদের এককালের পৃষ্ঠপোষক দোস্তদের নিবন্ধন বাতিল করতে বলবে; এরচেয়ে নান্দনিক উপভোগ্য দৃশ্য আমাদের কাছে আর কী হতে পারে?
এখানে "প্রথম আলো" আওয়ামীদের বিরুদ্ধে সফল হলেও আমাদের লাভ, আবার হাসিনা বাম্বু দিয়ে প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিল করলেও আমাদের লাভ। কারণ, উভয়ে মিলেমিশেই আমাদের অগণিত ক্ষতি করেছে। আমাদের বহু কিছু কেড়ে নিয়েছে। আমাদের স্বপ্ন, আমাদের সময়, আমাদের বাড়ি-ঘর আমাদের সুন্দর ও সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-যাপন; সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে। আমরা এখন আর হারানোর খুব বেশি কিছু নেই। আমরা যা হারাবার, হারিয়ে ফেলেছি। আমরা এখন দুই শাহবাগীর কামড়াকামড়ি দেখব, উভয়ের মধ্যে যে-ই জিতুক বা যে-ই হারুক, এতে আমাদের খুব একটা ক্ষতি নেই। বরং আমাদের মতো মজলুমদের শক্তি প্রয়োগ ছাড়া জালিমে-জালিমে কামড়াকামড়িতে যদি কোনো একপক্ষ ধরাশায়ী হয়, এতে আমাদেরই লাভ। দুর্বল কিংবা মজলুমের লাভ বলতে হয়তো এতোটুকুই যে, জালিমের পতনের মাধ্যমে তাদের অন্তরে একটু তৃপ্তি আসে!
~রেদওয়ান রাওয়াহা
১৩.০৪.২৩
Comments
Post a Comment