"এমন জীবন তিনি করেছে গঠন"


০১. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন সাহাবি ছিলেন। নাম ছিলো তার সাদ ইবনে মু'আজ। যিনি মাত্র ৩৭ বছর দুনিয়ায় বেঁচে ছিলেন। তিনি আবার ইসলামও গ্রহণ করেছেন জীবনের শেষ অংশে। একত্রিশ বছর বয়সে। সে হিসেবে তাঁর ইসলামি জিন্দেগির বয়স কেবল ছয় বছর! এই ছয় বছরে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির চূড়ান্ত চূড়ায় আরোহন করেছিলেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ সন্তুষ্ট ছিলেন। মূলত মৃত্যুর আগে তিনি একটি বিচারের ফায়সালা প্রদান করেন। তখন তাঁকে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ‘তুমি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ফয়সালা করেছো।’


০২. এই যে তাঁর এই ছয় বছরের সামান্য জিন্দেগি, এই ছয় বছরের জীবনে দ্বীনের জন্য যতোগুলো জিহাদ তখন সংঘটিত হয়েছিলো, তিনি সবক'টি জিহাদেই অংশগ্রহণ করেছেন। আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য বীর বিক্রমে লড়াই করেছেন। বদর-ওহুদে গাজির মর্যাদা লাভ করে খন্দকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শাহাদাতের অমীয় সুধা পানে ধন্য হয়েছেন। মূলত খন্দকে তিনি এক মুশরিক যোদ্ধার নিক্ষিপ্ত একটি তিরের আঘাতে ভীষণ আহত হন। তবে তিনি আল্লাহর কাছে বিশ্বাস ঘাতক বনু কুরাইজার বিচার-ফয়সালার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত হায়াত চেয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁকে তখন অবধি হায়াত দান করেছেন। এরপর যখন তিনি বনু কুরাইজার বিশ্বাস ঘাতক ইহুদিদের ব্যাপারে ফায়সালা প্রদান করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, বনু কুরাইজার সাথে ছিলো তাঁর গোত্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তবুও তিনি সেটাকে প্রাধান্য না দিয়ে আল্লাহর দীনকে প্রাধান্য দিয়েছেন। দিয়েছেন ন্যায় ও ইনসাফকে প্রাধান্য। আর তাঁর এই ফায়সালার কারণেই তাঁকে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে,
‘তুমি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ফয়সালা করেছো।’

তিনি বিচার ফায়সালা করেছেন যখন, এর কিছুক্ষণ পরপরই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। আর তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথেই আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিলো। আসমানের সবকটি দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। স্বয়ং জিবরাঈল আলাইহিসসালাম নিজেই তাঁর মৃত্যুর পর আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে জিগ্যেস করলেন,
কে মৃত্যুবরণ করেছে, যাঁর জন্য আসমানের সকল দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এবং যাঁর কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার আরশে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে?


০৩. দেখুন, এরচেয়ে চমৎকার এক সুন্দর ও শ্রেষ্ঠ জীবন আর কী হতে পারে, যে জীবনের শেষ মুহূর্ত অবধি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের সন্তোষ ঘিরে থাকে তাঁর বান্দাকে? ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে দীনকে প্রাধান্য আমরা কতোটুকুনই-বা দিই? কিন্তু সাদ বিন মু'আজ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দিয়েছেন।

কতো মানুষই তো কতোভাবে মারা যায়, কিন্তু আল্লাহর দীনের জন্য জিহাদ করতে করতে বাতিলের বুলেটের আঘাতে তপ্ত লহু ঝরে কয়জনার? শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করার সৌভাগ্য আসে কয়জনার ভাগ্যে? কতো মানুষেরই তো জানাজা হয়, মৃত্যু হয়, ফেরেশতারা দলবদ্ধভাবে এসে জানাজা পড়ে এবং পড়েছে ক'জনার? আল্লাহর আরশের দরজাসমূহ এভাবে কার জন্যই-বা উন্মুক্ত করা হয় বা হয়েছে? কয়েক হাজার-কোটি মিলিয়ন বিলিয়ন মানুষই তো দুনিয়ায় এসেছে ও বিদায় নিয়েছে, সাদ বিন মু'আজ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মতো করে কয়জনকেই বা পৃথিবীর মানুষ স্মরণ করে। পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য তো এমনই একটা জীবন চাই। তাই না?

হয়তো কবি আমি এবং আমাদেরকেও এরকমই একটা দারুণ জীবন গঠন করার জন্যই বলেছেন-
এমন জীবন তুমি করিবে গঠন
মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।


~রেদওয়ান রাওয়াহা

তথ্যসূত্র :

. সুনানে নাসায়ী-২০৫৯
. আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৪র্থ খণ্ড, ১২৬-১২৭

#বদলে_যাওয়া_বদলে_দেওয়া

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ