নব্য যুগের মুসলমান
মাওলানা মওদূদী রহ. এর কথাগুলো আপনার মনের কথাই বলবে। তিনি বলেন.....
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ও উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভকালে পাশ্চাত্য জাতিসমূহের দেশ জয়ের প্লাবন প্রচণ্ড ঝঞ্জাবেগে মুসলিম দেশগুলোকে নিমজ্জিত করে ফেলেছিল। এই সময়ে মুসলমানগণ অর্ধনিদ্রিত ও অর্ধজাগ্রত অবস্থায় ছিল এবং দেখতে দেখতে এই ঝঞ্জা-প্লাবন প্রাচ্য হতে আরম্ভ করে প্রতীচ্যের সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে গ্রাস করে ফেললো। উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে উপনীত হতে না হতেই অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্র ইউরোপের গোলাম হয়ে পড়লো এবং অপরাপর দেশগুলো গোলাম না হলেও পরাভূত ও প্রভাবিত হয়ে পড়লো। এই সর্বধ্বংসী বিপ্লব পূর্ণ দানা বেধে উঠবার পর মুসলমানদের চক্ষু উন্মিলিত হতে লাগলো। দিগ্বিজয় ও রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে উন্নতিশীল মুসলমানদের যে জাতীয় গৌরব সৃষ্টি হয়েছে, তা অপ্রত্যাশিতরূপে ধূলিস্মাৎ হয়ে গেল। অতঃপর ক্ষমতাবান শত্রুর উপর্যুপরি আঘাতে মাদকতামুক্ত মদ্যপায়ীর ন্যায় তারা স্বীয় পরাজয় এবং ইউরোপীয়দের জয় লাভের কারণ সম্পর্কে গবেষণা করতে লাগলো। কিন্তু তখনও মস্তিষ্ক প্রকৃতিস্থ হয়নি। মাদকতা যদিও কেটে গেছে, কিন্তু মানসিক ভারসাম্য তখনও বিকল রয়ে গিয়েছে। একদিকে অপমান-অসম্মানের তীব্র অনুভূতি তাদের এরকম হীন অবস্থার পরিবর্তন সাধনের জন্যও চাপ দিতেছিল। অপরদিকে বহু শতাব্দীর বিলাসপ্রিয় শ্রমবিমুখ জীবনপদ্ধতির অবস্থা পরিবর্তনের সহজতম ও নিকটতমপন্থা অনুসন্ধান করতেছিল।
উপরন্তু তারা জ্ঞান-বুদ্ধি ও চিন্তা-বিবেচনার জীর্ণ শক্তিগুলোকে কাজে নিয়োজিত করতে অনভ্যস্থ হয়ে পড়ছিল। এছাড়া পরাভূত গোলাম জাতির মধ্যে অপ্রত্যাশিতরূপে যে সন্ত্রস্ততা ও ভয়বিহবলতার সৃষ্টি হয়, তাও তাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল। এহেন বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণের ফলে সংস্কারপ্রিয় মুসলমানগণ নানাবিধ কল্পনাত্মক ও ব্যবহারিক পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ছিল।
তাদের অধিকাংশই নিজেদের হীনতা, দুর্নীতি ও ইউরোপের উন্নতি লাভের প্রকৃত হেতুই অনুধাবন করিতে পারলো না। আবার যারা অনুধাবন করলো, তাদের মধ্যেও এতটুকু সৎ সাহস, সহনশীলতা এবং সংগ্রামী মনোভাব ছিল না যে, যা উন্নতির দুর্গম পথ অতিক্রম করে।
এ উভয় দলের মধ্যেই দুর্বলতা ও ভয়বিহ্বলতা সমানভাবে বিদ্যমান ছিল। এরূপ বিভ্রান্ত মানসিকতায় তাদের উন্নতির সহজপন্থা এই ছিল যে, পাশ্চাত্য তাহজিব-তমদ্দুনের বাহ্যিকদৃশ্যাবলি তারা তাদের জীবনে প্রতিফলিত করে এবং স্বয়ং এমন দর্পণ হয়ে যায় যার অভ্যন্তরে সুরম্য উদ্যান ও বসন্ত কান্তিরাজির মনোহর দৃশ্যপট প্রতিবিম্বিত হয়, অথচ প্রকৃত উদ্যান ও তার সৌন্দর্য শোভার কোনো অস্তিত্বই থাকে না।
মানসিক দাসত্ব
ব্যাধির এই চরম পর্যায়ে পাশ্চাত্য বেশভূষা, সমাজব্যবস্থা, সাহিত্য-কলা, আচার-আচরণ, চাল-চলন প্রভৃতি অনুকরণ করতে লাগলো। এমনকি বাকভঙ্গিমাতেও তাদের মধ্যে পাশ্চাত্য অনুকরণ প্রকট হয়ে পড়লো। মুসলমান সমাজকে পাশ্চাত্য আদর্শে ঢেলে সাজাবার প্রচেষ্টা চলতে লাগলো।
খোদাদ্রোহিতা, নাস্তিকতা ও জড়বাদিত্ব অন্ধের ন্যায় ‘ফ্যাশান’ হিসেবে গৃহীত হলো। পাশ্চাত্যের আমদানিকৃত স্পষ্ট অথবা অস্পষ্ট চিন্তাধারা ও মতবাদের প্রতি অন্ধের ন্যায় বিশ্বাস স্থাপন করা এবং বৈঠকাদিতে সেগুলোকে আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে উপস্থাপিত করা পরিচ্ছন্ন চিন্তাধারার পরিচায়ক মনে করা হলো।
মদ্যপান, জুয়া, লটারি, ঘোড়দৌড়, থিয়েটার, নৃত্যগীত ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতপ্রসূত অন্যান্য বিষয়ও তার সঙ্গে গৃহীত হলো। শ্লীলতা, নৈতিকতা, সামাজিক আদানপ্রদান, জীবিকা অর্জন, রাজনীতি, আইন-কানুন এমনকি ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুষ্ঠানাদি বিষয়ক যত প্রকার দৃষ্টিভঙ্গী ও কর্ম পদ্ধতি ছিল, তা সবই বিনা প্রতিবাদ ও চিন্তা-গবেষণায় আকাশ হতে অবতীর্ণ ওহীর ন্যায় –‘শুনলাম এবং ও মানলাম’–বলে গ্রহণ করতে লাগলো।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি, ইসলামী শরীয়তের নির্দেশাবলি ও কুরআন-হাদিসের বর্ণনাগুলোর প্রতি অতীতের ইসলাম বিদ্বেষীগণ যেরূপ ঘৃণা পোষণ ও প্রতিবাদ করেছিল, এই যুগের মুসলমানগণও তদ্রুপ এর জন্য লজ্জাবোধ করতে লাগলো এবং তারা এই কলঙ্ক মোচনে সচেষ্ট হয়ে উঠলো।
পাশ্চাত্যের শ্বেতাঙ্গ প্রভুগণ ইসলামী জিহাদের তীব্র সমালোচনা করলো। এই লোকেরাও (মুসলমানগণ) প্রভুদের চরণে কৃতাঞ্জলি নিবেদন করে বললো, ‘হুজুর কোথায় আমরা আর কোথায় জিহাদ!’
তারা দাস প্রথার সমালোচনা করলো। এরা বলা শুরু করলো, ‘এটা তো ইসলামে একেবারেই নিষিদ্ধ।‘
তারা বহু বিবাহের সমালোচনা করলে এরাও তৎক্ষণাৎ কুরআনের একটি আয়াত বা নির্দেশকে রহিত করে দিলো।
তারা বললো, ‘নারী ও পুরুষের মধ্যে পূর্ণ সাম্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়।’
এরা বলা শুরু করলো, ‘আরেহ, এটাই তো আমাদের ধর্মের মূল কথা।’
তারা বিয়ে-তালাকের সমালোচনা করলে এরা সেসব সংশোধনীর জন্য তৎপর হয়ে পড়লো।
তারা বললো, ‘ইসলাম তো শিল্পকলার শত্রু।’
এরা তদুত্তরে জবাব দিলো, ‘হুজুর! ইসলাম তো চিরকালই নৃত্য-গীত, চিত্রাংকন ভাস্কর্যের পৃষ্ঠপোষকতা করিয়া আসিয়াছে।’
পর্দা প্রসঙ্গে সূচনা
মুসলমানদের জাতীয় ইতিহাসে এটাই সর্বাপেক্ষা নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক যুগ। যেহেতু এই যুগেই পর্দা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। তর্কের বিষয়বস্তু যদি এই হতো যে, ইসলাম স্বাধীনতার কী সীমা নির্ধারণ করেছে, তা হলেও এর জওয়াব মোটেই কঠিন হতোনা। কারণ, এ ব্যাপারে যতটুকু মতানৈক্য পরিদৃষ্ট হয় তা এই পর্যন্ত যে, নারী তার মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় অনাবৃত রাখিতে পারে কিনা; আসলে এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতভেদ না। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এর স্থলে অন্যরূপ। মুসলমানদের মধ্যে এই প্রশ্ন এইজন্য উত্থিত হয়েছে যে, ইউরোপ ‘হেরেম’ পর্দা ও নারীর বাহ্যিক পোশাককে ঘৃণার চোখে দেখেছে।
ইউরোপীয়গণ তাদের সাহিত্যে এর ঘৃণাব্যঞ্জক ও বিদ্রুপাত্মক চিত্র অঙ্কনত করছে, ইসলামের দোষত্রুটির তালিকায় নারীদের ‘অবরোধ’কে (পর্দা) বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে।
ইউরোপ যখন পর্দাকে ঘৃণার বিষয় বলে পরিত্যাগ করছে তখন তাদেরই মানসিক দাসানুদাস মুসলমানদের পক্ষে কেমন করে এটা সম্ভব যে, এর জন্য তারা স্বভাবতই লজ্জা বোধ করবে না? তারা জিহাদ, দাসপ্রথা, বহুবিবাহ ও এরকম অন্যান্য ব্যাপারে যে ব্যবস্থাবলম্বন করেছে, এ বিষয়েও সেটাই করলো।
তারা কুরআন, হাদিস এবং ফিকাহতত্ববিদ ইমামগণের গভীর গবেষণাপ্রসূত গ্রন্থাবলির পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উলটাতে লাগলো। উদ্দেশ্য এই ছিল যে, সেই কুৎসিত কলঙ্ক কালিমা অপনোদনের জন্য কোনো উপায়-উপাদান তার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় কি-না।
অবশেষে জানতে পারা গেল যে, কোনো কোনো ইমাম হাত ও মুখমণ্ডল অনাবৃত রাখবার অনুমতি দিয়েছেন। জানা গেল যে, নারী তার জরুরি কাজের জন্য ঘর হতে বের হতে পারে। উপরন্তু আরও জানতে পারা গেল যে, নারী যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের পানিও পান করাতে এবং আহতদের সেবা করতে পারে। নামাজের জন্য মসজিদে এবং শিক্ষাগ্রহন ও শিক্ষাদানের জন্য অন্যত্র গমন করতে পারে। ব্যস, এটুকুই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল।
অতঃপর তারা ঘোষণা করলো, ‘ইসলাম নারীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দান করেছে। পর্দা নিছক অন্ধ বর্বর যুগের একটি প্রাচীনপ্রথা মাত্র। ইসলামের প্রাথমিক যুগের (খিলাফতে রাশেদার) বহু পরে সংকীর্ণমনা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলমানগণ এটার প্রচলন করছে। কুরআন-হাদিসে পর্দার কোনো নির্দেশ নেই। এর মধ্যমে লজ্জা-সম্ভ্রম সম্পর্কে নৈতিক শিক্ষা দান করা হয়েছে কেবল। এমন কোনো নীতি নির্ধারিত হয়নি, যার দ্বারা নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।’
পাশ্চাত্যের শ্বেতাঙ্গ প্রভুগণ ইসলামী জিহাদের তীব্র সমালোচনা করলো। এই লোকেরাও (মুসলমানগণ) প্রভুদের চরণে কৃতাঞ্জলি নিবেদন করে বললো, ‘হুজুর কোথায় আমরা আর কোথায় জিহাদ!’
তারা দাস প্রথার সমালোচনা করলো। এরা বলা শুরু করলো, ‘এটা তো ইসলামে একেবারেই নিষিদ্ধ।‘
তারা বহু বিবাহের সমালোচনা করলে এরাও তৎক্ষণাৎ কুরআনের একটি আয়াত বা নির্দেশকে রহিত করে দিলো।
তারা বললো, ‘নারী ও পুরুষের মধ্যে পূর্ণ সাম্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়।’
এরা বলা শুরু করলো, ‘আরেহ, এটাই তো আমাদের ধর্মের মূল কথা।’
তারা বিয়ে-তালাকের সমালোচনা করলে এরা সেসব সংশোধনীর জন্য তৎপর হয়ে পড়লো।
তারা বললো, ‘ইসলাম তো শিল্পকলার শত্রু।’
এরা তদুত্তরে জবাব দিলো, ‘হুজুর! ইসলাম তো চিরকালই নৃত্য-গীত, চিত্রাংকন ভাস্কর্যের পৃষ্ঠপোষকতা করিয়া আসিয়াছে।’
পর্দা প্রসঙ্গে সূচনা
মুসলমানদের জাতীয় ইতিহাসে এটাই সর্বাপেক্ষা নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক যুগ। যেহেতু এই যুগেই পর্দা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। তর্কের বিষয়বস্তু যদি এই হতো যে, ইসলাম স্বাধীনতার কী সীমা নির্ধারণ করেছে, তা হলেও এর জওয়াব মোটেই কঠিন হতোনা। কারণ, এ ব্যাপারে যতটুকু মতানৈক্য পরিদৃষ্ট হয় তা এই পর্যন্ত যে, নারী তার মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় অনাবৃত রাখিতে পারে কিনা; আসলে এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতভেদ না। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এর স্থলে অন্যরূপ। মুসলমানদের মধ্যে এই প্রশ্ন এইজন্য উত্থিত হয়েছে যে, ইউরোপ ‘হেরেম’ পর্দা ও নারীর বাহ্যিক পোশাককে ঘৃণার চোখে দেখেছে।
ইউরোপীয়গণ তাদের সাহিত্যে এর ঘৃণাব্যঞ্জক ও বিদ্রুপাত্মক চিত্র অঙ্কনত করছে, ইসলামের দোষত্রুটির তালিকায় নারীদের ‘অবরোধ’কে (পর্দা) বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে।
ইউরোপ যখন পর্দাকে ঘৃণার বিষয় বলে পরিত্যাগ করছে তখন তাদেরই মানসিক দাসানুদাস মুসলমানদের পক্ষে কেমন করে এটা সম্ভব যে, এর জন্য তারা স্বভাবতই লজ্জা বোধ করবে না? তারা জিহাদ, দাসপ্রথা, বহুবিবাহ ও এরকম অন্যান্য ব্যাপারে যে ব্যবস্থাবলম্বন করেছে, এ বিষয়েও সেটাই করলো।
তারা কুরআন, হাদিস এবং ফিকাহতত্ববিদ ইমামগণের গভীর গবেষণাপ্রসূত গ্রন্থাবলির পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উলটাতে লাগলো। উদ্দেশ্য এই ছিল যে, সেই কুৎসিত কলঙ্ক কালিমা অপনোদনের জন্য কোনো উপায়-উপাদান তার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় কি-না।
অবশেষে জানতে পারা গেল যে, কোনো কোনো ইমাম হাত ও মুখমণ্ডল অনাবৃত রাখবার অনুমতি দিয়েছেন। জানা গেল যে, নারী তার জরুরি কাজের জন্য ঘর হতে বের হতে পারে। উপরন্তু আরও জানতে পারা গেল যে, নারী যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের পানিও পান করাতে এবং আহতদের সেবা করতে পারে। নামাজের জন্য মসজিদে এবং শিক্ষাগ্রহন ও শিক্ষাদানের জন্য অন্যত্র গমন করতে পারে। ব্যস, এটুকুই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল।
অতঃপর তারা ঘোষণা করলো, ‘ইসলাম নারীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দান করেছে। পর্দা নিছক অন্ধ বর্বর যুগের একটি প্রাচীনপ্রথা মাত্র। ইসলামের প্রাথমিক যুগের (খিলাফতে রাশেদার) বহু পরে সংকীর্ণমনা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলমানগণ এটার প্রচলন করছে। কুরআন-হাদিসে পর্দার কোনো নির্দেশ নেই। এর মধ্যমে লজ্জা-সম্ভ্রম সম্পর্কে নৈতিক শিক্ষা দান করা হয়েছে কেবল। এমন কোনো নীতি নির্ধারিত হয়নি, যার দ্বারা নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।’
~মাওলানা মওদূদী রহ.
Comments
Post a Comment