কেন সব অপকর্মে বিএনপি আওয়ামীদের শূন্যস্থান পূরণ করছে?

 



দুটো জিনিস স্বীকার করতেই হবে— নিঃসন্দেহে আওয়ামীদের তুলনায় বিএনপি সবদিকেই কিছুটা হলেও উত্তম এবং ভালো। পুরো আওয়ামী গোষ্ঠীর মতো এখানে সবাই তীব্র ইসলামফোব না। তৃণমূলে না হলেও আওয়ামী নেতৃত্বের বিশাল একটা অংশ যে ইসলাম বিদ্বেষী, এটা তো ওপেন সিক্রেট একটা ব্যাপার।

কিন্তু এর পাশাপাশি এটাও স্বীকার করতে হবে— আওয়ামী গুণ্ডাতন্ত্রের হেন কোনো অপকর্ম নেই, যা কমবেশি বিএনপি বা এর অঙ্গসংগঠনগুলো—বিশেষত ছাত্রদল-যুবদল করে না বা করেনি।

একেবারে চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, দখলদারি, অস্ত্রবাজি-টেন্ডারবাজি, খুন-ধর্ষণ, একেবারে হেন কোনো অপকর্ম নেই, যা তারাও করে না। এমনকী এই পাচ-ই আগস্ট আওয়ামীদের পতনের পরপরই ছাত্রলীগ যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের শূন্যস্থানটা দেশের প্রায় বহু জায়গায় ছাত্রদল-যুবদল-বিএনপি পূরণ করে ফেলেছে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে— মুজিবের মতো একটা ঐতিহাসিক মিথ্যুক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচার, খু নি আর ভোট ডাকাতের হাত থেকে জিম্মি হওয়া বাংলাদেশকে মুক্তি এনে দেওয়া শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেই দল গঠন করেছেন— যেই জিয়া সুনামের সাথে দেশ পরিচালনা করেছেন, মুসলিম আইডেন্টিটির প্রতি যেই জিয়া এতো যত্নশীল ছিলেন—সেই জিয়ার দলের ছাত্র-যুবকদের এই দুর্দশার কারণ কী?

হ্যাঁ, আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন— তারা কি লীগের চেয়েও বেশি খারাপ? লীগের মতোই কুখ্যাত? না, ঠিক তা না। কিন্তু লীগের নোংরা ও সর্বনাশা যে সকল কর্মকাণ্ড এবং আদর্শ রয়েছে, সেসবই তো তাদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চভাবে হলেও বিদ্যমান।

যাই হোক, প্রশ্ন হলো এর কারণ কী? আমার দৃষ্টিতে এর কারণ হচ্ছে আদর্শিক প্রশিক্ষণ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চা এবং সে অনুযায়ী নেতৃত্ব গঠনের যে ঘাটতি, সেই ঘাটতির কারণে এই অবস্থা।

মূলত, ধর্ম ছাড়া সর্বোচ্চ মোরালিটি কেউই আপনাকে দিতে পারবে না। যেই দল ধর্মকে যতোটুকু ধারণ করবে, সেই দল ততো বেশি পরিচ্ছন্ন হবে। সেই দল ততোধিক ভালো হবে। সেই দলের নেতাকর্মীরা ততোটা বেশি পরিচ্ছন্ন হবে। হবে সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতিশীল এবং মানবতার প্রতি দরদী।

একটা সেক্যুলার আদর্শের দলের কিছু নেতা যতোই ভালো হোক, যতোই জনদরদী হোক, আল্টিমেটলি সেই দলটাকে তিনি ভালো রাখতে পারবেন না। পারবেন বলতে পারবেন না!

সেক্যুলারিজম নামক কু ফরের যেই অনিষ্টকারিতা, সেটা আপনাকে বা আপনার দলকে গ্রাস করবেই। যেকোনো সময়, যেকোনোভাবেই করবে।

এমনকী যদি বিশ্বব্যাপী সেক্যুলারিজমের কবর রচনা না হয়, তবে নিরেট ইসলামী দলগুলোর মধ্যেও কোনো না কোনো মাত্রায় সমাজ-সভ্যতা বিধ্বংসী উপাদানগুলো প্রভাব ফেলবে। ফেলবেই। ফেলতে বাধ্য।

তাহলে, এখন মোটাদাগে এটাই বলা যায় যে, আওয়ামী মাফিয়াদের হেন কোনো অপকর্ম নেই, যা বিএনপি বা ছাত্রদল বাদ দিয়ে থাকতে যে পারছে না— এর প্রধান কারণ হলো সেক্যুলারিজম। এর কারণ হলো ধর্মীয় মূল্যবোধের চরম মাত্রার ঘাটতি। সাথে প্রাসঙ্গিক আরো টুকটাক কিছু থাকতে পারে। কিন্তু প্রধান কারণ সেকুলারিজম। ইসলামী মূল্যবোধ বলি বা ধর্মীয় মূল্যবোধ বলি— সেটা থেকে দূরত্ব!

তাহলে এখন আমাদের করণীয় হলো— এই সভ্যতার, এই সমাজের, এই দুনিয়ার, সর্বপরি এই রাষ্ট্রের উপকারের জন্যই, কল্যাণের জন্যই দলমত নির্বিশেষে আমাদেরকে সেক্যুলারিজমকে উচ্ছেদ করে তদস্থলে আল্লাহ প্রদত্ত আদ-দীনকে বিজয়ী করার এবং এই দীন অনুযায়ী দল-সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।

এছাড়া বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির আর কোনো পথ নেই। মুক্তির একপথ, ইসলামী হুকুমত।

এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই না, সারা বিশ্বের জন্যই এটা প্রযোজ্য। মানুষের মনগড়া তন্ত্রমন্ত্রকে উচ্ছেদ করে দীন কায়েম ছাড়া শান্তি কোথাও মিলবে না। কোনোভাবেই মিলবে না। বাস্তবতা এটাই। হয়তো আমরা উটপাখির মতো মুখ লুকিয়ে বাস্তবতা অস্বীকার করে যেতে পারবো। কিন্তু এই চিরসত্য পাল্টাবে না।

প্রশ্ন হলো— আমরা মানুষেরা কি এই বাস্তবতা সহজেই অনুধাবন করতে পারবো? নাকি সেক্যুলারিজমের কুফরকে আঁকড়ে ধরে শান্তির সোনালি সমাজ কায়েমের পথ থেকে পিছিয়েই থাকবো?

~রেদওয়ান রাওয়াহা
১০-১০-২৪ ইং

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ