জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ : লাভ না ক্ষতি হলো?

 




স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার কর্তৃক জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সকল অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। এটা যে কেবল আজকেই করা হয়েছে, তা না। এর আগে আরো দুইবার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করায় লাভ হলো না ক্ষতি হলো? 

আমি মনে করি নিঃসন্দেহে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করায় মূলত জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরেরই লাভ হলো। এই সময় জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবির তাদের আদর্শিক বুনিয়াদ আরো মজবুত করতে পারবে। তাদের রাজনৈতিক ময়দানে সময় এবং পেরেশানি আগের তুলনায় কম হবে।


ফলস্বরূপ তারা আত্মগঠন-মানোন্নয়নে আরো মনোনিবেশ করতে পারবে। ক্যারিয়ার করতে পারবে। ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার বয়ান অলিতে-গলিতে, গ্রামে-গঞ্জে প্রত্যেকটা জায়গায় ছড়িয়ে দিতে পারবে।

একাত্তর পরবর্তী জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার কারণেই জামায়াতে ইসলামী ভেতর ভেতর ইসলামের একটা বড়সড় জাগরণ সৃষ্টি করতে পেরছে। নিষিদ্ধ না করলে পারতো না। বরং ইসলামের ব্যাপারে আরো অধিকতর আপোষকামী একটা সংগঠনই হতো।

সে সময় সমাজতন্ত্রের জয়জয়কার ছিল। জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবির তখন সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন বিভোর অজস্র তারুণ্যকে ঈমানি ইনকিলাবের পথে আনার বৈপ্লবিক কাজের আঞ্জাম দিয়েছে। তাদেরকে আল্লাহ ও আখেরাতের সাথে পরিচয় করিয়েছে।

যারা মার্ক্সের আফিম খেয়ে বুদ হয়ে থাকতো, তাদেরকে কুরআনের বিপ্লবী পথের সন্ধান দিয়েছে।

তাদের কার্যক্রমের ফলাফলই হলো, আল-মাহমুদের মতো কট্টর সমাজতান্ত্রিক কবিও হয়ে গেছে ইসলামী বিপ্লবী। আলহামদুলিল্লাহ।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছেলেরা টুপি মেয়েরা হিজাব পরবে, এটা কেউ কল্পনায়ও খুব বেশি আনতো না তখন। কিন্তু সেই গণবিপ্লব সম্ভব করতে পেরেছে জামায়াতে ইসলামী।

আজকে আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ক্যাম্পাসেই হিজাব-নিকাব দাড়ি-টুপিওয়ালা ছাত্রছাত্রী দেখি। এর পেছনে আলিমদের পাশাপাশি সম্মিলিতভাবে জামায়াতেরই ভালো কাজ এবং কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী এবার নিষিদ্ধ হয়েছে, ভালোই হলো। অজস্র নাস্তিক-মুরতাদকে তারা কেবল লেগে থেকে, নিরেট আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করার নিয়তে দাওয়াত দিয়ে যেতে থাকলে তারা সাফল্য পাবেই। দলের দাওয়াতের ঊর্ধ্বে উঠে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ চেতনার দাওয়াত প্রদান করলে আরো বেশি মানুষকে আল্লাহর দীনমুখী করা যাবে।

এতে দল হিসেবে তারা সাফল্য না পেলেও আদর্শিকভাবে তারা সাফল্য পাবেই পাবে। পরবর্তীতে এই সাফল্যই তাদের রাজনৈতিক বিজয়ের বুনিয়াদ বিনির্মাণ করবে, ইন শা আল্লাহ!

পাশাপাশি আরো একটা সাফল্য পাবে, সেটা হচ্ছে লীগের অপরাজনীতির আর কোনো মাধ্যম বাকী থাকলো না এখন। এখন লীগ অন্যান্য ন্যাশনালিস্ট সোশ্যালিস্ট সেকুলারদের সাথেই লাগবে। পরিণতিতে হয়তো সামনে কেউ শেখ মুজিবুর রহমান শেখ হাসিনা এবং তাদের কথিত চেতনার নামও আর মুখে আনবে না।

ইন শা আল্লাহ, জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরের ভাইদের হতাশার কিছু নেই। এটা বরং নতুন স্বপ্ন উদ্ভাবনের ক্ষেত্র। এটা বরং বিজয়ের বুনিয়াদ বিনির্মাণের উপকরণ।

হাসবুনাল্লাহু ওয়ানি'মাল ওয়াকিল!


~রেদওয়ান রাওয়াহা
০১.০৯.২৪ ইং

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ