বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।





 বাংলাদেশ আজ হোক বা কাল, ভাঙবেই। আজ হোক বা কাল, বাংলাদেশ নামক বর্তমান রাষ্ট্রটা ভারতের অঙ্গরাজ্য হবেই। যদিও এখনো ভারত বাংলাদেশকে প্রায় তাদের অঙ্গরাজ্যের মতোই ব্যবহার করছে, তথাপি কাগজ-কলম ও দলিলদস্তাবেজে হলেও বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন-সার্বভৌম  রাষ্ট্রের অস্তিত্ব আছে! কিন্তু এই কাগজ-কলমের অস্তিত্বও নাই হয়ে যাবে একদিন— লিখে রাখতে পারেন।


আজকে বাংলাদেশের ওপর ভারতের রেল-লাইন করায় বা কিছু চুক্তিটুক্তি করায় কিছু কিছু মানুষের খুব আফসোস হচ্ছে! অথচ আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী নিজেই তো ভারত-কর্তৃক বাংলাদেশে আরোপিত। আবার অন্যদিকে তাদের এই আফসোস, এই হাপিত্যেশ কেবল ফেসবুক টুইটার বা ইউটিউবেই সীমাবদ্ধ।

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটাকে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বৈরচার, অপশাসন ও ভয়াবহ ইসলাম বিতাড়ন পরিস্থিতি থেকে প্রেসিডেন্ট জিয়া উদ্ধারের কিছু প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছিল। ইসলাম ও ইসলামি মূল্যবোধ সম্পন্ন রাজনৈতিক দলসমূহের ওপর মুজিবুর রহমান কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের কার্যকরী কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

কলকাতা-কেন্দ্রীক হিন্দুত্ববাদী বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে ইসলাম ও মুসলমান কেন্দ্রীক বাংলাদেশের নতুন পরিচয় দাঁড় করাতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হাজির করেছিলেন (যদিও এই জাতীয়তাবাদ নিয়েও কথা আছে, কিন্তু কথিত বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র পরিচয়েরর জন্য এটা অনেক ভালো একটা ভূমিকাই পালন করছে)।

আওয়ামী লীগ নামক ধ্বংসজীবী ও বিপথগামী দলটাকেও মানুষ সুদীর্ঘ একটা সময় ধরে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। মানুষের ঘৃণায় তারা ক্ষমতার  আশেপাশেও ভিড়তে পারেনি।

এতে যেমন জিয়া ও তার প্রতিষ্ঠিত দলের ভূমিকা ছিল, তদ্রূপ ইসলামী আদর্শভিত্তিক বা ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীরও ভূমিকা ছিলো।

সেজন্য ইন্ডিয়া এবং তার মিত্র শেখ হাসিনা-আওয়ামী লীগ মিলে বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন বা ইসলামের পক্ষের সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে নিঃশেষ করার প্ল্যান করে।

তারই ধারাবাহিকতা হলো ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের খুন।

রাজনীতি ঠিক থাকলে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, লোক তৈরি করা— এগুলো খুব কঠিন বিষয় না। সেজন্য ইন্ডিয়া-আওয়ামী প্রজেক্ট কথিত যুদ্ধপরাধের অভিযোগ তুলে তাদের প্রতি হুমকি রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীকে ঘায়েল করে।

ধীরে ধীরে গুম-খুন করতে থাকে জামায়াতে ইসলামী এবং ভারতের আধিপত্যবাদ বিরোধী বিএনপি নেতাদেরকেও।

লেজকাটা বামপন্থীরা এবং তাদের ছাত্র সংগঠনগুলোও ইন্ডিয়া-আওয়ামী লীগের এই যৌথ দেশ বিধ্বংসী প্রজেক্টে হাওয়া দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়। নানাধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়।

জামায়াতে ইসলামী নামক দলটাকে একেবারে কোমরসুদ্ধ ভেঙে ফেলা হয়। প্রথমসারীর প্রায় সব নেতাকে জেল-হত্যা ও দেশান্তরিত করার মাধ্যমে ভারত বিরোধী সবচেয়ে ঈমানদার শক্তিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

আজকের সুশীল মানুষজন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সরব। কথিত প্রতিবাদী প্রগতিশীলবৃন্দ কিন্তু সেই সকল দিনে এসবের বিরুদ্ধে সরব হয়নি। হতে দেখিনি। বরং তারাই জুডিশিয়াল কিলিং ও মব জাস্টিসে ইন্ধন জুগিয়েছে। জামায়াত শিবির খুনে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দিয়েছে। বড়ো একটা অংশ আবার দিয়েছে রাজপথের নেতৃত্বও।

সবকিছু শেষ করার পরও বাংলাদেশের একটা ভরসার জায়গা ছিল— বেগম জিয়া। কিন্তু/অতঃপর তাকেও গৃহপালিত আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হলো।তাকেও রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো। এখন তো তিলে তিলে তাকে হত্যাই করা হচ্ছে।

আমাদের কথিত প্রগতিশীল প্রতিবাদী জনতা এগুলোর জন্য সে সময় প্রতিবাদ করার সাহস এবং ইচ্ছে— কিছুই ছিল না।

আজকে ইন্ডিয়ার এই চুক্তি-সেই চুক্তি নিয়ে তাদের কারো কারো কতো আক্ষেপ, কতো অনুযোগ! কিন্তু এসব চুক্তি, এসব দাসত্বের প্রেক্ষাপট যখন রচনা করা হয়েছিল, তখন এরাই মূল ক্রিড়নকের ভূমিকা পালন করেছে। এরাই সহযোগী ও সহযোদ্ধা ছিল।

দেখুন, আজকে যদি জামায়াত নেতাদের ওপর এমন অন্যায় বিচারকার্য পরিচালনা করা না হতো, জামায়াতে ইসলামী যদি জামায়াতে ইসলামী হিসেবে টিকে থাকতে পারতো, তাহলে আদৌও কি এত সহজেই ইন্ডিয়া কর্তৃক নেওয়া আওয়ামী লীগ প্রদত্ত সঁপে দেওয়া, এমন দাসত্ব ও দাসত্বের উপেখ্যানগুলো তৈরি হতো?

এরা মূলে হাত না দিয়ে উপসর্গ নিয়ে কিছু মেকি কান্নাকাটি করছে, আর নিজেদেরকে খুব প্রতিবাদী, বিপ্লবী এবং দেশপ্রেমিক ঠাওরাচ্ছে। অথচ এরা কত্তো বড়ো ভণ্ড, তা যদি জাতি পুরোপুরি জানতো!

~রেদওয়ান রাওয়াহা
২৫.০৬.২৪ ইং

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ