ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাঈসির মৃত্যু এবং আমাদের কারো কারো প্রতিক্রিয়া
ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুর্ঘটনায় মারা গেলো। এতে অসভ্য আমেরিকা, বর্বর সন্ত্রাসী-অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাঈলিদের পাশাপাশি বাংলাদেশের কিছু মুসলিমও খুব খুশি হলো। আনন্দে বগল বাজানো শুরু করলো।
আমাদের দেশের মাদখালী সালাফি থেকে শুরু করে আল-কায়দা ও আইএসপন্থী সালাফিরাও খুব খুশি হলো। আনন্দে পারে না যে তারাও ঢোল তবলা নিয়ে নাচানাচি শুরু করে।
কওমি মাদরাসার তালিবুল ইলমরাও একটা অংশ খুশি হলো। মাজারপন্থী কথিত সুন্নিদেরও একই অবস্থা। তো যাই হোক, এদের নিয়ে আমার খুব বেশি বক্তব্য নেই। এদের একটা অংশ হয়তো সিরিয়া-ইরাকে মুসলিমদের ওপর ইরানিদের জুলুমের কারণে, আকিদার কিতাবি ইলমে পোক্ত হলেও রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় এবং অসচেতনতার জন্যই এই অবস্থান গ্রহণ করেছে।
কিন্তু আমার কথা হলো যারা বিশ্বব্যাপী খেলাফত কায়েম করতে চায় (আল-কায়দা, সন্ত্রাসী ও খারেজি আইএসসহ এই ধরনের যারা আছে), তারা তো আকিদার পাশাপাশি পলিটিক্যাল ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার সম্পর্কে অবহিত হওয়ার কথা। কিন্তু না, এই বেকুবদের মধ্যেও দেখলাম ন্যুনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচারও নেই।
এরকম ন্যুনতম পলিটিকাল ম্যানার পর্যন্ত যাদের নেই, সে সমস্ত বেকুবরা নাকি বিশ্বব্যাপী খেলাফত কায়েম করবে!
ইবরাহিম রাঈসি ও হোসাইন আমীর আব্দুল্লাহিয়ানের ইরান সিরিয়ায় তাদের শিয়া মিত্র, স্বৈরাচারী বাশার আল আসাদকে রক্ষায় যেভাবে সুন্নি মুসলমানদের রক্ত ও জীবন ঝরিয়েছে, সেটা যেভাবে দুঃখজনক ও ক্ষমার অযোগ্য, একইভাবে ইবরাহিম রাঈসি ও হোসাইন আমীর আব্দুল্লাহিয়ান যেভাবে হামাসসহ ফিলিস্তিনের মুজাহিদ গ্রুপগুলোকে সহযোগিতা করেছে, পবিত্র ভূমির এসব মুজাহিদদের যে পরিমাণ সাপোর্ট দিয়েছেন, সম্ভবত কাতার ছাড়া দ্বিতীয় কেউই তাদের আশেপাশেও যাওয়ার অবস্থা হয়নি। গাজার সমর্থনে তারা বিভিন্ন জায়গা তাদের মিলিশিয়া বাহিনীকে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাঈলের বিরুদ্ধে যেভাবে নামিয়ে দিয়েছে, সেজন্য হলেও তো তারা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রাপ্তির হকদার।
পাশাপাশি আরেকটা চিত্র, ঈমান আকিদার ইলমে একেবারে তীব্রভাবে মিসকিন, আক্ষরিক অর্থেই মিসকিন একটা গ্রুপকে দেখলাম এই শিয়া-রাফেজীদের ব্যাপারে কোনো ধারণাই রাখে না। তারা তাদেরকে শহীদ ও জান্নাতের মেহমান দেওয়া, মুসলমানদের রাহবার ও যুগের সালাহউদ্দিন আইয়ুবী হিসেবে অবহিত করা, সবকিছুই করছে।
তবে আমার কথা হলো, তাদের জন্য 'হে প্রশান্ত আত্মা, জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হয়ে যাও' কিংবা তাদেরকে যুগের রাহবার ও সালাহউদ্দিন আইয়ুবী হিসেবে অবিহিত করার মতো বলদামিরও কোনো দরকার নেই। আবার ন্যুনতম কৃতজ্ঞতাবোধ ও রাজনৈতিক ভদ্রতা পরিহার করা বদমাইশিরও প্রয়োজন নেই।
তারা এখন স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ সংকটের মুখোমুখি, একইসাথে রাষ্ট্রের এমন প্রধান ব্যক্তিবর্গ মারা গেলেন, স্বাভাবিকভাবে মানবিক অনুভূতি যাদের আছে, তাদের সবার কাছেই তো খারাপ লাগার কথা। কারণ, এদের নেতৃত্বেই তো কয়দিন আগে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা পরিচালনা করা হলো (সেটা যেমন হামলাই হোক)। এদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই তো হুতিরা সমুদ্র পথে ইসরাঈল-আমেরিকার জাহাজগুলোয় আক্রমণ করে তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছিল। লেবাননের হিজবুল্লাহসহ এসব শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েল-আমেরিকার ওপর কিছুটা হলেও চাপ তৈরি করছে।
এখন এমন মুহূর্তে যখন রাঈসি-আব্দুল্লাহিয়ান দুর্ঘটনায় মারা গেলো, তখন কী হবে আমার গাজাবাসী ভাইবোনদের? কোনদিকে মোড় নেবে ফিলিস্তিনি মুজাহিদদের ভাগ্য?
এই উৎকণ্ঠাগুলো জাগা হলো স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞান। এগুলোর জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো হচ্ছে স্বাভাবিক কৃতজ্ঞতাবোধ। তাদের এই বিপদে শোক প্রকাশ করা হচ্ছে রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক শিষ্টাচার।
আমি তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান ও মুসলমানদের রাহবার বানিয়ে দেওয়ার মতো মূর্খতাসূলভ মুনাজাত ও নেতানিয়াহুর স্টাইলে আনন্দে বগল বাজানোর মতো বদমায়েশি; উভয় থেকেই আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।
আমি যেভাবে একজন রাজনৈতিক জীব সেভাবে একজন মুসলিমও বটে। আমি রাজনৈতিক ভদ্রতাও পরিহার করতে পারি না, আবার ইসলামি আকিদাও বিসর্জন দিতে পারি না।
~রেদওয়ান রাওয়াহা
২১.০৫.২৪ ইং
Comments
Post a Comment