খিলাফাহ ও ইসলামী রাষ্ট্র এবং বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা
আমি একটা কথা বলবো। এতে অনেকেই হয়তো কষ্ট পাবেন। আসলে কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ কেউই অনুপ্রেরণা হারাতে রাজি নয়। কেউই তার স্বপ্নের দরজায় খিল এটে দিতে, মনে আঘাত পেতে চায় না।
তবুও আমার কাছে যেটা বাস্তব বলে মনে হয়, তা শেয়ার করি। সেই বাস্তবতা হচ্ছে আসলে বাংলাদেশে কোনো ধরনের ইসলামী দলই ক্ষমতায় যাবার সম্ভাবনা আগামী ২৫/৩০ বছরেও নেই। গেলেও থাকতে পারবে না। অন্তত ইইউরোপ-আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় সেটা সম্ভব হবে না ।
দেখুন, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আর জনপ্রিয় ইসলামী দল ছিলো ইখওয়ান। ইখওয়ানের সামর্থ্য ও সমর্থনের অর্ধেকও কোনো দেশে কোনো ইসলামী দলের নেই। তবুও তারা একটা বছরের বেশি টিকতে পারেনি।
আর বাংলাদেশের কোনো ইসলামী দলেরই ইখওয়ানের অর্ধেক পরিমাণও জনশক্তি, জনসমর্থন এবং সেক্টর ভিত্তিক কোয়ালিফাইড লোক নেই।
বাংলাদেশের ইসলামের পক্ষের শক্তিগুলো মিশরের চেয়েও বেশি দ্বিধা বিভক্ত।
আপনি নিজেই বিচার করে দেখুন, আপনি যেই দলটা করেন, সেই দলের বিপক্ষে কেউ কিছু বললে বা লিখলে আপনি তাকে কী আচরণ উপহার দেন! বানোয়াট বা মিথ্যে কথা না, সত্য কথাগুলো বা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে মতবিরোধ করার পরেই কী অবস্থা করে থাকেন— চিন্তা করে দেখুন।
এখানে একজন ইসলামী দলের কর্মী-সমর্থক অন্য ইসলামী দলের কর্মী-সমর্থকদের রাম-বাম-সেকুলারদের চেয়েও বেশি ঘৃণা করে। কাফির- মুশরিকদের প্রতিও এতো বেশি ঘৃণা থাকে না, যতো বেশি ঘৃণা থাকে এক পক্ষের কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষের।
আপনি স্রেফ নিরপেক্ষভাবে একটা সপ্তাহ প্রত্যেক ইসলামী দল ও গোষ্ঠীগুলোর সমর্থকদের ফেসবুকের আইডি ও কমেন্ট বক্সগুলো দেখুন। এই সত্যতা টের পাবেন।
এছাড়া ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠীগুলো এখানে খুবই শক্তিশালী। তাদের ধারে কাছের শক্তিও ইসলামের পক্ষের শক্তিগুলোর নেই।
এমনকী বিএনপির ওপরের লেভেলের নেতাদের মধ্যেও ইসলামের প্রতি প্রবল দরদওয়ালা নেতা নেই বললেই চলে। থাকলেও একেবারে খুব সংখ্যক।
আসলে আমাদের সমাজে ইসলামের পরিবর্তে, আল্লাহর দাসত্ব কবুলের পরিবর্তে লাইফস্টাইল ও লিবারেলিজমের দাসত্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
সারাবিশ্বেই কেউ এখন আবদ হতে চায় না। এক আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দিতে চায় না। সবাই নিজেই মাবুদ হয়ে উঠতে চায়।
এই যখন অবস্থা, তখন আল্লাহর দাসত্ব কবুল করা কোনো রাষ্ট্রব্যবস্থা কয়জন মনেপ্রাণে চাবে ও মেনে নেবে— এটাও বড়ো একটা প্রশ্ন।
আমরাও কি সেভাবে মানুষের মন-মনন, ঈমান-আখলাক, ঈশিতা ও আধ্যাত্মিকতা সেরকমভাবে তৈরি করতে পেরেছি? নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সেই কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছি?
আরো একটা বিষয় খেয়াল করুন, ভারত সাধারণ জাতীয়তাবাদী একটা দল— বিএনপিকে পর্যন্ত পছন্দ করে না, সেখানে ইসলামের পক্ষের শক্তিশালী দলগুলোর ব্যাপারে তাদের অবস্থান কী হবে, চিন্তা করুন তো!
আমেরিকা আপনাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাপোর্ট দেবে, যতোক্ষণ আপনি তাদের জন্য হুমকি না হবেন।
আপনি যদি ভারত ও আমেরিকার বিরোধীতা নাও করেন, তবুও আপনি যদি ক্ষমতা গিয়ে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে চান— গণতান্ত্রিকভাবে, মানুষের ম্যান্ডেট নিয়েই যদি তা চান, তবুও তারা ক্ষমতায় আসতে দেবে না। কোনোভাবে এসে গেলেও কিন্তু থাকতে দেবে না। কোনোভাবেই দেবে না।
এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য না, সারাবিশ্বেরই এক অবস্থা। তুরস্ক, মিশর আলজেরিয়া, এগুলো আমাদের জন্য উদাহরণ হিসেবে মওজুদ রয়েছে।
বর্তমান আআফগানিস্তানের দিকে তাকান, সারা বিশ্বের কেউ কি আজও তাদেরকে মেনে নিয়েছে? স্বীকৃতি দিয়েছে?
সুতরাং আমি বাংলাদেশে কোনো ইসলামী দল ক্ষমতায় আসবে এবং শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করবে, মানে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশে— আল্লামা সাঈদীর ভাষায় "কুরআনের রাজ কায়েম"— এমন কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখি না।
যদি কোনো ইসলামী দল ক্ষমতায় এসেই যায়, তাদেরকে গণতন্ত্রের মতো সেকুলারিজমকেও মেনে নিয়েই ক্ষমতায় আসতে হবে। তবুও কিন্তু ভারতের ষড়যন্ত্রের সামনে তারা সফল হবে কিনা, সেটাও বলা যাচ্ছে না।
মানে সেকুলারিজম মেনে নিয়ে, ইসলামী শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা কায়েম না করেও ইন্ডিয়ার সন্তোষ অর্জন করা হয়তো সম্ভব হবে না। বিএনপির মতো দলই যেখানে ভারতের সন্তোষ হাসিল করতে পারেনি, ইসলামপন্থী বা সাবেক ইসলামপন্থীরা সেটা কীভাবে হাসিল করবে?
এমনকী বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা, বর্তমান ইয়োরোপ-আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সভ্যতাকে অক্ষত আর বিজয়ী রেখে বা বিজয়ী থাকা অবস্থায় ইসলামী খিলাফত না, সাধারণ ইমারাতও সম্ভব না। কোথাও সেই সম্ভাবনা নেই। দেখি না আমি।
বিশ্ব-পরিস্থিতি দেখেই এগুলো আমার মনে হয়। এসব উপলব্ধি হয়। আমি এই কথাগুলো গালাগালি খাবার মানসিকতা নিয়েই বলছি।
তবে আরেকটা বিষয়, এই অসম্ভব জন্য যে আমি খিলাফতের স্বপ্ন মনে পুষি না, কিংবা সেকুলারিজমকে মেনে নিয়েছি বা মেনে নিতে দাওয়াত দিচ্ছি, কিংবা ইসলামী রাষ্ট্র চাচ্ছি না, বিষয়টা কিন্তু এমনও না।
আমি কেবলই আমার উপলব্ধি এবং আমার বুঝটা শেয়ার করলাম। নিশ্চয়ই আল্লাহই অধিক অবগত।
~রেদওয়ান রাওয়াহা
০১.০৯.২৪ ইং
Comments
Post a Comment