হিন্দু-মুসলিম নির্যাতন ও বর্তমান হিন্দুদের আন্দোলন






পুলিশ-র‍্যাবের মধ্যে যারা বিএনপি-জামায়াতকে বেশি নির্যাতন করেছে, তাদের বড়সড় একটা অংশ হিন্দু ধর্মের ছিল। তারাই বিএনপি-জামায়াতকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে। নির্দয় আচরণ করেছে। তবুও বাংলাদেশের মুসলমানরা এটা বলেনি যে, হিন্দুদের দ্বারা মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছে।

ডিএমপির বিপ্লব কুমার, চট্টগ্রামের ওসি প্রদীপ কুমার, পিবিআইয়ের বনজ কুমার, কৃষ্ণ পদ রায়, উৎফুল কুমার রায়, সঞ্জিত কুমাররা কী অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও কী ভয়ানক নির্দয়ভাবে বিএনপি-জামায়াত এবং মুসলমানদের ঈমান আকিদা রক্ষার অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামসহ অজস্র মুসলমানদেরকে দমন করেছে, তা কি আমাদের মনে নেই? দেশবাসী কি সেগুলো জানে না?

এসব আওয়ামী লাঠিয়ালদের অপরাধের জন্য যদি কেউ তাদেরকে শায়েস্তা করে, সেটা কি হিন্দু নির্যাতন হবে? যদি হয়, তাহলে তো আগে তাদেরকে মুসলিম নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত করতে হবে। তখন বিষয়টা হবে এমন, হিন্দুরা আক্রমণকারী আর মুসলিমরা প্রতিহতকারী।

আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে, বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতের ওপর যে ক্র‍্যাকডাউন চালিয়েছে, তখন মুসলমানদের একজন সাধারণ নেতাও কিন্তু বলেনি যে, হিন্দুরা মুসলিমদের নির্যাতন করছে। অথচ আজকে কোনো হিন্দুধর্মের আওয়ামী সন্ত্রাসীকে শায়েস্তা করলে বা হামলা করলে ইন্ডিয়ান মিডিয়াগুলো সেটাকে প্রচার করছে হিন্দু নিপীড়ন হিসেবে!

অথচ আওয়ামী গুণ্ডাদের পতনের পর, হিন্দুদেরকে আওয়ামী গুণ্ডাদলের নির্যাতন থেকে হেফাজত করতে বাংলাদেশের মুসলমানরা তাদের ঘরবাড়ি মন্দির পাহারা দিয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে।

এটা শুধু সাধারণ মুসলমানরা না, রক্ষণশীল মুসলিমরাই বেশি দিচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাই, হেফাজতে ইসলামসহ সবাই। কোথাও কোথাও বিএনপিও পাহারা দিচ্ছে। নিরাপত্তা দিচ্ছে।

তবুও তারা আওয়ামী লীগের ইন্ধনে শাহবাগে সমাবেশ করছে। আওয়ামী গুণ্ডা আর ইন্ডিয়ার উস্কানিতে তারা দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে।

যে সময় তাদের উচিৎ ছিল নিজেদের বাড়িঘর পাহারা দেওয়া, সে সময় তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে বসে বসে মিছিল-সমাবেশ করছে, আর তাদের সেই ঘরবাড়ি পাহারা দিচ্ছে মুসলমানরাই!

এবার অন্যদিকে এলিট শ্রেণীর হিন্দু বংশদ্ভূত, সাবেক কমিউনিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য দাদার দিকে দেখুন, বাংলাদেশের আপামর সাধারণ মুসলমানরা তো তাকে পারে না যে মাথায় তুলে রাখে। তাকে গুরু মানে। আমি নিশ্চিত, উনি বাংলাদেশে আসলে বাংলাদেশের মুসলমানরা তাকে সুযোগ পেলে দাওয়াত করে খাওয়াবে। সারাদেশের মুসলমানরা তাকে মাথায় তুলে নাচবে। তার হাতে-কপালে লাখো মুসলমানরা চুমু দিয়ে বরণ করতে বেদিশা হয়ে যাবে। আমি সুযোগ পেলে আমিও তার সাথে এক কাপ চা পান করতে চাই।

বিষয়টা হলো বাংলাদেশের মুসলমানরা যদি হিন্দু নিপীড়কই হতো, তাহলে পিনাকী ভট্টাচার্যকেও তো ঘৃণা করতো। হেফাজত, জামায়াতে ইসলামী-ছাত্রশিবির তো হিন্দুদের মন্দির-বাড়িঘর পাহারা দিতো না। বরং এই সুযোগে উল্টো সবকিছুই দখল করে ফেলতো। কিন্তু তারা রাতের ঘুম বিষর্জন দিয়ে হিন্দুদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। বিনিময়ে কিছু কিছু হিন্দু তাদের কী দিচ্ছে? শাহবাগে জমায়েত হয়ে, এই কণ্টকাকীর্ণ সময়ে এতদিন ধরে সমাবেশ করে বরং তারা ইন্ডিয়ান মিডিয়ার গুজবে আরো হাওয়া দিচ্ছে।

আমি জানি না, আমাদের হিন্দু ভাইবোন-বন্ধুরা মূলত কী চায়? তারা কি তাদের নিজেদের কুরবান দিয়ে আওয়ামী দানবদেরই ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে? নাকি একটা দাঙ্গা বাধাতে চাচ্ছে? তারা যদি দাঙ্গা বাজাতে চায়, তাহলে তো তাদের জন্যই বিপদ বেশি হবে। মুসলমানদের পাশাপাশি তাদেরও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।

আমরা হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, পাহাড়ি-বাঙালি মিলেমিশে এই বাংলাদেশে থাকতে চাই। আমি নিজেও একজন সচেতন মুসলিম এবং ইসলামী আদর্শের কর্মী হিসেবে সবাইকে নিয়ে সুখ-শান্তি ও নিরাপদে থাকতে চাই বাংলাদেশের এই সবুজ জমিনে। যেভাবে থেকে এসেছি এতদিন।

আশা করি হিন্দুধর্মের ভাইবোনেরাও এতে সহযোগিতা করবেন। তারা ইন্ডিয়া এবং আওয়ামী দুস্কৃতকারী গুন্ডাদের পাতা ফাঁদে আর পা দেবেন না বলে বিশ্বাস করি।

~রেদওয়ান রাওয়াহা
১০.০৮.২৪ ইং

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ