কর্মজীবী নারী বনাম অকর্মজীবী নারী
ইতিহাস জুড়ে নারীর অবদান— তা ঘরের ভেতরে হোক বা সমাজে— অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারপর এলো শিল্প বিপ্লব। শিল্প বিপ্লবের সময় বৃহৎ আকারে উৎপাদনের জন্য নতুন নতুন কলকারখানা তৈরি হলো। এসব কারখানায় প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল, যা শুধু পুরুষদের দ্বারা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে, নারীদেরও এসব কারখানা ও উৎপাদন কার্যক্রমে কাজ করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হলো।
পুরুষদের মতো নারীদের শ্রম মূল্য বেশি ছিলো না। অল্প বেতনে অধিক শ্রম নারীদের থেকে নেওয়া যেত। নারীদের এভাবে কর্মক্ষেত্রে আসা পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করে তোলে। সুশোভিত ও বিকশিত করে তোলে।
কারণ, ওই যে বলেছিলাম তারা সস্তা-শ্রমে কাজ করতে শুরু করেন। এই সময়ে “কর্মজীবী নারী” ধারণাটিকে পুঁজিবাদীরা জনপ্রিয় করে তোলে।
পূর্বে নারীরা প্রধানত ঘরের কাজে সীমাবদ্ধ থাকলেও শিল্প বিপ্লবের পর তাদেরকে ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করার দিকে উৎসাহিত করা হয়।
এর ফলে, সমাজে নারীদের জন্য নতুন ভূমিকা ও চিত্র তৈরি হয়। যেসব নারী ঘরের বাইরে কাজ করতেন, তাদের “কর্মজীবী” হিসেবে গৌরবজনকভাবে ট্রিট করা হতো, আর যারা ঘরের অভ্যন্তরে থাকতেন ও কাজ করতেন, তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে কম গুরুত্বপূর্ণ বা অকেজো মনে করা হতো।
যারা বা যেসব নারী ঘরোয়া দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগ দেন, এমন নারীদের ক্ষেত্রে “কর্মজীবী নারী” শব্দটিকে এতোটাই গৌরবান্বিত করা হলো যে, যারা বাইরে গিয়ে কাজ করেন না, তাদেরকে রীতিমতো হীনমন্যতার মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো।
অথচ এটা যে টোটাল নারী সত্ত্বাকে অপমান করা হলো, তা কেউই বুঝলো না। কেউ কিছু বললোও না।
আমাদের প্রশ্ন হলো, যারা ঘরের বাইরে গিয়ে অন্যের বা বসের মনোরঞ্জন করেন না, সস্তায় শ্রম বিক্রি করেন না, সে সমস্ত নারী কী? “অকর্মজীবী নারী”? তাহলে এই নারীরা বাড়িতে কী করেন— কাজ না করে কেবলই আরাম করেন?
এই যে শ্রমিক হিসেবে বাইরে গিয়ে বা অফিস আদালতে শ্রম দেওয়া নারীদেরকে আকর্ষণীয়, উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, এবং যারা ঘরে থেকে তাদের সন্তানদের লালনপালন করার দিকে মনোযোগ প্রদান করেন, মানবসভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট— পরিবার— এর রক্ষাকবচের ভূমিকা পালন করেন, তাদের হীন ও অপমান করা করা হয়েছে— এই অন্যায়, অপমান ও বিভাজন থেকে কার লাভ আর কার ক্ষতি হয়েছে?
লাভ হয়েছে পুঁজিবাদী শোষকদের। ক্ষতি হয়েছে মানবসভ্যতার— বিশেষত নারীদেরই।
মূলত শিল্প বিপ্লবের আগ পর্যন্ত আমাদের সমাজে— “কর্মজীবী নারী” ও “অকর্মজীবী নারী”— এমন কোনো বিভাজনই ছিলো না। আমাদের সব নারীই কর্মজীবী ছিলেন।
আমাদের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কণ্ঠকে উচ্চকিত করা— যারা গৃহিণীদের কাজকে অগুরুত্বপূর্ণ কিংবা কম অগুরুত্বপূর্ণ মনে করায়।
আসলে আমাদের সমাজে এমন কোনো নারীকে আমরা চিনি না, যিনি কাজ করেন না। আমাদের সোসাইটিতে সব নারীই কর্মজীবী। কখনো কখনো নারীরা পুরুষদের চেয়েও বেশি কাজ করেন— কথিত কর্মজীবী না হয়েও।
~রেদওয়ান রাওয়াহা
১৪.১০.২৪ ইং
Comments
Post a Comment