শহীদ নাজমুল কাজী
ফুটফুটে গোলাপের মতো ছোট্ট শিশুটিকে কোলে নিয়ে হাসিমাখা মুখের এই শান্ত সৌম্য চেহারার মানুষটির নাম নাজমুল কাজী। তিনি জুলাই বিপ্লবের একজন বীর শহীদ।
জুলাই ম্যাসাকারের সেই উত্তাল দিনগুলোতে ঘরে বসে থাকতে পারেননি নাজমুল। সংসার, স্ত্রী আর শিশুকন্যার কথা একপাশে রেখে আন্দোলনে একটু কন্ট্রিবিউট করতে চেয়েছিলেন। এবং যথাসাধ্য করেছিলেনও।
১৮ জুলাই। যাত্রাবাড়ির শনির আখড়ায় নেমেছিলেন তিনি। সাইকোপ্যাথ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে লড়তে থাকা সাহসী বীরদের সাহায্যে পানি নিয়ে ছুটে যান। কিন্তু এই পানি নিয়ে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাওয়া তার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ঘাতকদের চোখে এই কাজটুকুও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলো।
ফলাফল— শুধু পানি হাতে সাহায্য করতে চাওয়া এই মানুষটিকে তার নিষ্পাপ শিশুকন্যা আর ভালোবাসার স্ত্রীসহ সবার কাছ থেকে চিরতরে ছিনিয়ে নেওয়া হলো। নাজমুল কাজী আলিঙ্গন করলেন শাহাদাতের মৃত্যু।
যে মানুষটি পানি খাওয়াতে নেমেছিলেন মানুষকে, তিনি নিজেই পানি খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে শাহাদাত বরণ করলেন।
আর তার পরিবারেও নেমে এলো পাহাড়সম শোক।
অল্প বয়সে স্বামী হারানোর পাহাড়সম শোক বুক ধারণ করে নাজমুলের স্ত্রী এখন ছোট্ট শিশু কন্যাটিকে নিয়ে স্বামীহীন সংসারটাকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন।
এমন নির্মম ত্যাগের গল্পগুলো আমরা ক'জনই-বা জানি? যারা জানি, তারা কতটুকুই-বা মনে রাখি?
আমরা আমাদের শহীদ ও গাজিদের ত্যাগের গল্পগুলো এতটা নির্মম আর নিষ্ঠুরভাবেই ভুলে যাই, এতটাই যে— তাদের ত্যাগ আর কুরবানির ওপর কায়েম হওয়া এই রক্তাক্ত স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করে খুনি ও খুনিদের পৃষ্ঠপোষকদের ফুল দিয়ে বরণ করতেও পিছপা হই না।
যারা আমাদের শহীদদের জীবন কেড়ে নিয়েছে, আমাদের শহীদদের সন্তানদেরকে এতিম ও স্ত্রীদেরকে বিধবা করেছে, মা-বাবাকে সন্তানহারা করেছে— তাদেরকে পুনর্বাসিতও করতে চাই, রাজনীতি করার সুযোগ দিতে চাই।
আমরা তাদের ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের থেকে যথাযথ বদলা নেওয়ার কথাটা যেন এমনভাবেই ভুলে গিয়েছি— মনে হয় ওরা কিছুই করেনি। ওদের উল্লেখযোগ্য কোনো অপরাধই নেই।
তারা যেমন নির্বিকার, অনুতপ্তহীন, তাদের ব্যাপারে আমাদের এপ্রোচগুলোও যেন হুবহু একইরকম হয়ে যাচ্ছে।
আমরা কি ভেবে দেখেছি, এই ঘাতকদের অন্যায় ও বর্বরতার শিকার সেই নুজাইরা আর তার মা কতটা অন্ধকারে ডুবে আছে? দুঃখের দহন তাদেরকে কীভাবে পোড়াচ্ছে— সেটা কি আমরা কল্পনা করেছি?
যে ছোট্ট শিশু বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলো, যে স্ত্রী স্বামী বাসায় ফেরার পানে অপেক্ষার উপলক্ষ্য হারিয়ে দৃষ্টির জল শুকিয়ে ফেলল, তাদের শূন্য জীবনের দহন কি আমরা একবারও অনুভব করেছি?
আমরা আমাদের দুঃসহ জুলাইয়ের স্মৃতিগুলো ভুলে যাওয়ার সকল পথ উন্মুক্ত করে ফেলেছি। আমাদের অনুভূতিকে ভোঁতা ও ধারহীন করে ফেলেছি। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। শহীদদের রক্তে অর্জিত এই দেশ, এই স্বাধীনতা— এর সঙ্গে বেঈমানি কি আমরা সত্যিই করতে পারি? আর কেউ যদি বেইমানি করে, তাদেরকে কি আমরা আসলেই ক্ষমা করতে পারি?
~ রেদওয়ান রাওয়াহা
#জুলাই_বিপ্লব
#২৪_এর_শহীদ
Comments
Post a Comment