চরমপন্থা, উগ্রতা ও ৯/১১ নিয়ে কিছু কথা
আমার প্রশ্নটা শিক্ষিত চরমপন্থীদের ব্যাপারে।চরমপন্থী একটা সংগঠন আছে।এর প্রধান বিখ্যাত একজন বিশেষজ্ঞ আমাকে ফতোয়া দিয়েছে ‘একজন কাফের হিসেবে’আর অন্য মুসলিম যারা রাজনীতির সাথে জড়িত তারাও কাফের।তারা কুরআনের আয়াত ব্যবহার করে, যাতে বলা হয়েছে যে,কেউ আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য আইন রচনা করে সে কাফের। তাঁরা এই আয়াতগুলো ব্যবহার করে।তারা ‘৯/১১’কে উৎসাহিত করে।আপনার কাছে প্রশ্ন ডা.নায়েক,এই চরমপন্থীদের কিভাবে শিক্ষা দিব?তাঁরা দাবি করে কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরন করে।
___________________
ডা.নায়েকের উত্তর:
ভাই প্রশ্ন করলেন যে,একটা সংগঠনের চরমপন্থীরা যারা তাকে কাফের বলছে,তাঁরা বোমা-হামলাকে উৎসাহিত করে,আত্মঘাতী বোমাহামলা,৯/১১।তাই কিভাবে এই চরমপন্থীদের বোঝাবেন আপনি?
ভাই যদি মুসলিম চরমপন্থীর কথা বলেন তাহলে আমি নিজেকে মুসলিম চরমপন্থী বলি।আমি চরম ভাবে দয়ালু,চরম ভাবে সৎ,চরম ভাবে ন্যায়পরায়ন,চরমভাবে ক্ষমাশীল।এতে সমস্যা কোথায়?কুর’আন বলছে চরম ভাবে সৎ হতে,আংশিক হতে পারবো না আমি।তাই আমি চরমপন্থী মুসলিম।
আমরা সে লেভেল মানবো না যা পশ্চিমা মিডিয়া দিয়েছে।যখন তারা জিজ্ঞেস করে,হ্যা বলি আমি চরমপন্থী।চরম ভাবে দয়ালু,চরম ভাবে সৎ,চরম ভাবে ন্যায়পরায়ন,চরম ক্ষমাশীল,চরম দয়াশীল।সমস্যা কোথায়?আর কোন মুসলিমই বলতে পারবে না চরম ভাবে সৎ হওয়া ভুল।অন্যরা আংশিক ভাবে সৎ,আংশিক ন্যায়পরায়ন তাই আমাদের চরম্পন্থী হতে হবে।প্রত্যেক মুসলিমকেই চরমপন্থী হতে হবে।
তবে তা হতে হবে সঠিক পথে।ভুল পথে হয়া যাবে না।আমরা চরম জালিম হবো না,চরম অসৎ হব না।তাই মিডিয়া যদি বলে কিছু মুসলিম হচ্ছে চরমপন্থী আমি বলি প্রত্যেক মুসলিমকেই চরমপন্থী হওয়া উচিৎ।প্রত্যেক মুসলিমকে মৌলবাদী হতে হবে।যদি মৌলবাদী না হন আপনি ভাল মুসলিম হতে পারবেন না।আমলকারী মুসলিম না।
তাই মিডিয়া আমাদেরকে যে লেভেল দেয় আমরা সেরকম না। সেরকম মৌলবাদী না,সেরকম চরমপন্থী না।আমি একজন চরমপন্থী।আপনি যেটা নিয়ে বলছেন সেটা হয়তো ‘উগ্রতা’।
একজন উগ্র ও চরমপন্থীর মধ্যে পার্থক্য আছে।আমি জানি না,আপনি কার কথা বলছেন।হতে পারে X,Y,Z তাই আমার জবাব সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতেও পারে,নাও পারে।তবে আমাদের নবী সঃ বলেছেন,
“যদি একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমকে কাফির বলে তাহলে সেটা তার উপরেই ফিরে আসে।“(বুখারী ৬১০৩)
তার মানে সে নিজেই কাফের হয়ে যায়।কে বলেছেন?নবিজী মোহাম্মাদ সঃ।তাই আপনি যদি মুসলিম হন,আর কেউ আপনাকে কাফির বলে থাকে তাহলে যে বলবে সে কাফির হয়ে যাবে মুহাম্মাদ সঃ এর হাদিস অনুযায়ী।
যদি আপনি কুফুরি কাজ না করে থাকেন,আর যদি সে প্রমান দেখাতে না পারেন ইত্যাদি।অন্যথায়,সেই কুফুর তার কাছে ফিরে আসবে।
______________
*এবার এই প্রশ্নে ফিরে আসি,যারা ৯/১১ বা লন্ডন বম্বিং-কে স্বাধুবাধ জানায় তাদের কিভাবে শিক্ষিত করবেন?
আল্লাহ কুরআনে বলেন,
“যদি কোন মানুষকে হোক মুসলিম বা অমুসলিমকে হত্যা করে,যদি সেটা হত্যা বা অশান্তির সৃষ্টির কারনে না হয় সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করলো।আর যদি কেউ কোন মানুষের জীবন রক্ষা করে সে যেন গোটা মানব জাতিকে রক্ষা করলো।(সুরা আল-মাই'দাহ,৩২)
তাই কোন নিরাপধ মানুষকে হত্যা করা এটা হারাম।এটা নিষিদ্ধ।আমরা জানি যে,৯/১১ এ নিউওয়ার্ক এর টুইনটাওয়ারে হামলার ফলে তিনশোর বেশি নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।লন্ডন বোমা হামলায় গত বছর পঞ্চাশ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।এই গত মাসে বোম্বে তে ১১ই জুলাই ২০০৬ দু-হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা হারাম।ইসলামের সামান্য জ্ঞান থাকলে কেউ এই কাজ করবে না।কাজেই নিন্দা করতে হবে যে ইসলামে হারাম এটা।
তবে অনেক মুসলিম এ কথা বলেছে,বিশেষ করে ইংল্যান্ডে বা ইউএসএ -তে প্রথম পাতায় পড়েছি।কিন্তু এটুকু বলেই শেষ কেন?সেটারও নিন্দা করতে হবে যে হাজার হাজার মানুষকে আফগানিস্তানে হত্যা করা হচ্ছে,হাজার হাজার মানুষকে ইরাকে হত্যা করা হচ্ছে,হাজার হাজার লোককে হত্যা করা হচ্ছে বসনিয়ায়,গুজরাটে।এগুলো আমরা বলি না কেন?যখন কাউকে আমেরিকায় জিজ্ঞাসা করি,এগুলো বলছেন না কেন?উত্তর দেয়,ভাই জাকির অবস্থাটা এমন যে,এর বেশি বলতে পারি না।অবস্থাটা কি?কাকে ভয় পাচ্ছেন?
আমি বোম্বে শহরে বাস করি মাশ-আল্লাহ।একটা শহর।একটা দেশ যেখানে জীবনেরও হুমকি থাকে।কিন্তু আল্লাহ আছেন মাশ-আল্লাহ।তিনি রক্ষা করেন।আলহামদুলিল্লাহ।
এগুলো আপনারা বলছেন না কেন?একটু বলে থেমে যাচ্ছেন কেন?কেন?
লন্ডনের বোমা হামলার চেয়ে বেশি লোককে হত্যা করা হচ্ছে আফগানিস্তানে,ইরাকে গনহত্যা হচ্ছে।দেখেছেন এটা?নাহ।তাহলে কেন চুপ করে আছেন কাকে ভয় পাচ্ছেন?
একই সাথে এরও নিন্দা করতে হবে।নাহ!নিন্দা করার সময় আসে নি।কিসের সময় আসে নি?
আমাদের বুঝতে হবে,যা ভুল তার নিন্দা করতে হবে।যা গুজরাটে হত্যা করা হচ্ছে তার নিন্দা করতে হবে।আর যেসকল লোকজন এখানে দায়ী,যেকোন অন্যায়ের জন্য তাদেরকে ধরেন এবং শাস্তি দেন।কোন সমস্যা নেই।নিরাপরাধকে শাস্তি দিবেন না।
গুজরাটে কারো হত্যা করা হলে,বোম্বে তে বোমা হামলা করা হয়।কেন তারা একই সম্প্রদায়।ইসলাম এটার অনুমতি দেয় না।চিন্তা করেন নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বোম্বের বোমা হামলায়,লন্ডনে বা নিউওয়ার্কে।এই নিরাপরাধ মানুষ গুলোর আত্মীয় স্বজনের চিরশত্রু হয়ে যাবে যারা এটা করেছে।
মনে রাখবেন,বলছি না মুসলিমরা করেছে।প্রমান নেই,কোন প্রমান পায় নি যে লাদেন এটা করেছে।এখানে এখনও ব্রিটিশ সরকার বের করতে পারে নি লন্ডনের বোমা হামলা কারীদের।এখনও কেউ জানে না বোম্বে হামলা করেছে কে?আমি বলছি না মুসলিমরা এটা করেছে।যেই এটা করে থাকুক মুসলিম বা অমুসলিম নিন্দা জানাতে হবে।
একজন ভাল মুসলিম,যে আল্লাহর কাছে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পন করে সে কখনই এমন কাজ করবে না।
_____________
মূল: ডা.জাকির নায়েকের বক্তব্যের শ্রুতিলিখন
Comments
Post a Comment