মরতেই হবে যখন......

 



আমার ভেতর থেকে মৃত্যু ভয় উবে গেছে। এখন আমি মরতে চাই। মাঝখানে ভয় পেতাম। অযথাই ভাবতাম—আমি যদি মরে যাই, এটার কী-হবে, ওটার কী-হবে? অমুকের কী হবে? তমুকের কী হবে?

এখন বুঝি—কারো কিচ্ছু হবে না। স্রেফ কিচ্ছু না। সব্বাই-ই সুখে থকবে। আনন্দে থাকবে। আমায় ভুলেই থাকবে। সেসব চিন্তাগুলো অযথা-ই করতাম। সেসব ভয় অযথা-ই পেতাম। আমি এখন ভীত নই। বিলকুল ভীত নই।


আমি মরণ চাই। শাহীদি মরণ। চিরকালের জীবন চাই। যে জীবনে সুখ আছে। যে জীবনে শান্তি আছে। হিসেব-নিকেশ হতেও ত্রাণ আছে যে জীবনে। বিনা হিসেবে জান্নাত আছে যে মরণে...


দুনিয়ার হাজারো অশান্তি দেখে এর-ও আগে ভেবেছিলাম হয়তো মরলেই মুক্তি। কিন্তু নাহ! মুক্তি অত্তো সহজ না। আমার জবাবদিহিতা আছে। হিসেব-নিকেশ আছে। আমি এই জবাবদিহিতা থেকেই তো মুক্তি চাই। রব্বের কঠিন হিসেব-নিকেশ হতেই তো ত্রাণ চাই।


আমি যদি শহীদ হতে পারি, শাহাদাতের জীবন পেতে পারি—তা হলেই তো স্বস্তি। তা হলেই তো মুক্তি। মরণের পর তো শান্তি চাই। সে মরণেই তো শান্তি...


যে মরণে চিরকাল সুখ পাবো, সুখের সাগরে ভেসে বেড়াবো—আমি সেই মরণ চাই। জান্নাতের খেজুর বাগানের মালিক হতে চাই। ফিরদৌসের সোনালি মাঠে সবুজ পাখি হয়ে পাখা মেলে ওড়াউড়ি করতে চাই। আমার যে সকল যন্ত্রণার অবসান ঘটবে সেখানেই। সেভাবেই.......


এই চির সুখের আশাতেই আমি শাহাদাত চাই। শাহাদাতের জীবন চাই। একবার-দু'বার নয়— হাজার বার শাহাদাত চাই। হ্যাঁ, হাজারবার শাহাদাত চাই। শহীদ হতে চাই। হাঁটতে-বসতে, চলতে ফিরতে আমি দয়াময় আল্লাহর কাছে বলি—হাজারো শাহাদাত দিও আমাকে.........


আমি রোগক্লিষ্ট। অসুস্থ। দুর্বল। ভীরু। কিন্তু আমি রোগে-শোকে মরণ চাই না। ঘরের কোণে বসে কাপুরুষের মতো মৃত্যু চাই না। কারণ এ-মরণের কোনো সার্থকতা নেই । সফলতা নেই। আমাদের দেশের একজন জনপ্রিয় মাজলুম আলিম বলেছেন—

বিড়ালের মতো পাঁচশো বছর বেঁচে থাকার কোনো লাভ নেই। সিংহের মতো এক ঘন্টা বাঁচতে চাই।

হ্যাঁ, আমিও তা-ই চাই। ক্ষণিকের এই দুনিয়ায় ক্ষণিক সময় বেঁচে পৃথিবীবাসিকে তাক লাগিয়ে দিতে চাই। রব্বের দাসত্বের নিগড়ে নিজকে আপাদমস্তক সঁপে দিয়ে রব্বের নিরেট দাস হয়েই মরতে চাই।


সে কারণেই গীতিকারের লেখা, শিল্পীর গাওয়া গানের কথাগুলো আমার হৃদয়ে অনুরণ তোলে। ঝড় তোলে। মিলোডি মাস্টার শ্রদ্ধাভাজন প্রিয় শিল্পী সাইফুল্লাহ মানসুরের গাওয়া, তার সঙ্গীতাঙ্গনের উস্তাদ মাওলানা তারেক মনোয়ারের লেখা গানটার সুরে সুর মিলিয়ে আমি আনমনে বেসুরে গলায় আমিও গেয়ে উঠি—

"মরতেই হবে যখন

শহীদি মরন দিও আমাকে।

শাহাদাত জানি শুধুই জীবন

সে জীবন দিও আমাকে।

মরনেও সুখ আমি, পাবো জানি শাহাদাতে

হিসেব-নিকেশ হতে ত্রান আছে জানি শাহাদাতে।

তাই মিনতি তোমার-ই কাছে

হাজার শাহাদাত দিও আমাকে।

রোগে শোকে মরন দিও না আমায়

বিপদে মসিবতে নিওনা আমায়

এমন মৃত্যু দিও চোখ বুঝলেই যেনো দেখি তোমাকে।

 কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন গড়ে নিজেকে আদর্শের চূড়ান্ত মানদণ্ডে উত্তীর্ণ করতে চাই। সে জন্য রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের সাথে নিবিড় বন্ধন তৈরি করতে হবে। সেজন্য আমিও বসেছি রাসুলে কারিম (স.)-এর হাদিস নিয়ে। হাদিসগ্রন্থ খুলতেই দেখি, একটি হাদিসে বলা হয়েছে—

'একমাত্র শহীদ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর পরে আবার দুনিয়ায় ফিরে আসতে আনন্দ পাবে না, কারণ সে আল্লাহর নিকট থেকে এমন কল্যাণপ্রাপ্ত হয়েছে যা দুনিয়া সমস্ত সম্পদের সমান। সে বাস্তবে শাহাদতের মর্যাদা অনুভব করবে এবং পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে এসে আরো একবার আল্লাহর পথে শাহাদত বরণ করার আনন্দ অনুভব করবে।’


শহীদের প্রাপ্তি ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলে কারিম (স.)-এর হাদিসে আরো বলা হয়েছে যে, একজন শহীদ আল্লাহর কাছ থেকে আরো ৬টি পুরস্কার পাবেন । সেগুলো হলো :


(১) শহীদের শরীরের রক্তের প্রথম ফোঁটা মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।


(২) জান্নাতে শহীদের সম্মান ও স্থান দেখানো হবে।


(৩) শহীদের কবর আযাব মাফ করে দেয়া হবে।

(৪) শহীদ ব্যক্তি কিয়ামতের ভয়ানক-আতঙ্কজনক বিভীষিকা থেকে নিরাপদ থাকবে।


(৫) শহীদের মাথায় মহাসম্মানিত জান্নাতী মুকুট পরানো হবে, যা মূল্যবান ইয়াকুত পাথর দুনিয়ার সকল সম্পদ থেকে উত্তম, এবং বাহাত্তর জন জান্নাতী হুরের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হবে।


(৬) একজন শহীদকে তার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে থেকে ৭০ জন লোককে জান্নাতুল ফেরদৌসে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করার ক্ষমতা দেয়া হবে।


কুরআন খুলে দেখি, মহান আল্লাহ পাক নিজেও পবিত্র কুরআন মাজীদে শহীদদের সম্পর্কে বলেছেন,


"যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের নিকট হতে তারা রিজিক প্রাপ্ত।’ (সূরা: আল-ইমরান, আয়াত :১৬৯)


এতো এতো লোভনীয় অপার-অসীম অনুগ্রহ আর মর্যদা দেখে আমি পুনরায় আনমনে চুপি চুপি বেসুরে গলায় গাইতে থাকি—

শাহাদাতের জীবন ছাড়া, চাই না কিছুই আর

সুখের জীবন, ফুলে ভরা সাজানো সংসার.........




~রেদওয়ান রাওয়াহা।

২১.০৩.২১

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ