Posts

Showing posts from April, 2025

আমীরে জামায়াতের শহীদ পরিবার-সফর

Image
 ইতেকাফের নিবিষ্ট আত্মসমর্পণ শেষে আমীরে জামায়াত, ডা. শফিকুর রহমান, সরাসরি ছুটে গেছেন জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবারের কাছে। গিয়েছেন ২৮শে অক্টোবরের শহীদদের স্বজনদের সমীপেও। এটি নিছক আনুষ্ঠানিক এক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়; বরং এটি এক গভীর রাজনৈতিক প্রতীক, যা ইসলামী আন্দোলনের অন্তর্নিহিত দর্শন ও সংগ্রামের স্বরূপকে নতুন মাত্রায় উপস্থাপন করে। ঐতিহাসিকভাবে আত্মত্যাগ ও রাজনৈতিক সংগ্রাম পরস্পরের পরিপূরক। প্রতিটি বিপ্লব তখনই স্থায়িত্ব লাভ করে, যখন তার শহীদদের স্মৃতি কেবল আবেগের পরিসরে সীমাবদ্ধ না থেকে রাষ্ট্রনৈতিক ও আদর্শিক ভিত্তিতে প্রতিস্থাপিত হয়। ডা. শফিকুর রহমানের এই সফর— সেই দায়বদ্ধতারই সুস্পষ্ট স্বীকৃতি। তিনি ইচ্ছে করলেই প্রথাগত রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতো একটি আবেগঘন বিবৃতি দিয়েই কর্তব্য সম্পন্ন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে বরং শহীদদের রক্তের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন, কৃতজ্ঞতার সশ্রদ্ধ প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। শহীদদের আত্মত্যাগকে তিনি কেবল রাজনৈতিক বা ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতেই দেখেননি; বরং একে রাষ্ট্রীয় নির্মাণের এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিপ্লবী সংগ্রামে আত্মত্যাগ তখনই ...

বিএনপির মিছিলে কালিমার পতাকা

Image
  বিএনপির সাম্প্রতিক এক মিছিলে দেখা গেল ফিলিস্তিনের পতাকা আর কালিমা খচিত সেই চিরচেনা নিশান। স্লোগান উঠল— “জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাই।” আমার স্মৃতিতে যতগুলো ইসলামি ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের ছবি আছে— ২০১০ সালের কুরআন বিরোধী নারীনীতি, ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি, ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলন , কিংবা সদ্য ঘটে যাওয়া জুলাই অভ্যুত্থান— প্রতিটিতেই কালিমার পতাকা ছিল এক অবিচ্ছেদ্য উপস্থিতি— কম বা বেশি।  জুলাইয়ে আমি নিজ হাতে, নিজ হৃদয়ের তাগিদে সেই পতাকা বেঁধে মিছিলে হেঁটেছি— কারও নির্দেশে নয়। শুধু এই জুলাইয়ে নয়, ২০১৩ সালের হেফাজত আন্দোলনেও আমি নিজে সাদার ওপর কালো কালিমা লেখা পতাকা হাতে নিয়ে রাজপথে ছিলাম, আহতও হয়েছি। তবে ৫ আগস্টের পর আচমকাই আমাদেরই কিছু ভাই— এসব জালিম আর জাহিলদের আমাদের ভাই সাব্যস্ত করতেও দ্বিধা হয়— এই পতাকাটিকে অপরাধের প্রতীক বানিয়ে তুললেন। আল্লাহই ভালো জানেন কার অন্তর কতটুকু সত্যাশ্রয়ী, কার উদ্দেশ্য কতটুকু নির্মল। তিনিই অন্তরদর্শী, তিনিই চূড়ান্ত বিচারক, তিনি অবশ্যই এর বিচার করবেন— ইন শা আল্লাহ। এই পতাকা— সাদার ওপর কালো অক্ষরে লেখা কালিমা অথবা কালোর ওপর সাদা— বাং...

মকবুল আহমদ রহিমাহুল্লাহ : নীরব নেতৃত্বের আলো

Image
  আলো-আড়ালের যুগল পরিবেশে গড়ে ওঠা কোনো কোনো মানুষ থাকেন, যাঁদের জীবনের স্বর সুরের চেয়ে স্থিরতায় সমৃদ্ধ। তাঁদের না থাকে তুমুল জনপ্রিয়তা, না থাকে নন্দনের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সময় যখন ক্ষয়ে যেতে থাকে, ইতিহাস যখন ধুলোমলিন হয়ে পড়ে, তখন হঠাৎ দেখা যায়— এইসব নীরব মানুষগুলোই রেখে গেছেন সবচেয়ে বেশি প্রভাব, সবচেয়ে গভীর আলো। মকবুল আহমদ (রহি.) ছিলেন তেমনই একজন মানুষ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৃতীয় আমীর। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এমন এক সময়ে, যখন ‘জামায়াত’ শব্দটি জনপ্রিয়তা কিংবা ক্ষমতার অংশীদারত্বের নয়, বরং ঘৃণা, ষড়যন্ত্র ও অপরাধের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। মিডিয়া, ক্ষমতা ও সামাজিক ভাষ্য একসুরে গাইছিল— জামায়াত মানে যুদ্ধাপরাধ, শিবির মানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। এই প্রোপাগান্ডার মাঝখানে দাঁড়িয়ে, হাজারো মামলা-মোকদ্দমার মধ্যে, নেতাকর্মীদের অনিশ্চয়তা আর গণহারে গ্রেফতারের ভয়াবহ বাস্তবতায়— দলের দায়িত্ব পালন ছিল সহজ কোনো কাজ নয়। কিন্তু এমনই এক অন্ধকারের মধ্য দিয়ে, একজন ক্ষীণ অথচ স্বচ্ছ আলোর রেখার মতো তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন।  যখন একে একে দলের শীর্ষ নেতাদের কারাবরণ ও ফাঁসি ঘটছে, যখন রা...

ভারতে মাদরাসা ভাঙ্গা

Image
  মাদ্রাসা নয়, যেন ইসলাম-মুসলমান এবং ইতিহাসের গায়ে শাবলের আঘাত ভারতের মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলায় দাঁড়িয়ে থাকা ত্রিশ বছরের পুরনো একটি মাদ্রাসা— যেটি শুধু চার দেওয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, ছিল এক প্রজন্মের স্বপ্ন, বিশ্বাস ও জ্ঞানের আঁতুড়ঘর— তা সম্প্রতি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘অবৈধ নির্মাণ’ আখ্যা দিয়ে। এই ঘটনাটি ঘটেছে সদ্য পাস হওয়া ওয়াকফ সংশোধনী বিল-এর আলোকে, যার অন্তরালে লুকিয়ে আছে মুসলিমদের ধর্মীয় সম্পদের ওপর আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।  কেউ কেউ বলতেই পারে, এটিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া ছিল আইন অনুযায়ী; কিন্তু একটি জাতির বিশ্বাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থলকে এইভাবে নিশ্চিহ্ন করা—এটা কোনো আইন নয়, বরং অবিচারকে আইনের মুখোশ পরানো। কিন্তু যারা জানে, মাদ্রাসা কীভাবে আত্মা গড়ে তোলে, তারা বুঝবে— এটি কেবল ইট-পাথরের বিল্ডিং ছিল না। এটি ছিল সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। এদিকে উত্তরাখণ্ডে ১৭০টি মাদ্রাসা ইতোমধ্যেই সিলগালা করা হয়েছে। যেন এক এক করে নিভিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঈমানের দীপশিখা, যেন তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বাতাস থেকে ইসলামের কণ্ঠস্বর। আজ প্রশ্ন জাগে—এ কি কেবল ভবন ভাঙার অভিযান, না-কি ইতিহা...