বিএনপির মিছিলে কালিমার পতাকা

 





বিএনপির সাম্প্রতিক এক মিছিলে দেখা গেল ফিলিস্তিনের পতাকা আর কালিমা খচিত সেই চিরচেনা নিশান।


স্লোগান উঠল— “জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাই।”


আমার স্মৃতিতে যতগুলো ইসলামি ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের ছবি আছে— ২০১০ সালের কুরআন বিরোধী নারীনীতি, ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি, ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলন , কিংবা সদ্য ঘটে যাওয়া জুলাই অভ্যুত্থান— প্রতিটিতেই কালিমার পতাকা ছিল এক অবিচ্ছেদ্য উপস্থিতি— কম বা বেশি। 


জুলাইয়ে আমি নিজ হাতে, নিজ হৃদয়ের তাগিদে সেই পতাকা বেঁধে মিছিলে হেঁটেছি— কারও নির্দেশে নয়।


শুধু এই জুলাইয়ে নয়, ২০১৩ সালের হেফাজত আন্দোলনেও আমি নিজে সাদার ওপর কালো কালিমা লেখা পতাকা হাতে নিয়ে রাজপথে ছিলাম, আহতও হয়েছি।


তবে ৫ আগস্টের পর আচমকাই আমাদেরই কিছু ভাই— এসব জালিম আর জাহিলদের আমাদের ভাই সাব্যস্ত করতেও দ্বিধা হয়— এই পতাকাটিকে অপরাধের প্রতীক বানিয়ে তুললেন।


আল্লাহই ভালো জানেন কার অন্তর কতটুকু সত্যাশ্রয়ী, কার উদ্দেশ্য কতটুকু নির্মল। তিনিই অন্তরদর্শী, তিনিই চূড়ান্ত বিচারক, তিনি অবশ্যই এর বিচার করবেন— ইন শা আল্লাহ।


এই পতাকা— সাদার ওপর কালো অক্ষরে লেখা কালিমা অথবা কালোর ওপর সাদা— বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ইসলামি আন্দোলনের অপরিহার্য অংশ ছিলই ছিল। আজও আছে। ইসলামকে ঘিরে যেকোনো ইস্যুতে এটি ব্যবহার করা হতো। এখনো হয়।


জুলাই অভ্যুত্থানে দুয়েকজন শহীদের হাতেও কালিমা খচিত পতাকা দেখেছি— যাঁদের একজনের পরিবারের সম্মানিত সদস্যগণ আমার ফ্রেন্ড লিস্টেই আছেন। 


 ইউরোপ-আমেরিকার মুসলিমরাও এসব পতাকা ব্যবহার করেন। কেউই এটাকে ক্রিমিনালাইজ করেনি। এমনকি ‘আব্বো আমেরিকা’ পর্যন্ত কখনো এটিকে ‘ক্রিমিনালাইজ’ করেনি।


কিন্তু এই আমরাই, তথাকথিত ‘ইকামাতে দ্বীন’ বা দ্বীন কায়েমের আন্দোলনের উত্তরসূরি কর্মীরাই এটিকে সন্দেহের চাদরে আবৃত করে ফেললাম।


তাও এমন কিছু বার্নআউট ইসলামিস্টদের এক্টিভিজমের প্রভাবেই, যারা আজ আর ইসলামি রাষ্ট্র বা ইসলামী শাসনব্যবস্থার স্বপ্নে ও আন্দোলনে আস্থা রাখেন না— বরং এটিকে নিয়ে উপহাস করেন।


যাদের কাছে ‘ইকামাতে দ্বীন’ কেবলই এক সেন্টিমেন্টাল স্মৃতি, কিংবা ছাত্রজীবনের অতীত রোমান্টিসিজম!


সেইসব ‘অতিপড়ুয়া/ইন্টেলেকচুয়ালদের’ মনোভঙ্গির ছায়া আজ ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের চেতনায়, আমাদের প্রতীকে, আমাদের সরল ধর্মীয় আবেগে।


আমি নিজে সাদার ওপর কালো কালিমা লেখা পতাকাটি ভালোবাসি— নিছক এক নির্ভেজাল ধর্মীয় আকর্ষণে।


চার বছর আগেও আমার ইউটিউব চ্যানেলে একটি সংগীত আপলোড করি। এই পতাকাই ছিল থাম্বনেইলে।


কালো ব্যাকগ্রাউন্ড আমার কাছে কেমন যেন ভারি লাগে, আমি বেশি ভালোবাসি সাদার শুভ্রতার মাঝে কালিমার উচ্চারণ দেখতে।


কিন্তু আজ, সেই পতাকাটিকে আমরা নিজেরাই অবচেতনভাবে ‘অপরাধী প্রতীকে’, ‘জঙ্গিবাদের সাইনে’ পরিণত করে ফেলছি,  করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।


এ যেন এক নিঃশব্দ অন্তর্ঘাত— বাইরে থেকে নয়, ভেতর থেকেই।


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের কিছু বোধবুদ্ধি দিক। আমাদের ঘৃণা ও প্রতিহিংসার আবরণে ঢেকে থাকা অন্তরে অন্তত এক ছটাক আলো এনে দিক। আ-মী-ন। 


সর্বশেষ, বিএনপির এই সমাবেশ, এই মিছিল প্রমাণ করে, বিএনপিও ইসলামকে যতটা আপন করবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা ততোধিক ভালো করবে। 


বাংলাদেশের মানুষ কালিমার পতাকা ব্যবহার যে নিরেট ধর্মীয় আবেগের জায়গা থেকে করে, বিএনপির মিছিল সেটাই প্রমাণ করলো।


আমরা ইসলামি মূল্যবোধ সম্পন্ন বিএনপিকে ভালোবাসি। এই বিএনপিকেই দেখতে চাই। 


রামবামদের আধিপত্যওয়ালা বিএনপি দেখতে চাই না। 


বিএনপিকেও বুঝতে হবে— ইসলাম ও মুসলিম সেন্টিমেন্টের বাহিরে গিয়ে রাজনীতি করার পরিণাম আদতে ভালো হবে না। 


বিএনপির জন্য শুভকামনা আল-আকসা ইস্যুতে এত সুন্দর, এত বড়ো একটি মিছিল-সমাবেশ করার জন্য। 💚


০৯.০৫.২৫ ইং

Comments

Popular posts from this blog

কেমন ছিল শেখ মুজিবুর রহমান

“শবে-বরাত ও সংস্কৃতি : কিছু প্রশ্ন কিছু কথা”

ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের অপপ্রয়োগ