Posts

মোল্লা ওমরের রহ. মায়ের ইন্তেকাল

Image
  তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর রহমতুল্লাহি আলাইহির সম্মানিত মা দীর্ঘদিন জীবিত ছিলেন—এই তথ্যটি আজ তাঁর ইন্তেকালের সংবাদে এসে জানতে পারলাম। এক মায়ের বিদায় মানে শুধু পারিবারিক শোক নয়; ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত একজন নীরব সাক্ষীর প্রস্থানও বটে। বহু ঘটনা শব্দহীনভাবে যাঁর চোখের সামনে ঘটেছে, যিনি জন্ম দিয়েছিলেন আস্ত এক কিংবদন্তিকে—আজ সেই মহীয়সী ব্যক্তি চিরতরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। মোল্লা ওমর রহমতুল্লাহি আলাইহি এই একবিংশ শতাব্দীর জিহাদ, ইকামাতে দ্বীন ও আজাদী আন্দোলনের অন্যতম আইকন। একজন নিতান্ত সাধারণ মাদরাসা-শিক্ষার্থী থেকে তিনি নারীর ইজ্জত রক্ষার লক্ষ্যে গড়ে তুলেছিলেন একটি সংগঠন। আর সেখান থেকেই তিনি বলতে গেলে সকল জালিম ও কাফিরদের কাছে ত্রাসে পরিণত হন। নারীর মর্যাদা রক্ষায় এক সময়ে গড়ে তোলা এই আন্দোলনের সূচনা ছিল অত্যন্ত সীমিত পরিসরে— জাতীয় তো বটেই, এমনকি নিজেদের অঞ্চলেও প্রায় অনুচ্চারিত এক নাম। সময়ের স্রোতে সেই উদ্যোগ ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার ভেতর দিয়ে রূপান্তরিত হয়ে আঞ্চলিক গণ্ডি অতিক্রম করে বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে যায়। মূলত তালেবান আন্দোলন ছিল সামাজিক অপরাধ ন...

বেগম রোকেয়াপূর্ব ভারতে নারী শিক্ষা

Image
  কথিত নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ সালে ব্রিটিশ বাংলায়। তিনি নারী শিক্ষা নিয়ে বেশকিছু কাজ করেছেন এটা সত্য কিন্তু সমস্যা হলো জনমানসে একটা বয়ান ছড়ানো হয়েছে যে বেগম রোকেয়ার আগে কেউই মুসলিম নারীদের শিক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয়নি, তিনি না থাকলে মুসলিম নারীরা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতো, তাদেরকে কেউ উদ্ধার করার ছিলোনা তিনিই এসে নাকি উদ্ধার করেন। নারীশিক্ষার মশাল জ্বালান। মোটাদাগে তিনটে বয়ান পাওয়া যায়— ১. ধর্মান্ধতার কারণে মুসলমানরা তাদের নারীদের পড়াশোনা করতে দেয়নি। ২. মুসলিমরা কেউ এগিয়ে আসেনি বরং নারীশিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।  ৩.বেগম রোকেয়া এসে সকলকে উদ্ধার করেছে তাঁর আগে কেউই এবিষয়ে ভাবেননি। ১| ধর্মান্ধতার কারণে মুসলমানরা তাদের নারীদের পড়াশোনা করতে দেয়নি:  ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ এটা চূড়ান্ত একটা অসত্য কথা। ভারতবর্ষে নাহয় রোকেয়া এসেছেন তাই মুসলিম নারীরা শিক্ষিত হতে পেরেছে বলে ধরে নিলাম কিন্তু আধুনিক বিশ্বের দিকে তাকালে আজ আমরা দেখতে পাই, ইসলামি বা মুসলিম বহুল রাষ্ট্রগুলোর নারী শিক্ষার হার ৯০% থেকে ১০০%-এর মধ্যে। সেখানে তো কোন রোকেয়া আসেননি। তাহলে কীভাবে এটা হলো! কারণ ...

সভ্যতা ও নারী

Image
  একটি সমাজকে ভেতর থেকে পরিবর্তন করতে হলে প্রয়োজন মেটিকুলাসলি প্ল্যানড সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষের চিন্তা-চেতনা, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধকে সুপরিকল্পিতভাবে নতুন ছাঁচে ঢেলে সাজাবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধক যা, তা হলো পরিবার, আর পরিবারের প্রাণকেন্দ্র হলো নারী। উপনিবেশবাদীরা এটি নিখুঁতভাবে বুঝেছিল। তাই তারা নারীকে তাদের সমাজ-রূপান্তর প্রজেক্টের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। এজন্য ‘ ‘নারী অধিকার’’ ,  ‘‘নারী স্বাধীনতা’’  কিংবা ‘ ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’’  ‘‘সফল কিংবা সাহসী নারী’’,  ইত্যাদির মতো কিছু ন্যারেটিভ, কিছু মুখরোচক ও ঝলমলে স্লোগানকে সামনে নিয়ে আসে। এই স্লোগানগুলোকে তারা সামনে নিয়ে এলেও বাস্তবে এগুলো হলো মরীচিকা; ভেতরে লুকানো আছে পরিবারকে দুর্বল করার সাবটল স্ট্র্যাটেজি। মূলত পরিবারই সমাজের মৌলিক ভিত্তি। এটি শুধু সামাজিক প্রতিষ্ঠানই নয়, বরং মানুষের চরিত্র ও মূল্যবোধ গঠনের প্রথম পাঠশালা। সভ্যতার প্রধান এবং প্রথম বুনিয়াদ। পরিবারে একজন মায়ের মাধ্যমে সন্তানের অন্তরে প্রবেশ করে বিশ্বাস, মূল্যবোধ, নী...

নারী কার্ডের নাটক ও সমাজে জেন্ডার ভিক্টিমহুডের রাজনীতি

Image
আমাদের সমাজে এক অদ্ভুত কৌশল বহুদিন ধরে চালু আছে— নাম তার নারী কার্ড। কোনো নারীর বিরুদ্ধে সামান্য সমালোচনা কিংবা প্রশ্ন তুললেই লাফিয়ে ওঠেই বলে দেওয়া হয়— নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছে, নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। মানে নারীর ক্ষেত্রে যেকোনো সমালোচনাই সরাসরি নারী হেনস্তা বা নারী বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। অথচ একই সমালোচনা কি পুরুষের ক্ষেত্রে এত দ্রুত হেনস্তার তকমা পায়? অদ্ভুত বিষয় হলো— “হেন করা”, “তেন করা”, কিংবা “হেনস্তা করা”— এসব যেন কেবল নারীর ওপরই প্রয়োগযোগ্য শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ সমাজের প্রতিটি স্তরে— যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রাজনীতি, অফিস থেকে আদালত— সর্বত্র সবচেয়ে বেশি হেনস্তা ও দুঃসহ পরিস্থিতির শিকার হয় কেবল পুরুষেরাই। দুনিয়া ঘুরে দেখা লাগবে না, বাংলাদেশের ইতিহাসও লাগবে না, আপনার আশেপাশেই এর অজস্র প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। খেয়াল করে দেখুন: ক্রসফায়ার— পুরুষ। ফাঁসি— পুরুষ। বন্দুকযুদ্ধের নামে খুন— পুরুষ। সন্ত্রাস দমনের নামে হত্যা— পুরুষ। রাজপথে লাশ হয়ে পড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক সংগ্রামী— পুরুষ। এত কিছুর পরেও কিন্তু কেউ বলে না, “পুরুষ হেনস্তা হচ্ছে”। অথচ কোনো নারীর দিকে সামান্য বিদ্রূপের আঙুল ওঠল...

আমরা কাদের সঙ্গী হব

Image
  কিছুদিন আগে একটা নিউজ চোখের সামনে পড়ল। পাকিস্তানের এক মডেল নিজের অ্যাপার্টমেন্টে মারা গেছে, কিন্তু বহুদিন যাবৎ তার লাশটা ওখানেই পড়ে ছিল। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তার মৃতদেহ সেখানে। এরপর আস্তে আস্তে বের হলো আরো চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। একমাস না, দীর্ঘ আট মাসেরও বেশি সময় ধরে লাশটা সেই অ্যাপার্টমেন্টেই পড়ে আছে। ভিডিও বের হলো। লাশের অবস্থা এত ভয়ানক যে তাকানো যাচ্ছে না। চারিদিকে ঘিরে আছে পোকামাকড়ের দল। গন্ধ ছুটছে। হাত-পায়ের মাংস খসে পড়ছে। পচেগলে চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে। বীভৎস দৃশ্য।   এই ঘটনাটা আমার মনস্তত্ত্বে খুব নাড়া দিল। ভাবছিলাম, জীবিত থাকতে এই নারী কতই না সুন্দরী ছিল। তার অজস্র ছবি নেট জগতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছিপছিপে গঠন, নিত্যনতুন পোশাক, সুন্দর সুন্দর পোজ দেয়া ছবি। রূপবতী এক নারী ছিল সে। মডেলিং জগতে নিশ্চয়ই যাকে-তাকে নেয়া হয় না। কিন্তু কতটা লোনলি ছিল তার জীবন চিন্তা করা যায়? দীর্ঘ আট মাস কেউ তার কোনো খোঁজও করে নি। হয়তো খোঁজ করলেও এতটা ক্লোজ কেউ ছিল না, যারা তার জন্য দুশ্চিন্তা করবে। কেউ ভাবে নি, মেয়েটা এতদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে চুপ হয়ে কেন আছে? কেউ একবারের জন্য তার সাথে দেখা করতে আসে...

পারস্পরিক বিরোধিতা : গণতন্ত্রের অনিবার্য বাস্তবতা

Image
  গণতন্ত্রের ব্যাপারটাই এমন— এখানে একটা শত্রু পক্ষ লাগবেই। সেই শত্রুপক্ষ যত ভালো কাজই করুক, তার ভালো কাজগুলো হাইলাইট করা হবে না, বরং সেই পক্ষের নেগেটিভ দিকগুলোই মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।  অপরের দোষগুলো তুলে ধরা আর সব সময় নিজের গুণাবলিকে মানুষের সামনে ফুটিয়ে তোলাটাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম প্রধান অবলম্বন।  গণতন্ত্রে যেহেতু সবাই মানুষকে কনভিন্স করেই ক্ষমতায় যেতে চায়, সেহেতু মানুষকে নিজের দলের দিকে কীভাবে নিয়ে আসা যায়, আর অন্য পক্ষ থেকে কীভাবে জনতাকে দূরে সরানো যায়; সেই চিন্তা, সেই কৌশল নিয়ে সব সময়ই ব্যস্ত থাকতে হয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে। সুতরাং, এর আলোকে স্পষ্টভাবেই বলা যায় যে, গণতন্ত্রের স্বার্থে একদল অন্য দলের বিরোধিতা করবেই— বিশেষত যাকে সবচেয়ে বড়ো এবং বেশি প্রতিদন্ধী মনে হবে, তার ব্যাপারে এমনটা হবেই। ইউরোপ-আমেরিকা যেহেতু বিশ্বের নিয়ন্ত্রক, সেহেতু তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য নিজেদের মধ্যে খুনোখুনিটা খুবই কম। এই খুনোখুনির ব্যাপারটা তাদের মধ্যে যদি বেশি ঘটে, তাহলে তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন, ইত্যাদি টুলসগুলো দিয়ে বিশ্বক...

বিএনপি: মরীচিকার রাজনীতি

Image
  ১. বিএনপির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট হলো— এই দলের কোনো সুসংহত আদর্শ বা মহান রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। সাধারণ মানুষ আদর্শিক টান থেকে বিএনপিকে বেছে নেয় না; বরং তারা বিএনপিকে দেখে একটি বিকল্প আশ্রয়স্থল হিসেবে— আওয়ামী লীগের জুলুম থেকে বাঁচার সাময়িক ছায়া। ২. বিএনপির আরেকটা বড়ো সংকট কিংবা ব্যর্থতা হলো রাজনৈতিক ভাষ্য নির্মাণে ব্যর্থতা। বিএনপি কখনোই নিজস্ব বয়ান বা দর্শন গঠনে সক্ষম হয়নি।  এদেশে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে টিকে থাকার জন্য যেমন আদর্শ দরকার, তেমনি দরকার সময়োপযোগী রাজনৈতিক ভাষ্য।  এই দুই ক্ষেত্রেই বিএনপি দুর্বল, যার ফলে তারা ক্রমাগত জনগণের আস্থার বাইরে চলে যাচ্ছে। ৩.  বিএনপি আদতে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই গড়ে ওঠেছিল। আজও তারা সেই ভূমিকাতেই আটকে আছে— শুধু বিরোধিতা, প্রতিস্থাপন বা প্রতিশোধের রাজনীতি। এর বাইরের কোনো দৃষ্টিভঙ্গি তারা জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি।  ৪. হতাশ ও বার্নআউট ইসলামপন্থী এবং বামপন্থীদের সাময়িক আশ্রয়স্থল:  প্রথমত, এক শ্রেণির ইসলামপন্থী ও বামপন্থী রয়েছেন, যারা ইসলামি আদর্শভিত্তিক (বামদের ক্ষেত্রে তাদের আদর্শভিত্তিক) রাজনী...