Posts

প্রজ্ঞা ও পরিণত নেতৃত্বের জয়

Image
 আলহামদুলিল্লাহ! কোনো উত্তেজনা, অস্থিরতা, বাড়াবাড়ি কিংবা অহেতুক চাপসৃষ্টির পথ বেছে না নিয়েই, আবারও বিজয়ের মুকুটে অভিষিক্ত হলেন আমীরে জামায়াত, ডা. শফিকুর রহমান। তবে এ বিজয় ভিন্নধর্মী একটি বিজয়। এটি একটি চিন্তার বিজয়, একটি কৌশলগত পরিপক্বতার বিজয়, একটি রাষ্ট্রদর্শনভিত্তিক প্রস্তাবনার বিজয়। তথাকথিত ‘বিপ্লবী সরকার’ এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছিল, আর অপরদিকে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছিল— তখন দৃশ্যপটে একটি অব্যক্ত অচলাবস্থা ঘনিয়ে আসছিল। দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী পক্ষ দুটোর মধ্যে কোনো পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে অনিচ্ছুক থাকায়, স্পেশালি বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি থেকে পিছু হটতে অনিচ্ছুক থাকায় সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছিল। এই অচল পরিস্থিতির ভেতরে আগে থেকেই নীরব প্রত্যয়ে একটি দুরদৃষ্টির সাথে সুন্দর একটি মতামত প্রদান করেছিলেন একজন চিন্তাশীল নেতা— ডা. শফিকুর রহমান। তিনি আবেগের নয়, প্রজ্ঞার ভাষায় বলেছিলেন, “নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারি হতে পারে। এপ্রিল মাস পার হওয়া অনুচিত।” এই বক্তব্য তিনি প্রথম উত্থাপন করেন ঢাকায় স...

জামায়াতের রাজনৈতিক দর্শন ও এটিএম আজহার

Image
  একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন কি? দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েও এটিএম আজহার সাহেব তার আদর্শ, রাজনৈতিক দর্শন বা চিন্তাচেতনায় একচুল পরিমাণও বিচ্যুত হননি। মুক্তিলাভের পর যখন পুনরায় তিনি তার রাজনৈতিক দর্শন প্রকাশ করেছেন, তখনই স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিয়ে বলেছেন: "ইসলামকে নিয়েই ক্ষমতায় যেতে চাই। ইসলামকে রেখে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমি ক্ষমতায় গেলে হয়তো মন্ত্রী হতে পারব, কিন্তু ইসলাম তো ক্ষমতায় যাবে না। ইসলামকে সাথে নিয়েই ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সার্থক হবে। শহীদ ভাইয়েদের আত্মত্যাগও সার্থক হবে।"  তিনি অন্য আরেকটি বক্তব্যে বলেছেন— "আমার জীবনে পাওয়ার মতো আর কিছু নেই। কেবল এই জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে— এটাই দেখে যেতে চাই।" আজহার সাহেবের এই ঘোষণা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শহীদ নেতাকর্মী ও কারাগারে বন্দি অবস্থায় মৃত্যু বরণকারী নেতৃবৃন্দের অভিব্যক্তিরই প্রতিফলন। তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটিই— ইসলামের বিজয়। শহীদ নেতৃবৃন্দের মধ্যে সম্ভবত ব্যতিক্রম শুধু একজনই ছিলেন— যিনি পোস্ট-ইসলামিজম' -এর কথা ভাবতেন। আজহ...

“জেন্ডার ভিক্টিমহুডের রাজনীতি”

Image
  পুরুষদেরকে সারাদিন গালি দিলেও পুরুষরা এসে জেন্ডার কার্ড ইউজ করে ভিক্টিম সাজে না। বলে না— পুরুষ জাতিকে ছোটো করা হচ্ছে, পুরুষ জাতির অসম্মান করা হচ্ছে বা এই টাইপের কোনো আজগুবি কথা।  অথচ, পুরুষ শুধু গালি খায় না, মাইরও খায়। খুনও হয়। পুরো জীবনটাই ধ্বংস হয়ে যায় তাদের। তার মানে কি নারীদের খুন হতে হয় না? হয়। কিন্তু তুলনাটা আশা করি বুঝেন এবং জানেন। যুদ্ধে, দুর্যোগে, যেকোনো সংকটে ও সংঘাতে— সব সময়, সবচেয়ে বেশি যে বা যারা মারা যায়, আহত হয়, রক্তাক্ত হয়, তারা হলো এই পুরুষ জাতি। এই যে জুলাই ম্যাসাকার গেলো, এই জুলাই ম্যাসাকারে শাহাদাত  বরণকারী প্রায় ৯৯.৫০% পুরুষই। এমনকি যারা গুলি খেয়েছে, যারা পঙ্গু হয়েছে, হসপিটালাইজড হয়েছে— তাদের মধ্যেও ৯৯%ই পুরুষ।  এভাবে প্রত্যেটা দুর্যোগে, প্রত্যেকটা দুর্ভোগে, প্রত্যেকটা সংকটে পুরুষরাই জীবন বিলিয়ে দেয়। পুরুষরাই নিজেদের শক্ত বাহু দ্বারা দুনিয়াটাকে আগলে রাখে।  পুরুষরাই নারীকে প্রটেক্ট করে। শুধু নারীকে না, পুরো মানবসভ্যতাকেই ধ্বংসের হাত থেকে হেফাজত করে।  পুরুষ যদি ধর্ষক হয় বা অপরাধ করে, তবে আবার সেই পুরুষই এগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে...

জামায়াত-শিবির কীভাবে একাত্তর ইস্যুটাকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে পারবে?

Image
  জামায়াতের জন্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটা নির্মম বাস্তবতা হলো— বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, এমনকি কমিউনিস্ট-সোশালিস্টরাও যদি বিলিন হয়ে যায়, তবুও একাত্তর জামায়াতের পিছু ছাড়বে না। ছাড়বে না বলতে ছাড়বে না। কোনো ক্রমেই না। যদি না একটা পূর্ণাঙ্গ ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত করতে পারে তারা।  বর্তমান যে রাজনৈতিক কাঠামো, যে তাগুতি ও কুফুরি ব্যবস্থা, এই ব্যবস্থায় জামায়াত শুধু ব্যবহৃতই হবে। আজ এই গ্রুপ থেকে তো কাল ওই গ্রুপ— জামায়াত একাত্তর ইস্যুতে ছোবল খাবেই। নির্মমতার মুখে পড়বেই। আবার এই নির্মমতার কারণে আজকে কেউ সহানুভূতি প্রদর্শন করে পাশে দাঁড়াবে তো কালকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তখন অন্য কেউ এসে আবার নিপীড়ন চালাবে। আবার কেউ দু'চারটা সহানুভূতিমূলক কথাবার্তা বলবে। আবার পল্টি নেবে। একটি পরিপূর্ণ ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত করা ছাড়া, এই অসহায়ত্ব জামায়াতের পিছু কখনোই ছাড়বে না। মাত্রাটা কমবে বা বাড়বে। এই আর কি! কিন্তু, প্রশ্ন হলো, জামায়াত-শিবির বর্তমানে বিপ্লবী মানসিকতা কতখানি রাখে? কতটা শক্তিশালী পরিকল্পনা আছে একটা টেকসই ইসলামি বিপ্লব সাধনের জন্য? হ্যাঁ, তারা ইসলামি হুকুমত কায়েমের জন্যই রাজনীতি...

আন-নাহদার পতন: মুসলিম রাজনীতির পথভ্রষ্ট মানচিত্র

Image
.আজ একটা খবর পড়লাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল।  খবরটা একদিকে ইন্ট্রেস্টিং। আবার, অন্যদিকে বিশ্ব ইসলামি আন্দোলনের জন্য কষ্টদায়ক, পাশাপাশি শিক্ষনীয়ও বটে। তিউনিসিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আন-নাহদা পার্টির নেতা, আলী লারাইদকে ৩৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। অভিযোগ— ইরাক ও সিরিয়ায় জিহাদি পাঠিয়েছেন তিনি। এর আগে এই পার্টির প্রধান, ড. রাশিদ ঘানুসিকেও তিন বছরের সাজা দিয়েছিল আদালত। আন-নাহদা পার্টি ও রাশিদ ঘানুসি— ইসলামি আন্দোলনের সঙ্গে যাদের পরিচয় আছে, এ নাম দুটো তাদের অচেনা নয়। যদিও, সবারই যে জানা থাকবে, তা না। একসময় আমারও ছিল না। পরে জানতে পেরেছি। রাশিদ ঘানুসি— এক সময় ছিলেন দ্বীন প্রতিষ্ঠার এক প্রতিশ্রুতিশীল মুখ। মুখে ইসলামি রাষ্ট্রের কথা, বুকে উম্মাহর ব্যথা, কর্মে খিলাফতের স্বপ্ন। মনে হতো, এ মানুষটিই বুঝি ইতিহাস বদলে দিতে পারেন। কিন্তু সময় বদলায়। মানুষও বদলায়। ঘানুসি বদলে গেলেন। এই ধারার অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের মতো বাহ্যিক সুরত-সিফত তো আগে থেকেই বদলে ছিল, পরবর্তীতে চিন্তাভাবনায়ও আদ্যোপান্ত বদলে গেলেন তিনি। ইসলামি চিন্তাকে আপাদমস্তক আধুনিকতার ফ্রেমে ঢোকাতে চাইলেন। তিনি হয়ে ওঠেছিলেন “মুসল...

আমীরে জামায়াতের শহীদ পরিবার-সফর

Image
 ইতেকাফের নিবিষ্ট আত্মসমর্পণ শেষে আমীরে জামায়াত, ডা. শফিকুর রহমান, সরাসরি ছুটে গেছেন জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবারের কাছে। গিয়েছেন ২৮শে অক্টোবরের শহীদদের স্বজনদের সমীপেও। এটি নিছক আনুষ্ঠানিক এক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়; বরং এটি এক গভীর রাজনৈতিক প্রতীক, যা ইসলামী আন্দোলনের অন্তর্নিহিত দর্শন ও সংগ্রামের স্বরূপকে নতুন মাত্রায় উপস্থাপন করে। ঐতিহাসিকভাবে আত্মত্যাগ ও রাজনৈতিক সংগ্রাম পরস্পরের পরিপূরক। প্রতিটি বিপ্লব তখনই স্থায়িত্ব লাভ করে, যখন তার শহীদদের স্মৃতি কেবল আবেগের পরিসরে সীমাবদ্ধ না থেকে রাষ্ট্রনৈতিক ও আদর্শিক ভিত্তিতে প্রতিস্থাপিত হয়। ডা. শফিকুর রহমানের এই সফর— সেই দায়বদ্ধতারই সুস্পষ্ট স্বীকৃতি। তিনি ইচ্ছে করলেই প্রথাগত রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতো একটি আবেগঘন বিবৃতি দিয়েই কর্তব্য সম্পন্ন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে বরং শহীদদের রক্তের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন, কৃতজ্ঞতার সশ্রদ্ধ প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। শহীদদের আত্মত্যাগকে তিনি কেবল রাজনৈতিক বা ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতেই দেখেননি; বরং একে রাষ্ট্রীয় নির্মাণের এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিপ্লবী সংগ্রামে আত্মত্যাগ তখনই ...

বিএনপির মিছিলে কালিমার পতাকা

Image
  বিএনপির সাম্প্রতিক এক মিছিলে দেখা গেল ফিলিস্তিনের পতাকা আর কালিমা খচিত সেই চিরচেনা নিশান। স্লোগান উঠল— “জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাই।” আমার স্মৃতিতে যতগুলো ইসলামি ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের ছবি আছে— ২০১০ সালের কুরআন বিরোধী নারীনীতি, ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি, ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলন , কিংবা সদ্য ঘটে যাওয়া জুলাই অভ্যুত্থান— প্রতিটিতেই কালিমার পতাকা ছিল এক অবিচ্ছেদ্য উপস্থিতি— কম বা বেশি।  জুলাইয়ে আমি নিজ হাতে, নিজ হৃদয়ের তাগিদে সেই পতাকা বেঁধে মিছিলে হেঁটেছি— কারও নির্দেশে নয়। শুধু এই জুলাইয়ে নয়, ২০১৩ সালের হেফাজত আন্দোলনেও আমি নিজে সাদার ওপর কালো কালিমা লেখা পতাকা হাতে নিয়ে রাজপথে ছিলাম, আহতও হয়েছি। তবে ৫ আগস্টের পর আচমকাই আমাদেরই কিছু ভাই— এসব জালিম আর জাহিলদের আমাদের ভাই সাব্যস্ত করতেও দ্বিধা হয়— এই পতাকাটিকে অপরাধের প্রতীক বানিয়ে তুললেন। আল্লাহই ভালো জানেন কার অন্তর কতটুকু সত্যাশ্রয়ী, কার উদ্দেশ্য কতটুকু নির্মল। তিনিই অন্তরদর্শী, তিনিই চূড়ান্ত বিচারক, তিনি অবশ্যই এর বিচার করবেন— ইন শা আল্লাহ। এই পতাকা— সাদার ওপর কালো অক্ষরে লেখা কালিমা অথবা কালোর ওপর সাদা— বাং...