Posts

সভ্যতা ও নারী

Image
  একটি সমাজকে ভেতর থেকে পরিবর্তন করতে হলে প্রয়োজন মেটিকুলাসলি প্ল্যানড সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষের চিন্তা-চেতনা, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধকে সুপরিকল্পিতভাবে নতুন ছাঁচে ঢেলে সাজাবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধক যা, তা হলো পরিবার, আর পরিবারের প্রাণকেন্দ্র হলো নারী। উপনিবেশবাদীরা এটি নিখুঁতভাবে বুঝেছিল। তাই তারা নারীকে তাদের সমাজ-রূপান্তর প্রজেক্টের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। এজন্য ‘ ‘নারী অধিকার’’ ,  ‘‘নারী স্বাধীনতা’’  কিংবা ‘ ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’’  ‘‘সফল কিংবা সাহসী নারী’’,  ইত্যাদির মতো কিছু ন্যারেটিভ, কিছু মুখরোচক ও ঝলমলে স্লোগানকে সামনে নিয়ে আসে। এই স্লোগানগুলোকে তারা সামনে নিয়ে এলেও বাস্তবে এগুলো হলো মরীচিকা; ভেতরে লুকানো আছে পরিবারকে দুর্বল করার সাবটল স্ট্র্যাটেজি। মূলত পরিবারই সমাজের মৌলিক ভিত্তি। এটি শুধু সামাজিক প্রতিষ্ঠানই নয়, বরং মানুষের চরিত্র ও মূল্যবোধ গঠনের প্রথম পাঠশালা। সভ্যতার প্রধান এবং প্রথম বুনিয়াদ। পরিবারে একজন মায়ের মাধ্যমে সন্তানের অন্তরে প্রবেশ করে বিশ্বাস, মূল্যবোধ, নী...

নারী কার্ডের নাটক ও সমাজে জেন্ডার ভিক্টিমহুডের রাজনীতি

Image
আমাদের সমাজে এক অদ্ভুত কৌশল বহুদিন ধরে চালু আছে— নাম তার নারী কার্ড। কোনো নারীর বিরুদ্ধে সামান্য সমালোচনা কিংবা প্রশ্ন তুললেই লাফিয়ে ওঠেই বলে দেওয়া হয়— নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছে, নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। মানে নারীর ক্ষেত্রে যেকোনো সমালোচনাই সরাসরি নারী হেনস্তা বা নারী বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। অথচ একই সমালোচনা কি পুরুষের ক্ষেত্রে এত দ্রুত হেনস্তার তকমা পায়? অদ্ভুত বিষয় হলো— “হেন করা”, “তেন করা”, কিংবা “হেনস্তা করা”— এসব যেন কেবল নারীর ওপরই প্রয়োগযোগ্য শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ সমাজের প্রতিটি স্তরে— যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রাজনীতি, অফিস থেকে আদালত— সর্বত্র সবচেয়ে বেশি হেনস্তা ও দুঃসহ পরিস্থিতির শিকার হয় কেবল পুরুষেরাই। দুনিয়া ঘুরে দেখা লাগবে না, বাংলাদেশের ইতিহাসও লাগবে না, আপনার আশেপাশেই এর অজস্র প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। খেয়াল করে দেখুন: ক্রসফায়ার— পুরুষ। ফাঁসি— পুরুষ। বন্দুকযুদ্ধের নামে খুন— পুরুষ। সন্ত্রাস দমনের নামে হত্যা— পুরুষ। রাজপথে লাশ হয়ে পড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক সংগ্রামী— পুরুষ। এত কিছুর পরেও কিন্তু কেউ বলে না, “পুরুষ হেনস্তা হচ্ছে”। অথচ কোনো নারীর দিকে সামান্য বিদ্রূপের আঙুল ওঠল...

আমরা কাদের সঙ্গী হব

Image
  কিছুদিন আগে একটা নিউজ চোখের সামনে পড়ল। পাকিস্তানের এক মডেল নিজের অ্যাপার্টমেন্টে মারা গেছে, কিন্তু বহুদিন যাবৎ তার লাশটা ওখানেই পড়ে ছিল। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তার মৃতদেহ সেখানে। এরপর আস্তে আস্তে বের হলো আরো চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। একমাস না, দীর্ঘ আট মাসেরও বেশি সময় ধরে লাশটা সেই অ্যাপার্টমেন্টেই পড়ে আছে। ভিডিও বের হলো। লাশের অবস্থা এত ভয়ানক যে তাকানো যাচ্ছে না। চারিদিকে ঘিরে আছে পোকামাকড়ের দল। গন্ধ ছুটছে। হাত-পায়ের মাংস খসে পড়ছে। পচেগলে চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে। বীভৎস দৃশ্য।   এই ঘটনাটা আমার মনস্তত্ত্বে খুব নাড়া দিল। ভাবছিলাম, জীবিত থাকতে এই নারী কতই না সুন্দরী ছিল। তার অজস্র ছবি নেট জগতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছিপছিপে গঠন, নিত্যনতুন পোশাক, সুন্দর সুন্দর পোজ দেয়া ছবি। রূপবতী এক নারী ছিল সে। মডেলিং জগতে নিশ্চয়ই যাকে-তাকে নেয়া হয় না। কিন্তু কতটা লোনলি ছিল তার জীবন চিন্তা করা যায়? দীর্ঘ আট মাস কেউ তার কোনো খোঁজও করে নি। হয়তো খোঁজ করলেও এতটা ক্লোজ কেউ ছিল না, যারা তার জন্য দুশ্চিন্তা করবে। কেউ ভাবে নি, মেয়েটা এতদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে চুপ হয়ে কেন আছে? কেউ একবারের জন্য তার সাথে দেখা করতে আসে...

পারস্পরিক বিরোধিতা : গণতন্ত্রের অনিবার্য বাস্তবতা

Image
  গণতন্ত্রের ব্যাপারটাই এমন— এখানে একটা শত্রু পক্ষ লাগবেই। সেই শত্রুপক্ষ যত ভালো কাজই করুক, তার ভালো কাজগুলো হাইলাইট করা হবে না, বরং সেই পক্ষের নেগেটিভ দিকগুলোই মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।  অপরের দোষগুলো তুলে ধরা আর সব সময় নিজের গুণাবলিকে মানুষের সামনে ফুটিয়ে তোলাটাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম প্রধান অবলম্বন।  গণতন্ত্রে যেহেতু সবাই মানুষকে কনভিন্স করেই ক্ষমতায় যেতে চায়, সেহেতু মানুষকে নিজের দলের দিকে কীভাবে নিয়ে আসা যায়, আর অন্য পক্ষ থেকে কীভাবে জনতাকে দূরে সরানো যায়; সেই চিন্তা, সেই কৌশল নিয়ে সব সময়ই ব্যস্ত থাকতে হয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে। সুতরাং, এর আলোকে স্পষ্টভাবেই বলা যায় যে, গণতন্ত্রের স্বার্থে একদল অন্য দলের বিরোধিতা করবেই— বিশেষত যাকে সবচেয়ে বড়ো এবং বেশি প্রতিদন্ধী মনে হবে, তার ব্যাপারে এমনটা হবেই। ইউরোপ-আমেরিকা যেহেতু বিশ্বের নিয়ন্ত্রক, সেহেতু তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য নিজেদের মধ্যে খুনোখুনিটা খুবই কম। এই খুনোখুনির ব্যাপারটা তাদের মধ্যে যদি বেশি ঘটে, তাহলে তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন, ইত্যাদি টুলসগুলো দিয়ে বিশ্বক...

বিএনপি: মরীচিকার রাজনীতি

Image
  ১. বিএনপির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট হলো— এই দলের কোনো সুসংহত আদর্শ বা মহান রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। সাধারণ মানুষ আদর্শিক টান থেকে বিএনপিকে বেছে নেয় না; বরং তারা বিএনপিকে দেখে একটি বিকল্প আশ্রয়স্থল হিসেবে— আওয়ামী লীগের জুলুম থেকে বাঁচার সাময়িক ছায়া। ২. বিএনপির আরেকটা বড়ো সংকট কিংবা ব্যর্থতা হলো রাজনৈতিক ভাষ্য নির্মাণে ব্যর্থতা। বিএনপি কখনোই নিজস্ব বয়ান বা দর্শন গঠনে সক্ষম হয়নি।  এদেশে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে টিকে থাকার জন্য যেমন আদর্শ দরকার, তেমনি দরকার সময়োপযোগী রাজনৈতিক ভাষ্য।  এই দুই ক্ষেত্রেই বিএনপি দুর্বল, যার ফলে তারা ক্রমাগত জনগণের আস্থার বাইরে চলে যাচ্ছে। ৩.  বিএনপি আদতে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই গড়ে ওঠেছিল। আজও তারা সেই ভূমিকাতেই আটকে আছে— শুধু বিরোধিতা, প্রতিস্থাপন বা প্রতিশোধের রাজনীতি। এর বাইরের কোনো দৃষ্টিভঙ্গি তারা জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি।  ৪. হতাশ ও বার্নআউট ইসলামপন্থী এবং বামপন্থীদের সাময়িক আশ্রয়স্থল:  প্রথমত, এক শ্রেণির ইসলামপন্থী ও বামপন্থী রয়েছেন, যারা ইসলামি আদর্শভিত্তিক (বামদের ক্ষেত্রে তাদের আদর্শভিত্তিক) রাজনী...

পলাশীর যুদ্ধ: মুসলিম সালতানাতের পতন সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ও নিয়ন্ত্রণহীন ইতিহাস

Image
বাংলার  আদিপর্ব: সভ্যতার সূচনা ও ঈমানের উত্তরাধিকার ১. প্রাচীন বাংলার জাতিগোষ্ঠীগত ক্রমধারা • সর্বপ্রথম বাস করত অস্ট্রিক, মঙ্গোলয়েড ও কিরাত জাতিগোষ্ঠী। • তারা নগর সভ্যতা গড়তে পারেনি, তবে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে। • অস্ট্রিকরা খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০-৫০০০ সালের মধ্যে উপমহাদেশে আগমন করে। ২. দ্রাবিড়দের আগমন ও সভ্যতার সূচনা • খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০-৩০০০ সালে দ্রাবিড়রা উপমহাদেশে আসে। - গড়ে তোলে মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার নগরসভ্যতা। - নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, তারাই ভারতবর্ষের নগর সভ্যতার প্রবর্তক। - বাংলায় উয়ারি-বটেশ্বরকেও এই সভ্যতার নিদর্শন বলে মনে  করেন অনেকে। ৩. দ্রাবিড়দের ধর্মীয় পরিচয় ও বংশসূত্র -  দ্রাবিড়রা ছিল নূহ আ. ছেলে শামের বংশধর। মহাপ্লাবনের পর নূহ আ. তিন ছেলে ছিল। একজনের নাম হাম, অন্যজনের  নাম শাম এবং আরেকজনের নাম ইয়াফিস। - সে হিসেবে দ্রাবিড়দেরকে সেমেটিক বলেও  মনে করা  হয়। - তবে ঐতিহাসিক গোলাম হোসেন সলিমের মতে, হামের ছেলে 'হিন্দ'-এর মাধ্যমেই এই অঞ্চলে বসতি শুরু হয়। - ‘বঙ্গ’ ছিলেন হিন্দের একজন পুত্র, তার সন্তানেরাই  বাংলা ...

প্রজ্ঞা ও পরিণত নেতৃত্বের জয়

Image
 আলহামদুলিল্লাহ! কোনো উত্তেজনা, অস্থিরতা, বাড়াবাড়ি কিংবা অহেতুক চাপসৃষ্টির পথ বেছে না নিয়েই, আবারও বিজয়ের মুকুটে অভিষিক্ত হলেন আমীরে জামায়াত, ডা. শফিকুর রহমান। তবে এ বিজয় ভিন্নধর্মী একটি বিজয়। এটি একটি চিন্তার বিজয়, একটি কৌশলগত পরিপক্বতার বিজয়, একটি রাষ্ট্রদর্শনভিত্তিক প্রস্তাবনার বিজয়। তথাকথিত ‘বিপ্লবী সরকার’ এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছিল, আর অপরদিকে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছিল— তখন দৃশ্যপটে একটি অব্যক্ত অচলাবস্থা ঘনিয়ে আসছিল। দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী পক্ষ দুটোর মধ্যে কোনো পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে অনিচ্ছুক থাকায়, স্পেশালি বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি থেকে পিছু হটতে অনিচ্ছুক থাকায় সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছিল। এই অচল পরিস্থিতির ভেতরে আগে থেকেই নীরব প্রত্যয়ে একটি দুরদৃষ্টির সাথে সুন্দর একটি মতামত প্রদান করেছিলেন একজন চিন্তাশীল নেতা— ডা. শফিকুর রহমান। তিনি আবেগের নয়, প্রজ্ঞার ভাষায় বলেছিলেন, “নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারি হতে পারে। এপ্রিল মাস পার হওয়া অনুচিত।” এই বক্তব্য তিনি প্রথম উত্থাপন করেন ঢাকায় স...